বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদনকারী এক গৃহবধূর মোবাইল ফোনে অশ্লীল প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ উঠল সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে স্থানীয় বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত নালিশ জানালেও লাভ হয়নি। উল্টে টাকা-পয়সা নিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের স্থানীয় এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসে।
বিদ্যুৎ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বিদ্যুৎ সরবরাহের ওই অফিসের আওতায় থাকা একটি গ্রামে চার ভাইয়ের একান্নবর্তী পরিবারে বাবার নামে বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়া ছিল। বাবার মৃত্যুর পর অন্য ভাইদের সঙ্গে গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীর নামে আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন জানান এক ব্যক্তি। ১৫ ফেব্রুয়ারি সেই আবেদনের ভিত্তিতে খোঁজখবর নিতে তাঁর বাড়িতে যান ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের এক অফিসার । তিনি মূল আবেদনকারী ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে চান। অভিযোগ, আবেদনপত্রে যোগাযোগের নম্বর থাকা স্বত্ত্বেও ওই মহিলার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর চেয়ে নেন তিনি। তার পর থেকেই সেই নন্বরে বারবার ফোন করে ওই মহিলাকে বিরক্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। দেওয়া হচ্ছে কুপ্রস্তাবও।
ওই গৃহবধূ বলেন, ‘‘ওই অফিসার প্রায়ই ফোন করে কুপ্রস্তাব দিত। আপত্তি করেও লাভ হয়নি। তাঁর সঙ্গে আধঘণ্টা একান্তে সময় না কাটালে সহজে বিদ্যুৎ সংযোগ মিলবে না বলেও হুমকি দিত। ভয় আর লোকলজ্জায় প্রথমে কাউকে কিছু বলতে পারিনি। পরে সব কথা স্বামীকে জানাই।’’
মহিলার স্বামী স্থানীয় একটি হিমঘরে প্যাকেট সেলাইয়ের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘স্ত্রীর ব্যক্তিগত ফোন নম্বর না দিলে সংযোগ হবে না বলায় ওকে বিশ্বাস করে তা জানিয়েছিলাম। কিন্তু ও যে এমন কাজ করবে তা ভাবতে পারিনি। বিদ্যুৎ দফতরে জানিয়ে লাভ হয়নি।’’ ওই ব্যক্তির অভিযোগ, জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জটিল মণ্ডল তাঁকে ষাটপলশা দলীয় অফিসে ডেকে টাকাপয়সা নিয়ে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। অভিযোগকারিণীর স্বামীর মন্তব্য, ‘‘গরীব বলে কি আমাদের পরিবারের মহিলাদের সম্মানের দাম টাকাপয়সা দিয়েই মিটিয়ে দেওয়া যায়?’’ জটিলবাবু টাকাপয়সা দিয়ে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের কয়েক জন কর্মীর অনুরোধে আমি ওই গৃহবধূর স্বামীকে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা না করে দু’পক্ষে সামনাসামনি বসে সমস্যা মিটিয়ে নিতে বলেছিলাম।’’
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রামচন্দ্র ডোম। তাঁর কথায়, ‘‘কী অদ্ভুত যুক্তি। তৃণমূলের পক্ষে অবশ্য সবই সম্ভব। টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়াই ওদের সংস্কৃতি। এতে ওই আধিকারিক তো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে। ওই গৃহবধূর লড়াইয়ে আমরা পাশে রয়েছি।’’
তৃণমূল-শাসিত ময়ূরেশ্বর ২ নম্বর ব্লকের সভাপতি নারায়ণপ্রসাদ চন্দ্র বলেন, ‘‘মীমাংসার ওই প্রস্তাবের বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। তাই এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।’’
অভিযুক্ত অফিসারের বাড়ি হুগলির কোন্নগরে। তিনি ওই মহিলাকে ফোন করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে বলেছেন, ‘‘পার্টির (শাসকদল) নেতারা ওটা মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। সংবাদমাধ্যমে কিছু না ছাপাই ভাল।’’
ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের স্টেশন ম্যানেজার রাজেন্দ্র পাল জানান, ওই গৃহবধুর অভিযোগ পাওয়ার পরই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা জানানো হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy