চলছে কত্থকের প্রশিক্ষণ।—নিজস্ব চিত্র।
সমাজ ওদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চারপাশের চেনা মানুষজন শুধু নয়, আত্মীয়-পরিজনের কাছেও ওরা ব্রাত্য। ওদের অপরাধ, ওরা কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারের অনাথ ছেলে মেয়ে। আদ্রা সংলগ্ন মনিপুর গ্রামে, কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালনায় অরুণোদয় শিশু নিকেতনের এমন পঞ্চাশ জন কিশোরীকে কত্থক নাচের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রশিক্ষণরত, আবাসিক অঞ্জলি মাহাতো, প্রীতি সাউ, প্রিয়া রজক, চৈতালী মাহাতোদের কথায়, “নতুন নাচ শিখতে পেরে ভীষন ভালো লাগছে, বুঝতে পারছি দৈনন্দিন জীবন যাপনের বাইরে একটা নতুন জগত্ রয়েছে”। ওদের কথায় সে জগত্, জীবনের নতুন মানে খোঁজা।
কুষ্ঠরোগাক্রান্ত পরিবার গুলিকে পুনর্বাসন দেওয়ার লক্ষ্যে কয়েক দশক আগে মনিপুর গ্রামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মনিপুর কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্র কাজ শুরু করেছিল। বৃদ্ধাবাস পরিচালনা থেকে রোগাক্রান্ত পরিবারগুলি শিশুদেরকে নিয়ে কাজ করে এই সংগঠন। অরুণোদয় শিশু নিকেতনে রয়েছে এ রকমই প্রায় দেড়শো কিশোর কিশোরী। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির সম্পাদক নবকুমার দাস জানান, এই ছেলে মেয়েদের পরিবারের অনেকে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের সমাজ পরিজন থেকে পরিত্যক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নবকুমারবাবুর কথায় “এই মেয়েদের মধ্যে অনেকেরই সৃজনশীল মনন রয়েছে, কিন্তু সামর্থ্য ও সুযোগের অভাবে তার বিকাশ ঘটাতে পারিনি আমরা, দিল্লীর ওই সংগঠনটি নাচের প্রশিক্ষণ দেওয়াতে সত্যিই মেয়েদের উপকার হচ্ছে, পুরো বিষয়টি যথেষ্ঠ রেখাপাত করেছে ওদের মনে”। চারদিনের প্রশিক্ষণ শিবির শুরু হয়েছে ১ জুন থেকে।
মনিপুর গ্রামের এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত এলাকার প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ বাসুদেব আচারিয়ার উদ্যোগেই কত্থক দরবার নামের দিল্লীর এই সংস্থাটি মনিপুরে এসে কত্থক শেখানোর উদ্যোগ নিয়েছে। কার্যত ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাচ্ছে সমাজের প্রান্তিক অংশের এই মেয়েদের। প্রশিক্ষণ শিবির তিনজনের একটি দল এসেছে দিল্লী থেকে। তাঁদের কর্নধার সদানন্দ বিশ্বাস জানান, বাসুদেববাবুর মাধ্যমেই তাঁরা আগে এসেছিলেন জয়চন্ডী পাহাড় পর্যটন উত্সবে অনুষ্ঠান করতে। তখনই শুনেছিলেন মনিপুর গ্রামের বিষয়ে। বলেন, “সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশের মেয়েদেরকে কত্থকের মত নাচের মধ্যেমে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর কাজ করি আমরা। বাসুদেববাবু প্রস্তাব দিয়েছিলেন মনিপুর গ্রামের কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত পরিবারগুলির মেয়েদের এই নাচের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়ে। প্রস্তাব পাওয়ার পরে আর দেরী করিনি”।
প্রথাগত নাচের প্রশিক্ষণ না থাকা এই মেয়েদের শিবির নিয়ে সদানন্দবাবুর ব্যাখ্যা “এদের মধ্যে অনেকেরই তাল-লয় জ্ঞান যথেষ্ঠ ভালো। স্বাভাবিকভাবেই অঙ্গ সঞ্চালনা করছে, পায়ের কাজ(ফুট ওয়ার্ক)চোখে পড়ার মত। মেয়েগুলির মধ্যে সম্ভবনা রয়েছে প্রশিক্ষণ পেলে শৈল্পিক বিকাশ ঘটবে।”
সদানন্দবাবু জানান পরের ধাপে, ডিসেম্বর মাসে আবার মনিপুরে আসবেন তাঁরা। সেই সময়ে এই মেয়েদের মধ্যে কয়েকজনকে বেছে নিয়ে গ্রামেই অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। কত্থকের মত উচ্চমার্গের নাচ শিখে, বিভিন্ন রাজ্যের বহু জায়গায় তাঁদের অনুষ্ঠান ও দূরদর্শনের অনুষ্ঠানে সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy