পুলিশ সুপারের অফিসে উদ্ধার হওয়া নাবালিকা ও ধৃতেরা। বুধবার।—নিজস্ব চিত্র।
পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে অগস্ট মাসে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল এক কিশোরী। মেয়েটির ‘প্রেমিক’ এবং প্রেমিকের এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে পুলিশ জানতে পারে, ওই কিশোরীকে পাচার করে দেওয়া হয়েছে রাজস্থানে। জেরা থেকে মেলা সূত্র ধরে রাজস্থানের বারাং জেলার বুরোনোনেরা গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই নাবালিকাকে। বুধবার পুলিশ ওই কিশোরীকে রাজস্থান থেকে পুরুলিয়ায় নিয়ে এসেছে।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার জানিয়েছেন, মেয়েটির নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথমে ধরা হয় বীরসিং মান্ডি ও অজয় দাস নামে ঝাড়খণ্ডের দুই যুবককে। বীরসিংয়ের বাড়ি ঝাড়খণ্ডের গামারিয়ার কুলুডি গ্রামে। আর অজয় আদিত্যপুরের শান্তিনগর গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই দু’জনকে জেরা করে মধ্যপ্রদেশের শিবপুরী জেলার বমেরা গ্রাম থেকে মহেশ শর্মা এবং রাজস্থানের বুরোনোনেরা গ্রাম থেকে মনু শর্মা নামে আরও দু’জনকে নারী পাচার চক্রে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোটা ঘটনার তদন্তের জন্য চার জনকেই ট্রানজিট রিমান্ডে পুরুলিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া মফস্সল থানা এলাকার দান্দুডি গ্রামের ওই আদিবাসী কিশোরী অগস্ট মাসে এক দিন হঠাত্ই বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। ওই ঘটনার কিছু দিন আগেই এক বিয়ে বাড়িতে ওই কিশোরীর সঙ্গে আলাপ জমায় বীরসিং। আলাপ থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কিশোরীটির সঙ্গে বীরসিংয়ের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে ২৪ অগস্ট। পুলিশ সুপার বলেন, “এর কয়েক দিন আগেই ওই কিশোরী নিখোঁজ হলেও বাড়ির লোকজন প্রথমে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেননি। মেয়েটির বাড়ির লোক জানতেন যে, বীরসিংয়ের সঙ্গে তার একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।”
কী ভাবে নিখোঁজ হল ওই কিশোরী?
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, বীরসিং মেয়েটিকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিল বারবার। এমনকী, তার সঙ্গে ঘর বাঁধতে না পারলে সে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যাও করবে বলেও বীরসিং হুমকি দেয়। মেয়েটিও ধীরে ধীরে তার প্রেমিকের পাতা ফাঁদে পা দিতে শুরু করে। এক দিন বীরসিং মেয়েটিকে পুরুলিয়া স্টেশনে আসতে বলে। মেয়েটি সেই মতো স্টেশনে এলে তাকে নিয়ে ট্রেনে গামারিয়া চলে যায় বীরসিং। সেখানে কয়েক দিন রেখে মেয়েটিকে বীরসিং বলে, তার এক আত্মীয়ের বাড়ি মধ্যপ্রদেশে। বিয়ের আগে আমার সেখান থেকে ঘুরে আসবে তারা। এর পরে বীরসিং ও তার বন্ধু অজয় দাস মেয়েটিকে নিয়ে টাটানগর থেকে ট্রেনে চেপে ঝাঁসি পৌঁছয়। সেখান থেকে অটো ধরে শিবপুরী বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাস ধরে বামেরা গ্রামে মহেশ শর্মার বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় ওই আদিবাসী কিশোরীকে। পুলিশ সুপার বলেন, “বীরসিং ও অজয়ের সঙ্গে তাদের এক বন্ধুও ছিল। তার খোঁজ চলছে।”
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, মহেশ শর্মা নামে ধৃত যুবক বমেরা এলাকায় পণ্ডিত হিসেবেই পরিচিত। সে বিয়েতে পুরোহিতের কাজও করে। বমেরায় মেয়েটিকে কিছুদিন রেখে রাজস্থানের বারাং জেলার বুরোনোনেরা গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, তদন্তে নেমে বীরসিংয়ের সঙ্গে মেয়েটি সম্পর্কের কথা জেনে পুরুলিয়া মফস্সল থানার পুলিশ প্রথমে টাটানগরের কাছে গামারিয়ায় যায়। সেখানে খোঁজখবর চালিয়েও কিশোরীর কোনও হদিস পায়নি পুলিশ, কিন্তু, বীরসিংয়ের খোঁজ পেয়ে তাকে প্রথমে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করেই তার দুই বন্ধু এবং মহেশ শর্মা ও মনু শর্মার হদিস পায় পুলিশ।
ধৃতদের দেওয়া সূত্রের ভিত্তিতেই সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর রাজস্থান থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “যার বাড়ি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেই ব্যক্তি পলাতক। তার খোঁজ চলছে। বিয়ে করার নামে ফুসলিয়ে নিয়ে গিয়ে মেয়েটিকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল।”
কোনও নিষিদ্ধপল্লি থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয়েছে কি না, জানতে চাওয়া হলে পুলিশ সুপার বলেন, “না, সেখানে পাঠাতে পারেনি। হয়তো মেয়েটিকে বিক্রিই করে দেওয়া হত। তার আগেই আমরা ওকে উদ্ধার করেছি। কত টাকায় কত জায়গায় বিক্রি হয়েছে, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” তিনি জানান, বীরসিংয়ের কাছ থেকে কিছু টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। আর কারা এই পাচার চক্রে জড়িত, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy