Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

বোমায় খুন মহিলা, ধন্দে পুলিশ

ঘুমের মধ্যে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমায় নিহত হলেন এক আদিবাসী মহিলা। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার নাম চুরকি সরেন (৪০)। বাড়ি ইলামবাজার থানার বিলাতি পঞ্চায়েতের কুলুপডাঙা। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন, নিহতের স্বামী বুড়ো সরেন। রবিবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে ইলামবাজার পুলিশ মহিলার নিথর দেহ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার খবর চাউর হতেই, সদলবলে বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ গিয়ে এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেন।

মা হারা সন্তান। —নিজস্ব চিত্র।

মা হারা সন্তান। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইলামবাজার শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

ঘুমের মধ্যে দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া বোমায় নিহত হলেন এক আদিবাসী মহিলা। পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার নাম চুরকি সরেন (৪০)। বাড়ি ইলামবাজার থানার বিলাতি পঞ্চায়েতের কুলুপডাঙা। বোমার আঘাতে জখম হয়েছেন, নিহতের স্বামী বুড়ো সরেন। রবিবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে ইলামবাজার পুলিশ মহিলার নিথর দেহ উদ্ধার করে। ময়না তদন্তের জন্য বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার খবর চাউর হতেই, সদলবলে বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ গিয়ে এলাকায় সরেজমিনে তদন্ত শুরু করেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলুপডাঙার ওই আদিবাসী দম্পতির কিছু জমি জায়গা রয়েছে। ঘটনার দিন তাঁরা প্রতিদিনের মতোই খড়ের চালায় খাটিয়ায় ঘুমিয়ে ছিলেন। নিহতের ছোট ছেলে ছোটন সরেন বলেন, ‘‘রাতে ঘুমিয়েছিলাম। রাত তিনটে নাগাদ খুব শব্দ শুনলাম। উঠে দেখি ধোঁয়া চারদিকে। বাইরে বেরিয়ে দেখি, বাবা ছুটোছুটি করছে। মা ওই খাটিয়ায় পড়ে আছে। বাবা বলল কে বা কারা বোমা মেরেছে।’’ একই কথা বলছিলেন, নিহতের স্বামী বুড়ো সরেন। প্রাথমিক চিকিৎসা করানোর পর, তাঁকে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘‘তালপাতার বেড়ায় কোনও কারণে খসখস করে শব্দ শুনতে পাই। ওই শব্দ পেয়ে ওঠার মুখে কে বা কারা বোমা ছুঁড়ল। তাতে চুরকির মাথায় লাগে। ও ওখানেই মারা গেল।’’

নিহত চুরকি সোরেন।

ঘটনা স্থলে এ দিন গিয়ে দেখা গেল, নিহতের দেহের কিছু টুকরো তখনও খড়ের চালা, মাটির দেওয়ালে লেগে আছে। নিহত মহিলা ও তাঁর স্বামী ঘুমিয়ে থাকা খাটিয়া, কিছু পোশাক পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এলাকায় কেউ কেউ অবশ্য এই ঘটনার পিছনে রাজনীতির ছায়া দেখছেন। তৃণমূলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ জাফারুল ইসলাম বলেন, “চুরকি সরেন আমাদের কর্মী। ২০০৫ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তবে প্রাথমিক ভাবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এই ঘটনা কোনও রাজনৈতিক বিবাদ থেকে নয়। কি কারণে আদিবাসী বৃদ্ধাকে কে বা কারা বোমা ছুঁড়ল পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দেখুক।”

নিহতের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় গোরু, বাছুর, মোষ চুরির ঘটনা প্রায় নিত্য দিনের ঘটনা। তাই নিজেদের পাকা বাড়ি থাকলেও, অনেকেই লাগোয়া গোরু বাছুর মোষ থাকার গোয়ালঘরের পাশে ঘুমোয়। তেমনই আর পাঁচটা দিনের মতো বুড়ো সরেন ও চুরকি সরেনরা গোয়ালঘরের একদিকে ঘুমিয়ে ছিলেন। পাশে ঢালাই করা বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন বছর ১৮ ছেলে ছোটন।

স্থানীয় বাসিন্দারা এবং আহত বুড়ো সরেনের বন্ধু স্থানীয় হাঁসড়ার বাসিন্দা সদাই হাঁসদারা জানান, এলাকায় ওই পরিবারের সঙ্গে কারোও কোনও দিন বিবাদ ছিল না। ওই এলাকায় রাজনৈতিক কোনও বিবাদের খবরও নেই। কি কারণে মাঝরাতে এই ভাবে বোমা ছুঁড়ল দুষ্কৃতীরা তা বুঝতে পারছেন না তাঁরাও। নিহতের পরিবারেরও দাবি, সেই অর্থে গত কয়েক বছর ধরে তাঁরা কোনও রাজনীতিও করেন না। তবে, দিন কয়েক আগে ইলামবাজার ব্লকের কিছু এলাকা ঘুরে আক্রান্ত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের পাশে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি। তারই পাল্টা হিসেবে এ দিন, রবিবার বিকেলে ওই ব্লকের হাঁসড়াতে তৃণমূলের জনসভা ছিল।

বোমায় জখম হয়ে মহিলার মৃত্যু নিয়ে ধন্দে পুলিশও। বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ ও ইলামবাজার থানার ওসি মহম্মদ আলি ঘটনার সরজমিনে তদন্তে নেমেছেন। ঘটনাস্থলেই বোলপুরের এসডিপিও অম্লান কুসুম ঘোষ বলেন, “তদন্ত নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE