Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
কলেজে মনোনয়ন জমা এসএফআই-এর

সংঘর্ষ ঠেকিয়ে সফল পুলিশ

৫০০ সিভিক ভলান্টিয়ার্স। ১০০ পুলিশ কর্মী। সঙ্গে ইএফআর জওয়ান। কলেজ ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সামলাতে সোমবার এই দাওয়াই-ই নিল জেলার পুলিশ-প্রশাসন। জেলায় যে একটি মাত্র কলেজে কোনও বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছিল, সেই মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজ বড় কোনও গোলমাল ছাড়াই নির্বিঘ্নে মিটল মনোনয়নপর্ব। বাধা পেয়ে শেষমেশ পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই কলেজের ভিতরে ঢুকে মনোনয়নপত্র জমা দিল এসএফআই।

এ ভাবেই বারবার বাধার মুখে পড়লেন এসএফআই-এর ছাত্র প্রতিনিধিরা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

এ ভাবেই বারবার বাধার মুখে পড়লেন এসএফআই-এর ছাত্র প্রতিনিধিরা। ছবি: অনির্বাণ সেন।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
মল্লারপুর শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৪২
Share: Save:

৫০০ সিভিক ভলান্টিয়ার্স। ১০০ পুলিশ কর্মী। সঙ্গে ইএফআর জওয়ান।

কলেজ ভোট প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সামলাতে সোমবার এই দাওয়াই-ই নিল জেলার পুলিশ-প্রশাসন। জেলায় যে একটি মাত্র কলেজে কোনও বিরোধী ছাত্র সংগঠন মনোনয়নপত্র তুলতে পেরেছিল, সেই মল্লারপুর টুরকু হাঁসদা-লেপসা হেমব্রম কলেজ বড় কোনও গোলমাল ছাড়াই নির্বিঘ্নে মিটল মনোনয়নপর্ব। বাধা পেয়ে শেষমেশ পুলিশি নিরাপত্তার ঘেরাটোপেই কলেজের ভিতরে ঢুকে মনোনয়নপত্র জমা দিল এসএফআই।

গত বছর ওই কলেজেই মনোনয়ন জমাকে ঘিরে ধুন্ধুমার বেঁধেছিল। সে বার এসএফআই মনোনয়নপত্র তুলতে পারলেও তৃণমূলের বহিরাগত দুষ্কৃতীদের বাধায় তা জমা করতে পারেনি। এ বারও মনোনয়নপত্র জমার দিন গণ্ডগোলের আশঙ্কা থাকায় প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল পুলিশ-প্রশাসন। এ দিন সকাল ৯টা থেকেই কলেজের মূল গেটের সামনে পুলিশ মোতায়েন হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে কলেজের ২০০ মিটারের মধ্যে প্রায় পাঁচশো সিভিক ভলান্টিয়ার্স এবং একশো জন পুলিশকর্মী সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। কলেজের অধ্যক্ষ অমিত চক্রবর্তী এবং ময়ূরেশ্বর ২ বিডিও বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ভেতরে ঢুকে পড়েন। পরিচয়পত্র দেখেই কলেজের ভেতরে পড়ুয়ারা ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল। ইতিমধ্যে ২০০ মিটারের মধ্যেই শ’খানেক টিএমসিপি কর্মী নিয়ে মিছিল করে এসে কলেজ গেটের সামনে জড়ো হন সংগঠনের নেতা অভিজিৎ মণ্ডল। অধিকাংশেরই মুখ রুমাল ও মাফলারে ঢাকা ছিল। তাঁদেরই একাংশ কলেজ গেটের বাইরে এবং আর একটা অংশ কলেজের ভিতরে অফিসে ঢোকার গেটের মুখ জ্যাম করে দাঁড়িয়ে পড়ে। তা দেখে পুলিশ ভিড় সরিয়ে ওই ছাত্রদের কলেজের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়। এর পরেই কলেজের এসএফআই নেতা মহম্মদ গোলাম নবির নেতৃত্বে সাত সমর্থক কলেজ গেটের সামনে জড়ো হতে দেখা যায়। মূল গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলেও কলেজ চত্বরে টিএমসিপি তাঁদের ঘিরে ধরে। ভিতরের গেট দিয়ে বারবার অফিসে যাওয়ার চেষ্টা করলেও টিএমসিপি তাদের ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ। ব্যর্থ হয়ে এক ঘণ্টা পরেই কলেজের বাইরে গিয়ে ময়ূরেশ্বর থানার আইসি সৌম্য দত্তের কাছে এসএফআই সমর্থকেরা ভিতরের গেটের ভিড় সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। পুলিশ যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের লিখিত আবেদন ছাড়া ভেতরে ঢোকা যাবে না বলেই জানায়।

প্রতিবাদে কলেজের ধার ঘেঁষে যাওয়া ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করে এসএফআই সমর্থকেরা। অবরুদ্ধ হয়ে যায় জাতীয় সড়ক। ওই সময় পুলিশ তাঁদের বুঝিয়ে ফের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য কলেজে যেতে বলে। ওই সময় পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অধ্যক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হন। অমিতবাবুর লিখিত আবদনে সাড়া দিয়ে কলেজে পুলিশ ঢোকে। পুলিশের নিরাপত্তা বলয়ে ঢুকে পড়ে এসএফআই সমর্থকেরাও। তৃণমূল সমর্থকেরা নানা ভাবে বাধা দিতে থাকে। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতেও জড়িয়ে পড়ে। এক সময় দেখা যায় রুমাল ও মাফলার দিয়ে মুখ ঢাকা টিএমসিপি সমর্থক চার ছাত্রী এসএফআই নেতা গোলাম নবিকে ঠেলতে ঠেলতে কলেজের বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কলেজে পুলিশ ঢোকার প্রতিবাদে টিএমসিপি বিক্ষোভও শুরু করে। অধ্যক্ষকে অশ্লীল ভাবে গালিও দিতে থাকে। পুলিশ অবশ্য কলেজের ভিতরের গেট জ্যাম করে থাকা টিএমসিপি সমর্থকদের সরিয়ে দিয়ে সক্ষম হয়। এসএফআই সমর্থকেরা সেখান থেকে ঢুকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আসেন। পরে ইএফআর জওয়ানেরা তাঁদের কলেজ থেকে বের করে নিয়ে যায়।

দুপুরে আবার কলেজ থেকে সামান্য দূরে মোটরবাইক থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় সিপিএমের প্রাক্তন ময়ূরেশ্বর জোনাল সম্পাদক অরূপ বাগকে। ওই ঘটনায় অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। জখম অরূপবাবু বর্তমানে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তৃণমূল যদিও তা মানেনি। অন্য দিকে, কলেজে পুলিশ ঢোকানোর প্রতিবাদ করেছেন টিএমসিপি নেতা অভিজিৎ মণ্ডল। উল্টে তাঁর দাবি, “আমরা কাউকে আটকাইনি। পুলিশের মদতে এসএফআই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারল। এসএফআই-ই আমাদের ৫টি মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে দিয়েছে।” গোলাম নবি অবশ্য সে দাবি মানেননি।

সন্ধ্যায় অধ্যক্ষ বলেন, “কিছু ছাত্র মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরেও কলেজের ভিতরে যেখানে মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হচ্ছিল, সেই গেট আটকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মাইকে বারবার সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হলেও তাঁরা সেখান থেকে সরে যাননি। যার জন্য কলেজের আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছিল। তাই পুলিশের সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE