Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মা-মেয়ের আসনে বাজিমাত সৌমিত্রর

মা-মেয়ের আড়াই দশকের জয়ের দৌড় থেমে গেল বিষ্ণুপুরের লালমাটিতে। তাঁদের রুখে দিলেন ত্রিশ ছোঁয়া এক যুবক, তৃণমূলের সৌমিত্র খাঁ। তরুণ তো বটেই, তুর্কিও। ১,৪৯,৬৮৫ ভোটের ব্যবধানে সৌমিত্র সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ সুস্মিতা বাউড়িকে হারিয়ে দিলেন।

জয়ী ও পরাজিত। সৌমিত্র খাঁ এবং সুস্মিতা বাউরি। ছবি: শুভ্র মিত্র।

জয়ী ও পরাজিত। সৌমিত্র খাঁ এবং সুস্মিতা বাউরি। ছবি: শুভ্র মিত্র।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০১:৪৬
Share: Save:

মা-মেয়ের আড়াই দশকের জয়ের দৌড় থেমে গেল বিষ্ণুপুরের লালমাটিতে। তাঁদের রুখে দিলেন ত্রিশ ছোঁয়া এক যুবক, তৃণমূলের সৌমিত্র খাঁ। তরুণ তো বটেই, তুর্কিও।

১,৪৯,৬৮৫ ভোটের ব্যবধানে সৌমিত্র সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ সুস্মিতা বাউড়িকে হারিয়ে দিলেন। সুস্মিতা এই কেন্দ্রে টানা দু’বারের সাংসদ। তার আগে তিন বার ওই কেন্দ্রের সাংসদ ছিলেন সুস্মিতার মা সন্ধ্যা বাউড়ি। এত দিন সিপিএমের কর্মীদের কাছে ওই আসনটি মা-মেয়ের আসন হিসেবেই পরিচিত ছিল। দলও তাঁদের বাইরে আর কাউকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নেয়নি। কিন্তু তাঁদের রথের চাকা এ বার আটকে গেল। এ বার সুস্মিতা পেয়েছেন ৪,২৯,১৮৫টি ভোট। আর কোতুলপুর কেন্দ্রের প্রাক্তন বিধায়ক সৌমিত্রের প্রাপ্ত ভোট ৫,৭৮,৮৭০। সেই সঙ্গেই বিধানসভা, পঞ্চায়েত ও লোকসভা তিনটি পর্বের ভোটেই বামেদের পর্যুদস্ত করে বিষ্ণুপুরে বৃত্ত সম্পূর্ণ করল তৃণমূল।

কংগ্রেসের টিকিটে কোতুলপুর থেকে বিধায়ক হয়ে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন সৌমিত্র। এ জন্য কংগ্রেসের কাছ থেকে তাঁর ‘বিশ্বাসঘাতক’ অপবাদ জোটে। আর তৃণমূলের কাছ থেকে পুরস্কার হিসেবে পান বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের টিকিট। তবে তাঁর এই রাজনৈতিক উত্থান দলের অনেকেই ভাল চোখে নেয়নি। এ নিয়ে দলের মধ্যে চোরাস্রোত ছিলই। কিন্তু সেই সব দ্বন্দ্বের ক্ষতে মলম লাগিয়ে শেষ হাসি হাসলেন সৌমিত্রই।

শুক্রবার ভোট গণনা শুরু হওয়ার আগেই গণনাকেন্দ্র কে জি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পাউন্ডে ভিড় জমিয়েছিলেন বহু বাম নেতা-কর্মী। এই কেন্দ্রের বিভিন্ন বুথে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জোর করে ভোট করানো, ভোটারদের ভোটদানে বাধা দেওয়া থেকে বিধায়কের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট করানোর অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু জয়ের আশা ছাড়েননি সুস্মিতা। এ দিন সকালেও ছিলেন খোস মেজাজেই। গণনা শুরু হওয়ার পর সময় যত গড়িয়েছে ততই নিরাশার মেঘ ঘনিয়ে এসেছে বাম শিবিরে। আর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন তৃণমূল শিবিরের লোকজন। ততই খালি হয়েছে বাম শিবির।

গণনা শুরু হওয়ার পর প্রথম থেকেই পিছিয়ে গিয়ে চাপে পড়ে যায় সিপিএম। এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভায় গত বার লোকসভা ভোটে সবক’টিতেই এগিয়ে ছিলেন সুস্মিতা। প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১১-তে ছবিটা বদলে যায়। শুধু খণ্ডঘোষ বিধানসভাই বামেদের দখলে ছিল। বাকি ছ’টি ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। পঞ্চায়েত ভোটেও এই কেন্দ্রের অধীনে থাকা অধিকাংশ ত্রিস্তরয়ী পঞ্চায়েতের অধিকাংশ আসন তৃণমূল দখল করে। দলীয় ভাবে কার্যত দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও লোকসভা ভোটে নতুন উদ্যোম নিয়েই প্রচার করতে দেখা গিয়েছিল সুস্মিতাকে। গৃহস্থের হেঁশেল থেকে গ্রামের লাল কাঁকুড়ে মাটির পথে প্রখর গরম মাথায় নিয়ে তিনি ভোট চাইতে ছুটেছিলেন। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলও তাঁকে জুগিয়েছিল বাড়তি অক্সিজেন। তাহলে হারের কারণ কী? সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রেক জবাব, “পর্যালোচনা না করে পরাজয়ের কারণ বলব না।”

কোনও রাউন্ডেই বিরোধীরা সৌমিত্র-র কাছে মাথা তুলতে পারেননি। গণনা কেন্দ্রের মধ্যে সদর্পে ঘুরতে ঘুরতে সৌমিত্র বললেন, “আমি মমতাদি-র টানেই তৃণমূলে এসেছি। তাঁর উন্নয়নের ডাকে সাড়া দিয়েই দীর্ঘ দিনের বাম দূর্গ গুঁড়িয়ে দিলেন মানুষ।” ফল ঘোষণা পর্যন্ত কর্মীরা আর অপেক্ষা করতে পারলেন না। সৌমিত্রকে তাঁরা কাঁধে তুলে সবুজ আবির মাখিয়ে দিলেন মাথায়। তত ক্ষণে সিপিএমের শিবির কার্যত জনশূন্য। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “মানুষ উন্নয়নের দিকেই রায় দিয়েছেন। বিরোধীরা আমাদের বিরুদ্ধে যে কুত্‌সা রটাচ্ছেন তা যে মিথ্যা, মানুষের এই রায়ই ফের প্রমাণ করে দিল।”

(প্রশাসন তথ্য না দেওয়ায় বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের বিধানসভা ভিত্তিক ফল প্রকাশ করা সম্ভব হল না।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE