বিশ্ববাংলা হাটে পট নিয়ে বসে আছেন শিল্পী। —নিজস্ব চিত্র।
হস্তশিল্পীরা শিল্পকর্ম নিয়ে বসে আছেন। ফি সপ্তাহে কারও বিক্রি একশো টাকা। কেউ বলছেন ‘বওনি’ হয়নি এখনও! এ দৃশ্য বিশ্ব বাংলা হাটের। দৃশ্যত শান্তিনিকেতনের প্রান্তিকে এভাবেই ধুঁকছে রাজ্য সরকারের এই হাট। এতে একদিকে যেমন সরকারি টাকার অনর্থ বাড়ছে, রীতিমতো হতাশ হস্ত শিল্পীরা।
গ্রামীণ হস্ত শিল্পের প্রসারের জন্য শান্তিনিকেতনের প্রান্তিকে ২৫ বিঘে জায়গায় গড়ে উঠেছে ‘বিশ্ব বাংলা হাট’। হাট বসার এই উদ্দেশ্য প্রথম দিকে এলাকার হস্ত শিল্পীদের উৎসাহিত করলেও, এখন পরিস্থিতি এমনই যে, ওই হাট চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশই নেই। জেলার তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে ওই হাটে নানা সৌখিন হস্ত সামগ্রী বিক্রি করতে আসা ক্রেতারাও বেশ বিরক্ত।
গত ৯ই ফেব্রূয়ারি থেকে নিজেদের হস্তশিল্পের পসার নিয়ে বসেছেন শতাধিক হস্তশিল্পী। কাঁথা স্টিচের কাপড়, কাঠ খোদাই নানা আসবাব সামগ্রী, পোড়া মাটি ও পাটের শিল্প কর্ম, পট ইত্যাদি হস্ত শিল্পের সম্ভার নিয়ে দোকান সাজিয়ে বসে থাকেন তাঁরা! কিন্তু প্রায় কেউ-ই বিক্রি-বাটায় খুশি নন। বীরভূম ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হস্তশিল্পীদের জন্য রাজ্য সরকার খরচও করেন বেশ কিছু অর্থ।
সম্প্রতি ওই হাটে গিয়ে দেখা গেল পশ্চিম মেদিনীপুরের বাসুদেবপুরের বাসিন্দা জরিনা বিবিকে গালে হাত দিয়ে বসে রয়েছেন। তিনি মূলত পট শিল্পী। তাঁর ঠাকুমা এবং বাবা দু’জনেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত পট শিল্পী। তাঁদের আঁকা পট এবং মাটির নানা শিল্প কর্ম বিক্রি করতে বসেছেন বিশ্ব বাংলা হাটে। হতাশার সঙ্গে বললেন, “গত ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে স্টল সাজিয়ে বসে আছি। এখনও বিক্রি বাটাই হল না! এভাবে আর কতদিন বসে থাকা যায়?” হতাশ পূর্ব মেদিনীপুরের কেশবাড়ির বাসিন্দা পট শিল্পী হাসিনা চিত্রকরও। বললেন, “গত এক সপ্তাহে মাত্র ১০০ টাকায় একটি পট বিক্রি হয়েছে। কোনো লোকজনই তো আসছেন না, কিনবেন কে?”
জানা গেল, গত বছরের ১৮ অক্টোবর প্রান্তিকে হাটটি শুরু হলেও কোনও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। হাটে ১০৪ টি স্টলের মধ্যে ৫০ টির মতো স্টল বরাদ্দ আছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার রাজ্য সরকার স্বীকৃত হস্তশিল্পীদের জন্য। বছরে এক বা একাধিক বার কুড়িদিনের জন্য রোটেশন ভিত্তিক হস্তশিল্পীরা হাটে তাঁদের তৈরি শিল্প সামগ্রী নিয়ে স্টলে বসে বিক্রি করতে পারবেন। এর জন্য অন্য জেলার প্রতিটি শিল্পীকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকার রাহা খরচের সঙ্গে কুড়ি দিন থাকার জন্য প্রতি দিন ৫ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। উপযুক্ত ভাতা ও রাহা খরচ পেয়েও বিক্রি না হওয়ায় বিরক্ত শিল্পীরা। কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে?
হাটের ম্যানেজার বরুন কুমার মণ্ডলের আক্ষেপ, “এই হাটের প্রচারের জন্য প্রচুর লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করা হয়েছে। শান্তিনিকেতন, বোলপুর জুড়ে টাঙ্গানো হয়েছে ব্যানার ও হোর্ডিং। তথাপি হাটে মানুষ জন তেমন ভাবে আসছেন না।” কেন ক্রেতা নেই, সে প্রশ্নের উত্তরে বরুন বলেন, “প্রধান কারণ, যোগাযোগ বা পরিবহণ ব্যবস্থা। এলাকায় রিক্সার ভাড়া লাগাম ছাড়া। অটো রিক্সা বা বোলপুরের টাউন সার্ভিস মিনি বাস প্রান্তিকে যাতায়াত করলে, এই হাটে মানুষের বা ক্রেতাদের সমাগম হবে।”
যে এলাকায় হাটটি, সেই প্রান্তিক শ্রীনিকেতন শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদ-এর আওতাধীন। ওই সংস্থার প্রথম সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন লোকসভা অধ্যক্ষ ও সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। তিনি মনে করেন, “হাটটিকে জন প্রিয় করে গড়ে তোলার জন্য এবং হস্তশিল্পীদের যথার্থ উপাজর্নের জন্য প্রান্তিকে যথাযথ যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার।” এই ব্যাপারে তিনি পর্ষদের বর্তমান সভাপতি মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহকে প্রস্তাব দেবেন বলে জানিয়েছেন। তেমন উদ্যোগ নেওয়ার কথা মনে করেন পর্ষদের বর্তমান সভাপতি মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহও।
চন্দ্রনাথবাবুর আশ্বাস, “প্রান্তিক এলাকায় কম খরচে যাতায়াতের জন্য যানবাহন চলাচলের প্রয়োজন। সে নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy