Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

দুবরাজপুরে আত্মঘাতী এজেন্ট

একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে এলাকা থেকে প্রায় এক কোটি টাকা তুলেছিলেন। আমানতকারীদের গচ্ছিত সেই টাকা ফেরত দিতে না পারার চাপে বিজন ঘোষ (৫৫) নামে ওই এজেন্ট আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। বুধবার দুবরাজপুর থানার কল্যাণপুর গ্রামের ঘটনা।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত এজেন্টের স্ত্রী। বুধবার কল্যাণপুর গ্রামে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত এজেন্টের স্ত্রী। বুধবার কল্যাণপুর গ্রামে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:১০
Share: Save:

একটি ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে এলাকা থেকে প্রায় এক কোটি টাকা তুলেছিলেন। আমানতকারীদের গচ্ছিত সেই টাকা ফেরত দিতে না পারার চাপে বিজন ঘোষ (৫৫) নামে ওই এজেন্ট আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। বুধবার দুবরাজপুর থানার কল্যাণপুর গ্রামের ঘটনা। এ দিন সকালেই বিজনবাবুর দেহ উদ্ধার করে সিউড়ি হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ব্যক্তি। তবে, আপাতত ওই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে পুলিশ।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, এলাকায় সুপরিচিত বিজনবাবু ২০০৪ সাল থেকে ‘বেসিল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন। দুবরাজপুরের পদুমা অঞ্চলের যে গ্রামে বিজনবাবুর বাড়ি তার পাশাপাশি সদাইপুর এবং পাড়ুই থানা এলাকার বহু গ্রাম রয়েছে। এত বছর কাজ করার ফলে ওই এলাকার অসংখ্য আমানতকারীর কাছে থেকে তিনি ওই অর্থলগ্নি সংস্থার হয়ে প্রায় ১ কোটি টাকা তুলেছিলেন বলে পরিবারের দাবি। কিন্তু, সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পর থেকেই বেসিলও আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই সমস্যার শুরু। সময় যত গড়িয়েছে, টাকা ফেরতের জন্য আমানতকারীদের চাপ তত বেড়েছে। বিজনবাবুর স্ত্রী সুচিত্রাদেবী বলেন, “কোম্পানি ডুবে যাওয়ার পর থেকে আমানতকারীরা এসে কেবলই টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য স্বামীকে অপমান করে যেতেন। মাঝে মধ্যে মিলত হুমকিও। ওঁর উপর ক্রমশ চাপ বাড়ছিল। কিন্তু, তা বলে উনি আত্মহত্যা করবেন, এ আমি দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। আমরা অসহায় হয়ে গেলাম!”

ঠিক কী ঘটেছিল?

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজনবাবুর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী সুচিত্রাদেবীকে আবার তিনি দিন দুই আগে বাপের বাড়ি খয়রাশোলের পাইগড়া ঘুরতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পাশেই থাকেন দাদা সুজিত ঘোষ। মঙ্গলবার বিজনবাবু সারাদিন বাড়িতে একাই ছিলেন। বুধবার সকাল ৫টা নাগাদ ভাইকে বাড়ির বাইরে গোয়ালঘরের সামনে নেতিয়ে পড়ে থাকতে দেখেন সুজিতবাবুই। তিনি বলেন, “ভাইকে ও ভাবে পড়ে থাকেত দেখেই সন্দেহ হয়েছিল। কাছে গিয়ে দেখি ওর মুখ থেকে লালা ঝড়ছে। কিছুটা দূরেই পড়ে রয়েছে কীটনাশকের বোতল। তখনই বুঝে যাই সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে!” তবু পড়শিদের ডেকে বিজনবাবুকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার একটা শেষ চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু, হাসপাতালে আর তাঁদের পৌঁছনো হয়নি। তার আগেই ভাইয়ের মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে যায় বলে সুজিতবাবু জানিয়েছেন।

এ দিন সকালে কল্যাণপুর গ্রামে মৃত এজেন্টের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল পুলিশ তদন্তে এসে পৌঁছেছে। উঠানে শোওয়ানো বিজনবাবুর নিথর দেহ ঘিরে সমানে কেঁদে চলেছেন স্ত্রী এবং দুই মেয়ে। সঙ্গে শোকার্ত আত্মীয় পরিজনও। সকলেই দুঃসংবাদ পেয়ে ছুটে এসেছেন। ছোট মেয়ে পূজা কান্না থামিয়ে কোনও মতে বললেন, “যাঁরা টাকা রেখেছিলেন, তাঁরা প্রতি দিনই এসে বাবাকে অপমান করতেন। প্রাণে মারার হুমকি দিতেন। এমনকী, টাকা আদায় না হলে বাড়ির মেয়েদের সম্মান নষ্ট করা হবে, এমনটাও বাবাকে শুনতে হতো।” তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতে বিজনবাবু বহু আমানতকারীকে নিজের জমি, গয়না বিক্রি করে টাকা ফেরত দিয়েছিলেন। কিন্তু, সেই পরিমাণ সবার ক্ষোভ মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। পূজার অভিযোগ, “বাবার এই মৃত্যুর জন্য বেসিল ইন্টারন্যাশনালই দায়ী। যারা বাবার মতো অসহায় মানুষগুলোকে এমন বিপজ্জনক নিয়তির মুখে ঠেলে দিয়েছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।”

অন্য বিষয়গুলি:

dubrajpur suicide chit fund agent
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE