হাতের কাছে পরজীবীবাহিত রোগের জাতীয় গবেষণা কেন্দ্র। তবু ডেঙ্গি সংক্রমণের সময়ে সেই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস (নাইসেড)-এর কোনও সাহায্য নেয়নি রাজ্য সরকার।
এ বার আন্ত্রিক সংক্রমণের ক্ষেত্রেও সেই অভিযোগ উঠল। নাইসেড-কে তো ডাকাই হচ্ছে না। তাদেরও ঠিকমতো কাজে লাগানো হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল রাজ্যে সংক্রামক রোগের বিশেষজ্ঞ হাসপাতাল বেলেঘাটার আইডি-ও।
পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, কোনও সংক্রামক রোগের চরিত্র আসলে কী, তা যত দ্রুত জানা যায়, তত তাড়াতাড়ি রোগ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। ডেঙ্গি জটিল আকার ধারণ করার পরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য গোপন করার অভিযোগ এনেছিল। ডেঙ্গি পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থাটা চেপে রাখতেই রাজ্য সরকার রোগ নির্ণয়ে নাইসেডের মতো প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়নি বলে অভিযোগ। এ বার আন্ত্রিকের ক্ষেত্রে একই ধরনের অভিযোগ উঠছে।
শুধু দেরি করে আক্রান্তদের মলের নমুনা পাঠানো নয়, যে-ভাবে তা পাঠানো হয়েছে, তাতেও বিস্মিত নাইসেড। সংস্থার অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত বলেন, ‘‘আন্ত্রিক তো ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে। অতএব মলের নমুনায় কিছু মিলছে না, এমনটা হতেই পারে না। মল সংগ্রহ এবং তা সংরক্ষণের পদ্ধতিতেই গলদ রয়েছে।’’
পরজীবী গবেষকেরা বলছেন, ‘‘বিশেষ ধরনের পাত্রে মলের নমুনা তিন দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। এই ব্যবস্থায় মলের নমুনায় কোনও পরজীবী বা রাসায়নিক পদার্থ নষ্ট হয় না।’’ নাইসেডের অধিকর্ত্রীর আক্ষেপ, ‘‘ওই বিশেষ পাত্র আমাদের কাছে মজুত আছে। প্রয়োজনে তা চেয়ে নেওয়া যেত। আমরা তৈরি ছিলাম। বললেই কাজ শুরু করতে পারতাম।’’
নাইসেড সূত্রের খবর, নামমাত্র নমুনা তাঁদের কাছে এসেছে। তার মধ্যে কিছু পাঠিয়েছে আইডি হাসপাতাল আর মাত্র ১০টি নমুনা পাঠিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
নাইসেড উপেক্ষিত। একই ভাবে গোটা প্রক্রিয়া থেকে রাজ্যের আন্ত্রিক রোগের চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ প্রতিষ্ঠান বেলেঘাটার আইডি হাসপাতালকেও ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্রের অনুযোগ, ‘‘গোসাবা-বাসন্তীতে আন্ত্রিক হলে আমাদের এখানে শত শত নমুনা আসে। কিন্তু খাস মহানগরে এত লোক আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও পুরসভা সাকুল্যে ৫১টি মলের নমুনা পাঠিয়েছে।’’
মলের নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতিও যে ঠিক নেই, সেটা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন আইডি-কর্তা। তিনি বলেন, ‘‘এখানে মলের যে-নমুনা পাঠানো হচ্ছে, তা সংগ্রহের আগে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের নমুনা থেকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানান, শনি ও রবিবার নাইসেড ছুটি থাকায় সমস্যা হয়েছে। ‘‘পুরসভার তরফে ঠিক কী কী করা হয়েছে, ওদের কাছে সেই বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি,’’ বলেন অজয়বাবু।
কলকাতার মেয়র-পারিষদ অতীন ঘোষের ব্যাখ্যা, পুরসভা কোনও মলের নমুনা সংগ্রহ করেনি। সব নমুনাই সংগ্রহ করেছে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল। ‘‘স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালকেই জিজ্ঞাসা করে দেখুক,’’ বলছেন অতীনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy