Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪

বিকেলেই শেষ বাস, অফিস ছুটিও আগে

সরকারি নিয়মে অফিসে ছুটির সময় বিকাল ৫টা। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বিকাল ৪টে ১৫মিনিট পেরিয়ে গেলেই বাড়ি ফেরার তাগাদা শুরু হয়ে যায় ব্লক অফিসের কর্মীদের মধ্যে। সাড়ে চারটে বাজতে না বাজতেই অফিস প্রায় ফাঁকা। এই দৃশ্য শুধু খয়রাশোল ব্লক অফিসেরই নয়। খয়রাশোলের যত সরকারি অফিস কাছারি রয়েছে, সর্বত্র একই ছবি। এ জন্য অবশ্য সরকারি কর্মীদের কোনও দোষ দেওয়া যায় না। কারণ সিউড়ি যাওয়ার শেষ বাস ছেড়ে যায় বিকাল ৪টে ৪০ মিনিটে।

যানবাহন কম। এ ভাবেই চলে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র

যানবাহন কম। এ ভাবেই চলে যাতায়াত। —নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৮
Share: Save:

সরকারি নিয়মে অফিসে ছুটির সময় বিকাল ৫টা। কিন্তু ঘড়ির কাঁটা বিকাল ৪টে ১৫মিনিট পেরিয়ে গেলেই বাড়ি ফেরার তাগাদা শুরু হয়ে যায় ব্লক অফিসের কর্মীদের মধ্যে। সাড়ে চারটে বাজতে না বাজতেই অফিস প্রায় ফাঁকা।

এই দৃশ্য শুধু খয়রাশোল ব্লক অফিসেরই নয়। খয়রাশোলের যত সরকারি অফিস কাছারি রয়েছে, সর্বত্র একই ছবি। এ জন্য অবশ্য সরকারি কর্মীদের কোনও দোষ দেওয়া যায় না। কারণ সিউড়ি যাওয়ার শেষ বাস ছেড়ে যায় বিকাল ৪টে ৪০ মিনিটে। তারপর শুধু সিউড়ি কেন, বাস যোগে খয়রাশোল থেকে অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নেই! খয়রাশেলের বিডিও মহম্মদ ইসরারের আক্ষেপ, “অধিকাংশ কর্মীই বাইরে থেকে খয়রাশোলে কাজে আসেন। বাসের সময় যদি আরও আধ ঘন্টা পিছিয়ে দেওয়া যেত তাহলে অন্তত আরও কিছুটা বেশি কাজ পাওয়া কর্মীদের কাছ থেকে।”

সমস্যা শুধু সরকারি কর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, গোটা খয়রাশোলবাসীরই। পরিবহণ সমস্যা। ঘটনা হল, বিকালের পর খয়রাশোলের বাইরে বাস যোগাযোগ না থাকাই একমাত্র সমস্যা নয়। রাতের দিকে সিউড়ি ও দুবরাজপুর থেকে ফেরার সমস্যাও রয়েছে। সব চেয়ে বড়কথা কলকাতার সঙ্গে এই ব্লকেরই সরাসরি কোনও যোগযোগ নেই। একটি সরকারি বাসও এই ব্লকে চলে না। কলকাতা থেকে রামপুরহাটগামী ময়ূরাক্ষী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এই ব্লকের দুটি (পাঁচড়া, ভীমগড়) স্টেশন ছুঁয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু রাতে ওই ট্রেনে নেমে আর কোনও যোগাযোগ নেই বাড়ি ফেরার। এতে ভুগতে হচ্ছে খয়রাশোল-সহ আটটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের।

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারণ হিসাবে খয়রাশোলে ঢোকার বেহাল রাস্তাকেই দায়ী করছেন অধিকাংশ মানুষ। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে সিউড়ি থেকে খয়রাশোলে আসার জন্য মূলত দুটি রাস্তা রয়েছে। এক, দুবরাজপুর থেকে রানিগঞ্জ মোরগ্রাম ৬০ জাতীয় সড়ক ছেড়ে কুখুটিয়া হয়ে। দুই জাতীয় সড়ক ছেড়ে খয়ারশোলের পাঁচড়া মোড় দিয়ে। দুটি রাস্তাই অত্যন্ত খারাপ হয়ে গিয়েছে। খয়রাশোল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি সিপিএমের সমীর রায় বলছেন, “সত্যি রাস্তা দুটির অবস্থা খুবই শোচনীয়। বহুকাল না ওই রাস্তা যাথাযথ সংস্কার হয়েছে, না চওড়া হয়েছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমাদের সময়ে চেষ্টা করেও পারিনি।” দুবরাজপুর থেকে প্রতিদিন খয়রাশোলে কাজে যাওয়া রঞ্জন নন্দী, বোলপুর থেকে ব্যবসার কাজে খয়রাশোল যাতায়াত করা বিশ্বজিৎ যশ, কিংবা খয়রাশোলের তরুণী নাতাশা সরকারেরা বলছেন, বেহাল রাস্তা ও অপর্যাপ্ত যোগাযোগের জন্য ভাবনা থাকেই, ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছব তো? সর্বস্তরের অভিযোগের সাপেক্ষে বাস মালিকেরা অবশ্য বেহাল রাস্তাকেই দায়ী করছেন। বাসমালিক অনাদি মণ্ডল, অসীম সরকার, সুশীল চৌধুরী বলছেন, “রাস্তা খারাপ নতুন বাস না চালানোর প্রধান কারণ।

এলাকার নির্বাচিত জেলাপরিষদের সদস্য তথা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিকাশ কর্মাধ্যক্ষ নবগোপাল বাউড়ি অবশ্য জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই রাস্তা দুটির দরপত্র ডাকা হয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলেন, “সমস্যা রয়েছে সন্দেহ নেই। কলাকাতাগামী একটি বাস খোলার জন্য এবং খয়রাশোল থেকে শেষ বাসটির সময় পিছিয়ে দেওয়ার জন্য জেলা পরিবহণ আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছে।” জেলা পরিবহণ আধিকারিক রাজীব মণ্ডল বলেন, “নিয়ম মেনেই বাসের রুট পারমিট দেওয়া হয়। কিন্তু সবথেকে বড় শর্ত সেই জন্য কোনও বাসমালিক আমার কাছে আবেদন জানাবেন। খয়রাশোলের ক্ষেত্রে তা হয়নি। তবে, জেলায় যে ৬০টি রুট বেছে নিয়ে ছোট গাড়ির পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, খয়রাশোলও সেই তালিকায় আছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE