Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

রুজিহীনদের পাশে তিন শ্রমিক সংগঠনই

ভাইস-প্রেসিডেন্ট হঠাৎ হাওয়া! দেখা মিলছে না ম্যানেজার (পার্সোনেল)-সহ কারখানার অন্য কোনও কর্তা বা অফিসারেরও। মাস দুয়েক হল বেতনও হচ্ছিল না। বেশ কিছুদিন ধরেই এই সব দেখে মনটা কু-ডাকছিল কারখানার কর্মী ও শ্রমিকদের। কিন্তু, তাঁদের আশঙ্কা যে এত তাড়াতাড়ি সত্যি হবে এবং সেটাও এত আচমকা, তা ভাবতে পারেননি ‘শ্রী বাসবী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-এর প্রায় ৮০০ কর্মী-শ্রমিক। বাস্তবে অবশ্য সেটাই হয়েছে।

এক বাঁশে সহাবস্থান তিন দলের। অবরোধ বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায়। হেঁটে গন্তব্যের পথে যাত্রীরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

এক বাঁশে সহাবস্থান তিন দলের। অবরোধ বিষ্ণুপুর-সোনামুখী রাস্তায়। হেঁটে গন্তব্যের পথে যাত্রীরা। ছবি: শুভ্র মিত্র

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০১:৪৯
Share: Save:

ভাইস-প্রেসিডেন্ট হঠাৎ হাওয়া! দেখা মিলছে না ম্যানেজার (পার্সোনেল)-সহ কারখানার অন্য কোনও কর্তা বা অফিসারেরও। মাস দুয়েক হল বেতনও হচ্ছিল না।

বেশ কিছুদিন ধরেই এই সব দেখে মনটা কু-ডাকছিল কারখানার কর্মী ও শ্রমিকদের। কিন্তু, তাঁদের আশঙ্কা যে এত তাড়াতাড়ি সত্যি হবে এবং সেটাও এত আচমকা, তা ভাবতে পারেননি ‘শ্রী বাসবী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’-এর প্রায় ৮০০ কর্মী-শ্রমিক। বাস্তবে অবশ্য সেটাই হয়েছে। সোমবার রাতের শিফ্টে আসা কর্মীদের বের করে দিয়ে কারখানার গেটে তালা ঝুলিয়েছে কর্তৃপক্ষ নিযুক্ত নিরাপত্তারক্ষীরা। সঙ্গে ঝুলেছে লক-আউট নোটিস।

তবে, এই সবকে ছাপিয়ে এ বার সংসার চলবে কী করে, এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রুজিহীন শ্রমিকদের মনে। তাঁদেরই এক জন সঞ্জয় নন্দী বলছিলেন, “বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে আগেও কিছুদিন কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তখন আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করেছিলাম। এখন কী এমন হল যে কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হল? এটা তো আমাদের সঙ্গে বেইমানি!” কারখানার বন্ধ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ড থেকে এই কারখানায় কাজে আসা দুই কর্মী উমা রাও ও ঈশ্বর চন্দ্র খা।ঁ অসহায় সুরে তাঁরা বললেন, “বিষ্ণুপুরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকি। ছেলেমেয়েদের এখানকার স্কুলেও ভর্তি করেছি। এ বার সংসার চালাবো কী করে ভেবে পাচ্ছি না। দেশের বাড়িতে যে ফিরব, হাতে সেই টাকাও নেই।”

কাজ হারিয়ে হতাশা ক্রমেই গ্রাস করছে শ্রমিকদের। দ্বারিকা গ্রামের প্রশান্ত মজুমদার, শেখ সুকুর আলিদের ক্ষোভ, “কর্তৃপক্ষের মনোভাব বুঝতে পেরে মাঝে আমরা একবার আন্দোলন করেছিলাম। তখন মালপত্র চুপিসাড়ে বের করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল কর্তৃপক্ষ। সেটাও আটকেছিলাম। এ বার আর পারলাম না। এর পরে কী হবে, কিছুই জানি না। জায়গা-জমি বলতে কিছুই নেই। কারখানা না খুললে পথে একেবারে বসার জোগাড় হবে আমাদের।”

রাজনীতির ভেদাভেদ সাময়িক ভুলে কর্মহীন শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি—তিন দলের শ্রমিক সংগঠনই। তাদের নেতৃত্বে এ দিন কারখানার সামনে অবরোধ হয়েছে। দ্বারিকা গ্রামের বাসিন্দা, ওই কারখানার কর্মী অজয় রায় বলেন, “কারখানাটিতে এলাকার বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে এবং কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ না দেখিয়ে এ ভাবে কারখানা হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়াটা কেউ-ই মেনে নিতে পারছেন না। সে জন্যই সকলে অবরোধে নেমেছেন।” বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক অবশ্য বলেন, “রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে যে আন্দোলন চলছে, সেটা ঠিক নয়।” শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের বুঝিয়ে বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ অবরোধ তুলতে সক্ষম হয় প্রশাসন।

শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির জেলা সভাপতি তথা শালতোড়ার তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বাউরি বলেন, “কোনও কারখানায় সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু, কর্মীদের বকেয়া টাকা ফেলে রেখে রাতের অন্ধকারে চোরের মতো কর্তৃপক্ষের এই পালিয়ে যাওয়া বা কর্মীদের মনিরাপত্তারক্ষী দিয়ে বের করে দেওয়ার ঘটনা আমরা মেনে নিতে পারছি না। ওই কারখানার কর্তা ফোন বন্ধ রেখেছেন। ফলে কথা বলাও যাচ্ছে না। আমরা কর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে বলেছি।” সিটুর স্থানীয় নেতা তথা বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক স্বপন ঘোষ এবং বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চার বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি অঞ্জন নাগ চৌধুরীও কারখানা বন্ধের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, “আলোচনার ধারে-কাছে না গিয়ে মালিকের এটা একতরফা সিদ্ধান্ত। আমরা চাই দ্রুত কারখানা খোলার ব্যবস্থা করুক কতৃপক্ষ। না হলে লাগাতার আন্দোলন হবে।”

কিন্তু, রাজনীতি?

তিন শ্রমিক নেতারই বক্তব্য, “এখানে রাজনীতির কোনও ব্যাপার নেই। এতগুলো মানুষের রুটিরুজির প্রশ্ন এই কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাই আমরা আন্দোলনে নেমেছি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy