সেই পাড়ুইয়ে ফের আক্রান্ত বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী। ফের অভিযুক্ত বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীরা।
এ বারের ঘটনাস্থল, পাড়ুই থানার সাত্তোর পঞ্চায়েতের ভেড়ামারি গ্রাম। শাসক দলের ‘সন্ত্রাস’ ও ‘দুর্নীতি’র প্রতিবাদে সরব হওয়ার অপরাধে মঙ্গলবার রাতে ওই গ্রামে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী বাবু শেখের উপরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমায় তাঁর পা গুরুতর জখম হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বুধবার তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।
এই ঘটনায় পাড়ুই থানায় যে অভিযোগ করেছেন বাবুর দাদা, তাতে অবশ্য অনুব্রত মণ্ডলের নাম নেই। তবে, নাম রয়েছে তাঁরই ঘনিষ্ঠ তথা সাত্তোর পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য শেখ মুস্তফা-সহ ২১ জনের। মুস্তফা আবার লাগোয়া কসবা পঞ্চায়েতের বাঁধনবগ্রামে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কর্মী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ হত্যা-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত। যে ঘটনায় অভিযুক্তদের তালিকায় এক নম্বরে নাম রয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতির! মুস্তাফা গ্রেফতার হলেও আজও ধরা পড়েননি অনুব্রত। মুস্তাফা বর্তমানে জামিনে মুক্ত। অন্য দিকে, হৃদয় ঘোষ-সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা মারধরের অভিযোগ করেছে মুস্তাফা-গোষ্ঠী।
বস্তুত, গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই বোলপুর ব্লকের কসবা, সাত্তোর-সহ লাগোয়া কয়েকটি পঞ্চায়েত এলাকায় দলীয় বিক্ষুব্ধদের উপরে শাসক দলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর সন্ত্রাস চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পঞ্চায়েত ভোটের মুখে কসবায় সভায় নির্দলদের উপরে হামলার পরামর্শ দেন অনুব্রত। তার পরেই কসবা পঞ্চায়েতের নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা খুন হন। অভিযোগ ওঠে অনুব্রত, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী-সহ আরও অনেকের বিরুদ্ধে।
এক বছর পরে বাবু শেখের উপরে বোমায় হামলার ঘটনা এলাকার বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মনে আবার এক বছর আগের সেই সময়কার আতঙ্কই ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু, কেন হামলা হল বাবুর উপরে?
স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার সাত্তোর লাগোয়া বিদ্যাধরপুর পঞ্চায়েতে হুল দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বিজেপি-র জেলা তৃণমূল সভাপতি দুধকুমার মণ্ডল। সেই অনুষ্ঠানে হৃদয় ঘোষ-সহ পাড়ুই থানা এলাকার তৃণমূলের অনেক বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। হৃদয়বাবুর অভিযোগ, “এই বিষয়টিকে ভাল ভাবে নেয়নি শেখ মুস্তফারা। তাই তার দলবল আমাদের অনুগামীদের হুমকি দিচ্ছিল। বেশ কিছু এলাকায় আমাদের কর্মী সমর্থকদের ওই অনুষ্ঠানে আসতে দেওয়া হয়নি। তা ছাড়া বাবু শেখ নামে আহত ওই কর্মী সাত্তোর পঞ্চায়েতে দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলেন। তাই এই হামলা।” পাল্টা মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে তাঁর দাবি, “হাইকোর্টে হলফনামা দেওয়ার জন্য মঙ্গলবার আমি কলকাতায় ছিলাম। তা হলে হামলা চালালাম কী করে?”
অনুব্রত মণ্ডল অবশ্য বলেন, “বাবু শেখ তোলাবাজ। বছরে ছ’মাস জেলে থাকে! মানুষ ওকে ভালভাবে নেয় না। হয়তো তাই বাসিন্দাদের রোষের মুখে পড়েছে। এতে তৃণমূলের যোগ নেই।” পুলিশও জানিয়েছে, এলাকার বেশ কিছু অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বাবু শেখের বিরুদ্ধে।
কসবা পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তথা বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা নিমাই দাসের আবার অভিযোগ, “শেখ মুস্তফা ও তার দলবল ওই এলাকায় পরের পর অপরাধমূলক কাজ করে যাচ্ছে। সন্ত্রাস, লুঠপাট, বোমাবাজি করে এলাকাকে অশান্ত করছে। পুলিশকে বহুবার জানানো হলেও তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে।” নিমাইবাবুরও দাবি, বাবু শেখ পঞ্চায়েতের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় এবং হুল দিবসের অনুষ্ঠানে যাওয়ায় তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল মুস্তফা-গোষ্ঠী। বাবু শেখের স্ত্রী রোশেনা বিবি এবং ওই রাতে ঘটনাস্থলে থাকা ভেড়ামারি গ্রামেরই বাসিন্দা শেখ মনসুর বলেন, “গ্রামে দিন কয়েক আগে থেকে শেখ মুস্তফার লোকজন হুমকি দিচ্ছিল। মঙ্গলবার রাতে আমরা তিন জন গ্রামের একটি চায়ের দোকানে চপ খেতে যাচ্ছিলাম। ওই সময়ে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। আমরা কোনও মতে বেঁচে গিয়েছি।”
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাত্তোর পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা তৃণমূল সদস্য শেখ মুস্তফা। জেলা সভাপতির সুরে তিনিও দাবি করেন, “ওই এলাকার সমাজবিরোধী এবং পুলিশের খাতায় নাম থাকা অপরাধীরা আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করেছে। আমাদের দু’জন আহত হয়েছেন। বাবু শেখরাই সাত্তোরের পঞ্চায়েত প্রধানকে আক্রমণ এবং সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করার ছক করেছিল। পুলিশ থাকায় ও স্থানীয় মানুষ রুখে দাঁড়ানোয় তারা পালিয়ে যায়।” তাঁর আরও অভিযোগ, নিমাই দাস, হৃদয় ঘোষের দলবল গোটা এলাকায় সন্ত্রাস করছে। মঙ্গলবারের ঘটনায় ওঁরাই ঘটনাস্থলে হাজির থেকে ওই ঝামেলা পাকিয়েছেন।
গণ্ডগোলের আশঙ্কায় ভেড়ামারি গ্রাম কার্যত পুরুষশূন্য। বোলপুরের এসডিপিও সূর্যপ্রতাপ যাদব বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে এলাকায় গিয়েছিলাম। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy