Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শো-কজ, সুর নরম মনিরুলের

শো-কজের চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কিছুটা সুর নরম করলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। রবিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাঁইথিয়া থানা এলাকায় তিনটি সভা করেন এই তৃণমূল নেতা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩৮
Share: Save:

শো-কজের চিঠি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কিছুটা সুর নরম করলেন লাভপুরের তৃণমূল বিধায়ক মনিরুল ইসলাম। রবিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাঁইথিয়া থানা এলাকায় তিনটি সভা করেন এই তৃণমূল নেতা। বনগ্রাম পঞ্চায়েতের বড়া গ্রামে তৃতীয় সভায় মনিরুল কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেস যাতে একটাও ভোট না পায়, তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বুঝিয়ে বলতে হবে।”

অথচ শনিবারই বিকেলে সাঁইথিয়ার হরিসড়া পঞ্চায়েতের রুদ্রনগর সন্ন্যাসীতলায় মনিরুল বলেছিলেন, “একটাও ভোট সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপিকে দিতে দেবেন না। বিজেপির একটি লোককেও ভোট দিতে দেবেন না, এই প্রতিশ্রুতি দিন। এই দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।” এই মন্তব্যের পরেই রবিবার নির্বাচন কমিশন জবাব চেয়ে বিধায়ককে শো-কজ করে। ইতিমধ্যে সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। সাঁইথিয়া ব্লকের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার আনন্দ সরকার বলেন, “রবিবার সকালে তাঁকে শো-কজের চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয়েছে।” ফোনে যোগাযোগ করা হলে মনিরুল বলেন, “আইন আইনের পথে চলবে। আমি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।” এ দিকে, সিউড়ির কেউবোনা গ্রামের নিহত দলীয় কর্মী হীরালালের বাড়িতে গিয়ে সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী বলেন, “মনিরুল বলেছেন কাউকে ভোট দিতে দেবেন না। আমরা কমিশনে যাচ্ছি। বক্তব্যের সিডিও আছে।” তাঁর প্রশ্ন, “যাঁরা এই ধরনের বক্তব্য রাখছেন, চক্রান্ত করছেন তাঁরা কেন বাইরে থাকবেন? নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে সভায় বক্তব্য রাখা বন্ধ আজম খানের। এখানে যাঁরা এই ধরনের মন্তব্য করছেন, তাঁরা কেন বাইরে থাকবেন?”

এ দিন সিউড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “১৬ ও ১৭ এপ্রিল বোলপুরে বৈঠক করে তৃণমূল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গোটা জেলায় সকাল ৯টা-১টা পর্যন্ত কোনও বিরোধী দলের এজেন্টকে বুথে ঢুকতে দেবে না। কোনও ভাবে ঢুকলে তাঁদেরকে বের করে দেওয়া হবে। যার প্রতিফলন মনিরুল ইসলামের কথায় পাওয়া গিয়েছে।” আজ, সোমবার নির্বাচন আধিকারিক, জেলাশাষক ও জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন দিলীপবাবু। বিজেপির জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল এবং আইএনটিইউসি সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, “এ ব্যপারে জেলাশাষকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। যদি প্রশাসন এখনই কোনও ব্যবস্থা না নেয় এবং কোনও গণ্ডগোল হলে সমস্ত দায়ভার প্রশাসনের বলে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে।”

লাভপুরের এই বিধায়ক শুধু শনিবারই বিতর্কিত মন্তব্য করেননি। গত পঞ্চায়েত ভোটের দু’দিন আগে সাঁইথিয়ায় একটি জনসভায় সেখানকার কংগ্রেস নেতা বাপি দত্তের “মুন্ডু আয়দা করার” হুমকি দেন তিনি। তিনি যে লাভপুরের তিন ভাইকে “পায়ের তলায় পিষে” হত্যা করেছিলেন, সে কথাও প্রকাশ্য সভায় বলেন। এর পর সেই বক্তৃতার সিডি চেয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু শেষ অবধি কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ২০১০ সালে লাভপুরের নবগ্রামে সিপিএম কর্মী তিন ভাইকে খুনের মামলায় অভিযুক্ত মনিরুলের বিরুদ্ধে এখনও অবধি কোনও চার্জশিট দেয়নি জেলা পুলিশ। বিরোধীদের দাবি, সে সময় এ নিয়ে কিছুদিন খুব হইচই হয়েছিল। তারপরে সব চুপ।

দিলীপবাবুর কথায়, “আসলে প্রশাসন বলে কিছু নাই।” এ বারও যদি প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেয়, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা দিলীপবাবুর। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “এটা উনি ওঁনার মতো বলেছেন। আমার কিছু বলার নেই।” মন্তব্য করতে চাননি শতাব্দী রায়।

অন্য বিষয়গুলি:

manirul islam tmc election commission show-cause
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE