ছোটদের নজরে গোয়েন্দা কাহিনি। রবিবার পুরুলিয়া বইমেলায় সুজিত মাহাতোর তোলা ছবি।
লালমোহনবাবু উপস্থিত থাকলে নির্ঘাৎ বলতেন, ‘‘সেলিং লাইক হট কচুরিস।’’
বাঙালির বই পড়ার অভ্যাস ইদানীং কমে আসছে বলে খেদ করেন অনেকে। কিন্তু পুরুলিয়া জেলা বইমেলায় দেখা গেল ছেলে বুড়ো সকলে বই কিনতে চলে এসেছেন। শহরের ভিক্টোরিয়া ইন্সস্টিটিউশনের মাঠে বসেছে মেলা। রয়েছে হরেক স্টল। প্রকাশকদের থেকে জানা গেল, জনপ্রিয়তায় সকলকে ছাপিয়ে গিয়েছেন ফেলুদা, ব্যোমকেশ, কাকাবাবু বা পাণ্ডব গোয়েন্দারা। অবশ্য কদর রয়েছে প্রেমের গল্প-উপন্যাসেরও।
আনন্দ পাবলিশার্সের অরিন্দম গুপ্ত জানান, যে ক’টি সেট শরদিন্দু অমনিবাস এনেছিলেন তার প্রথম দু’টি খণ্ড সব বিক্রি হয়ে গিয়েছে। ওই দু’ই খণ্ডেই রয়েছে ব্যোমকেশের যাবতীয় গল্প। অরিন্দমবাবু জানালেন, সাধারণ পাঠকদের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন গ্রন্থাগারিকরাও ঝুঁকছেন এই বইগুলির দিকে। একই অভিজ্ঞতা আদিত্য পাবলিশার্সের সমর বালারও। জানালেন কিরীটি অমনিবাসের চাহিদা সব চেয়ে বেশি। আর তার পরেই ভূতের গল্পের বইয়ের। মেলায় ঘুরে ঘুরে গ্রন্থাগারের জন্য বই বাছছিলেন গ্রন্থাগারিক বিপ্লব কবিরাজ। তিনি জানান, পাঠকরা আজকাল গোয়েন্দা গল্পের বই আর বিজ্ঞানের বইয়ের বেশি খোঁজ করেন।
পাঠকদের মধ্যে খুদে পাঠকদের উৎসাহই বেশি চোখে পড়ল মেলায়। মায়ের সঙ্গে নানা স্টলে ঘুরছিল পুরুলিয়া শহরের ডিগুডি এলাকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সুব্রতা দরিপা। তার মা মধুমিতা দরিপা জানান, সুব্রতার পছন্দ ভূতের গল্প। আর এক খুদে পাঠক তৃষিত কুণ্ডুর প্রিয় পাণ্ডব গোয়েন্দাদের কীর্তিকলাপ। মলাটবন্দি বাবলু-বিলু-ভোম্বল-পঞ্চুদের সটান ব্যাগে চালান করে দিয়ে জানাল, পরীক্ষা শেষ। বাড়ি গিয়েই পড়ে ফেলবে নতুন বই। দেবাংশী চট্টোপাধ্যায় এবং সুমেধা চট্টোপাধ্যায় নামে দুই তরুণীও কিনলেন ইংরেজি গোয়েন্দাগল্প এবং কল্পবিজ্ঞানের বই।
তবে ভিড় জমছে স্থানীয় প্রকাশকদের ছোট স্টলগুলিতেও। সেখানে স্থানীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে উৎসাহী মানুষেরা ভিড় করছেন। বজ্রভূমি প্রকাশনীর পক্ষ থেকে জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপকুমার গোস্বামী জানালেন, সদ্য প্রকাশিত ‘মানভূমের ঝুমুর’ বইটি ভাল বিক্রি হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে মানভূমের লোকসংস্কৃতি বা পুরুলিয়ার লৌকিক দেবদেবী সংক্রান্ত বইও।
গোয়েন্দাগল্পের প্রতি বাঙালির এই পক্ষপাতিত্বের কারণ কী? মেলা কমিটির সদস্য অভিজিৎ চৌধুরীর মতে, গোয়েন্দাগল্প নিয়ে পরপর বেশ কিছু চলচ্চিত্র জনপ্রিয় হওয়া এর বড় কারণ। আর তা নিয়েই খেদ মেলায় আসা পুরনো এক বই রসিকের। তিনি বলেন, ‘‘সাহিত্য বইয়ের প্রতি আলাদা করে আর টান নেই মানুষের।’’
অবশ্য বইয়ের প্রতি টানের জলজ্যান্ত প্রমাণও দেখা গিয়েছে মেলায়। ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের বাসিন্দা গৌতম গোস্বামী অযোধ্যা পাহাড়ে পিকনিক করতে এসেছিলেন। বইমেলা হচ্ছে শুনে সটান চলে এসেছেন সেখান থেকে। আর মেলা থেকে কিনেছেন বেশ কিছু ভারি ভারি প্রবন্ধের বই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy