নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পেয়ে আগেই হোম থেকে আবাসিক মেয়েদের সরিয়েছিল জেলা প্রশাসন। এ বার আবাসিকদের উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেফতার হলেন বাঁকুড়ার সেই বেসরকারি হোমটির সভাপতি-সহ তিন জন।
বাঁকুড়া শহর লাগোয়া হরিয়ালগাড়া এলাকার ওই হোমেরই এক আবাসিক তরুণী সম্প্রতি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাঁকুড়া মহিলা থানায় হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি, গত শনিবার ওই হোমের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে ই-মেল মারফত অভিযোগ জানান জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি-র (সিডব্লিউসি) চেয়ারম্যান শেখ মুরসালিন। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রবিবার হোমটির সভাপতি শচীদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুই কর্মী মধুসূদন পাল ও দুঃখভঞ্জন দে-কে রবিবার গ্রেফতার করে পুলিশ। বাঁকুড়া আদালত ধৃতদের আগামী সোমবার পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “হোমের সভাপতিকে কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বাকি দু’জনকে হোম থেকেই ধরা হয়। অভিযোগকারিণী মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছে বাঁকুড়া মেডিক্যালে। টিআই প্যারেডের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।”
ওই হোমের আবাসিক মেয়েরা নিরাপদ নয়, এ কথা জানিয়ে গত মঙ্গলবারই আবাসিকদের বাঁকুড়ার অন্য একটি হোমে সরিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। শেখ মুরসালিন বলেন, “ওই হোমের মেয়েদের কলকাতার লজে নিয়ে গিয়ে দেহব্যবসা করিয়ে টাকা নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে হরিয়ালগাড়ার হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আবাসিক মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে আমাদের কাছে এ ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। এ ছাড়াও আবাসিকদের ঠিকঠাক খাবার না দেওয়া-সহ বিভিন্ন নির্যাতনের প্রমাণও আমরা পেয়েছি।” তাঁর আরও অভিযোগ, হোমে ১০ থেকে ১৮ বছর বসয়ী ২৭ জন মেয়েকে রাখা হয়েছিল, যাদের মধ্যে তিন জন পলাতক। এক জনের কোনও হদিশই দিতে পারছেন না হোম কর্তৃপক্ষ।
বস্তুত, হরিয়ালগাড়ার হোমে যে কিছু মেয়েকে রাখা হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনও তথ্যই ছিল না সিডব্লিউসি-র কাছে। সম্প্রতি সমাজকল্যাণ দফতর থেকে একটি চিঠি পাঠিয়ে হরিয়ালগড়ার হোমটির এক আবাসিককে পটনার একটি হোমে পাঠানোর জন্য আইনি পদক্ষেপ করতে বলা হয় সিডব্লিউসি-কে। কেন এই চিঠি, সে ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করতেই বেসরকারি হোমের নানা বেনিয়মের তথ্য উঠে আসে বলে জেলা সিডব্লিউসি সূত্রের দাবি। এমনকী, খোঁজখবর নিতে সরাসরি হোমটিতে চলে যান জেলাশাসক বিজয় ভারতী এবং শেখ মুরসালিন।
আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলার পর তাঁদের কাছে হোম সংক্রান্ত বেশ কিছু রহস্যজনক তথ্য উঠে আসে। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “জঙ্গল ঘেঁষা একটি নির্মীয়মাণ হোমে মেয়েদের কেন রাখা হল, তা হেোম কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চেয়ে কোনও সদুত্তর পাইনি।” শেখ মুরসালিন বলেন, “প্রথম দিনই আবাসিকরা আমাদের কাছে যৌন নির্যাতন-সহ বেশ কিছু অভিযোগ করে হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও, কোনও হোমে আবাসিকদের রাখতে গেলে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি বা শিশু সুরক্ষা ন্যায়ালয়ের অনুমতি নিতেই হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে তা নেওয়া হয়নি।”
যাবতীয় অভিযোগ আগেই অস্বীকার করেছিলেন গ্রেফতার হওয়া ওই হোমের সভাপতি শচীদুলালবাবু। একজন সমাজসেবী হিসেবে কাজ করতেই তিনি এই হোম খুলেছেন জানিয়ে দাবি করেছিলেন, “চক্রান্ত করে আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে। আবাসিকদের রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি আমরা সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে নিয়েছি।” যদিও সোমবার পর্যন্ত বাঁকুড়া চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে এই দাবির পক্ষে সঠিক তথ্যপ্রমাণ হোমের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি বলেই জানিয়েছেন মুরসালিন। তিনি বলেন, “কলকাতা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার দফতরের কাছে হোম কর্তৃপক্ষ অনুমতি নিয়েছে বলে কোনও প্রমাণ আমাদের দেখাতে পারেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy