Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চাক ভাঙা মৌমাছির হুল, মৃত্যু

মৃতার পরিবারের দাবি, মৌমাছির কামড়েই মৃত্যু হয়েছে সুখিয়াদেবীর। তবে, মৌমাছি কামড়ের ফলেই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এখনই তা মানতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ।

জলের ট্যাঙ্কে মৌচাক। আদ্রায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ

জলের ট্যাঙ্কে মৌচাক। আদ্রায়। ছবি: সঙ্গীত নাগ

নিজস্ব সংবাদদাতা
আদ্রা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৫
Share: Save:

রাস্তা সাফাই করছিলেন এক মহিলা রেলকর্মী। হঠাৎ গাছ থেকে ভেঙে একটি মৌচাক ভেঙে পড়ে তাঁর কাছে। সঙ্গে সঙ্গে মৌমাছিতে ছেঁকে ধরে তাঁকে। হুলে বিদ্ধ প্রৌঢ়া মাটিতে পড়ে ছটফট করতে শুরু করেন। কিছু পরে লোকজন সেখানে পৌঁছে দেখেন, মৃত্যু হয়েছে ওই মহিলার। শনিবার সকালে আদ্রার ধোবিবাঁধ তথা সূর্য সরোবর লাগোয়া এলাকার ঘটনা। মৃতের নাম সুখিয়া হাড়ি (৫২)। আদ্রার ট্র্যাফিক কলোনিতে তাঁর বাড়ি। আদ্রার রেলওয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানান। পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে দেহটি পুরুলিয়ায় ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে।

মৃতার পরিবারের দাবি, মৌমাছির কামড়েই মৃত্যু হয়েছে সুখিয়াদেবীর। তবে, মৌমাছি কামড়ের ফলেই যে তাঁর মৃত্যু হয়েছে, এখনই তা মানতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। আদ্রার ডিআরএম শরদকুমার শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘কাজ করার সময়ে এক মহিলা রেলকর্মীকে মৌমাছি কামড়ায় বলে শোনা গিয়েছে। তবে মৌমাছির কামড়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না, সেই বিষয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।” প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই প্রৌঢ়াকে অনেক মৌমাছি এক সঙ্গে কামড়েছিল। মৃত্যুর কারণ ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরেই জানা যাবে। তবে বহু সংখ্যায় মৌমাছি এক সঙ্গে হুল বেঁধালে মৃত্যু পর্যন্ত যে হতে পারে, তা মানছেন আদ্রা রেলওয়ে হাসপাতালের এক আধিকারিক। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘সুখিয়াদেবী উচ্চ রক্তচাপ-সহ হৃদ্‌যন্ত্রের কিছু সমস্যায় ভুগছিলেন। তাই এক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ ঠিক কী, সেই বিষয়ে আমাদের কিছুটা ধন্দ আছে।’’

আদ্রা রেলশহরে এমনিতেই মাঝেমধ্যেই মৌমাছির উপদ্রব রয়েছে। আদ্রার উত্তর ও দক্ষিণ দুই প্রান্তেই পুরনো বড়-বড় গাছে বহু মৌমাছির চাক রয়েছে। জলের রিজার্ভারগুলিতেও মৌমাছির বড়সড় চাক রয়েছে বলে বাসিন্দারা জানাচ্ছেন।

এ দিন সকালে সূর্য সরোবর লাগোয়া এলাকায় তেমনই একটি গাছে থাকা মৌমাছির চাক কোনও ভাবে ভেঙে পড়ে। সেই সময় নীচে সুখিয়াদেবীর সঙ্গে সাফাই করছিলেন আর এক মহিলা রেলকর্মী পার্বতী। মৌমাছির আক্রমণে তিনিও জখম হয়েছেন। তবে, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে রেল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

পার্বতী জানান, সকাল সাতটা নাগাদ তাঁরা দু’জনে রাস্তার পাশে সাফাইয়ের কাজ করছিলেন। হঠাৎই গাছ থেকে মৌমাছির চাক ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি তাঁদের ঘিরে ধরে। পার্বতীর কথায়, ‘‘হঠাৎ ঝাঁক ঝাঁক মৌমাছি ঘিরে ধরে হুল ফোঁটাতে শুরু করে। কোনও রকমে আমি দৌড়ে পালাই। ততক্ষণে কয়েকটা আমার শরীরে হুল বিঁধে দিয়েছে। সুখিয়ার দিকে তাকানোর সুযোগ পাইনি। পরে শুনি, সুখিয়া মারা গিয়েছে।’’

ঘটনা হল, ধোবি বাঁধ এলাকায় লোকজনের যাতায়াত এমনিতেই কম। তারপরে সকালের দিকে লোকজন কার্যত ছিলেন না। সুখিয়াদেবী বেশ কিছুক্ষণ ওই অবস্থায় রাস্তাতেই পড়ে ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। পরে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখে লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু, ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন দুপুরে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে মর্গের সামনে মৃতার আত্মীয় জুগনু হাড়ি, অমরনাথ হাড়ি দাবি করেন, ‘‘গাছ থেকে ভেঙে পড়া চাকের মৌমাছির কামড়েই সুখিয়াদেবীর মৃত্যু হয়েছে।’’

অন্যদিকে, রেল শহরের গাছ, জলের ওভারহেড ট্যাঙ্কে মৌমাছির বহু চাক থাকলেও সেগুলি কেন রেল ভাঙছে না, তা নিয়ে সরব হয়েছেন বাসিন্দারা। বিশেষ করে ওই প্রৌঢ়ার মৃত্যুর পরে সেই দাবি আরও জোরাল হয়েছে রেলকর্মীদের মধ্যেই।

রেলকর্মীদের অভিযোগ, মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন চাক থেকে উড়ে আসা মৌমাছির দল উৎপাত শুরু করে বিভিন্ন জায়গায়। স্কুল ছাত্রী থেকে শুরু করে রেলকর্মী মৌমাছির হুলে জখম হয়েছেন অনেকেই। রেলকর্মী সংগঠন মেনস কংগ্রেসের নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রেলের কয়েকটি অফিসের সামনে, অফিসার্স ক্লাবের সামনে, জলের ওভারহেড ট্যাঙ্কে মৌমাছির বড় চাক আছে। আমরা এই সমস্যা বহুবার রেল কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হলেও কর্তৃপক্ষ এই সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়নি।” আর এক রেলকর্মী সংগঠনের নেতা গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আদ্রা বহু পুরনো রেলশহর হওয়ায় বড় বড় গাছে প্রচুর মৌমাছির চাক রয়েছে। আমরা সমস্যাটি রেল কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছিলাম। কর্তৃপক্ষের এ বার অন্তত চাকগুলি ভেঙে দেওয়া উচিত।”

যদিও এ ব্যাপারে তাঁদের কার্যত কিছু করার নেই বলে জানাচ্ছেন ডিআরএম। তিনি বলেন, ‘‘মৌমাছির চাক ভাঙার মতো ব্যবস্থা আমাদের নেই। বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় কি না ভেবে দেখব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bee Sting Death Woman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE