তিনটি প্রাণের বিনিময়ে এ বার ভারী বিদ্যুত্বাহী তারের নীচে ‘ক্রেডেল গাডর্’ পেতে চলেছে পুরুলিয়ার মেঠো পথ। এ বার আর শুধু পাকা সড়কই নয়, মেঠো পথের উপরেও ‘ক্রেডেল গার্ড’ বসানো হবে। বৃহস্পতিবার বাঘমুণ্ডি পরিদর্শন করে এমনই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিদ্যুত্ দফতরের আধিকারিকরা।
বিদ্যুত্ দফতরের জোনাল ম্যানেজার পবিত্র মাইতি বৃহস্পতিবার বলেন, “যে সব রাস্তার উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার গিয়েছে, সেই রাস্তার উপরের অংশে ক্রেডেল গার্ড (এক খুঁটি থেকে অন্য খুঁটিতে ঝুলে থাকা তার ধরে রাখার সরঞ্জাম) লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে এই ধরনের ক্রেডেল গার্ড পাকা সড়ক বা গ্রামের ব্যস্ত মোরাম রাস্তার উপরেই লাগানো থাকত। এ বার ওই ধরনের গার্ড মেঠো রাস্তার উপরেও লাগিয়ে দেওয়া হবে। এতে রাস্তায় তার ছিঁড়ে পড় এড়ানো যাবে।”
বুধবার সন্ধ্যায় বাঘমুণ্ডি থানার হুড়ুমদা গ্রামের রাস্তায় ছিঁড়ে পড়ে থাকা ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুত্বাহী তার জড়িয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান স্থানীয় বধূ রঙ্গবতী কুমার। চোখের সামনে স্ত্রীকে বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে ঝলসে যেতে দেখে তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুতর ভাবে আহত হন স্বামী প্রদীপ কুমার। তিনি ঝাড়খণ্ডের টাটানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এই দম্পতির পড়শি সুশান্ত কুমারের কথায়, “সুইসা বাজারে বিক্রির জন্য সন্ধ্যায় জমি থেকে সব্জি তুলে ফিরছিলেন ওঁরা দু’জনে। হঠাত্ চিত্কার শুনে গ্রাম থেকে ছুটে গিয়ে দেখি রঙ্গবতী পড়ে রয়েছে। আর তাঁর স্বামী প্রদীপ গোঙাচ্ছে। একটা লাঠি দিয়ে ওদের সরিয়ে দেওয়া হয়।”
একই ভাবে গত ২৪ অক্টোবরও মানবাজার থানার গোপালনগর গ্রামে একটি মেঠো রাস্তা দিয়ে মোটরবাইক নিয়ে যাওয়ার সময় বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে মৃত্যু হয় দুই ভাইয়ের। ওই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছিলেন, বছরখানেক আগেও ওই এলাকায় একটি খড় বোঝাই গরুর গাড়ির উপর বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে। আগুনে পুড়ে দু’টি গরু মারা যায়। ওই দুই যুবকের মৃত্যুর পর উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত্বাহী লাইনগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে স্থানীয় মানুষজন ও প্রশাসন এবং বিদ্যুত্ দফতরের পদস্থ কর্তাদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকও হয়।
সেই বৈঠকেও স্থানীয় বাসিন্দারা এ ধরনের বিদ্যুত্বাহী লাইন থেকে যাতে আগামী দিনে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়, সে দাবি তুলেছিলেন। বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো প্রশ্ন তুলেছেন, “রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত হলে কি এমন ঘটনা ঘটত? যদি কারও গাফিলতির ফলে এই দুর্ঘটনা হয়ে থাকে তা হলে দায় তো কাউকে নিতেই হবে।” বিষয়টি রাজ্যের বিদ্যুত্ মন্ত্রীর নজরে আনবেন বলেও নেপালবাবু জানিয়েছেন।
বুধবার সন্ধ্যার দুর্ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার গ্রামে যান বিদ্যুত্ দফতরের জোনাল ম্যানেজার পবিত্র মাইতি। তিনি বলেন, “আমরা এলাকায় গিয়েছিলাম। এই ধরনের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়লে আপনা আপনিই তার থেকে বিদ্যুত্ সংযোগ বিছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার ছিঁড়ে ধান খেতের উপরে পড়েছিল। মাটিতে তার ঠেকেনি বলে তারে বিদ্যুত্ ছিল।” তিনি জানান, বিধি মোতাবেক মৃতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে এবং আহতের চিকিত্সাও করানো হবে।
এই ধরনের লাইনে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে তার জবাবে পবিত্রবাবু বলেন, “রক্ষণাবেক্ষণ যে হয় না তা নয়। আমরা সারা বছরই বিভিন্ন লাইন নজরে রাখি। কোথাও তার ঝুলে পড়েছে কি না, বা কোথাও খুঁটি হেলে পড়েছে কি না সব দেখা হয়। এ ক্ষেত্রে খুঁটিতে চিনামাটির যে ইনসুলেটরের সঙ্গে তার লাগানো ছিল সেখানে বিস্ফোরণ হওয়ায় তার ছিঁড়ে পড়েছে। এটা দুর্ঘটনাই। তবু আমরা খতিয়ে দেখছি। আশপাশের বিভিন্ন লাইনও খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy