প্রতীকী ছবি।
বাঁকুড়া জেলায় ভোটারদের বড় অংশই নতুন। তাই তাঁদের মন পেতে দলের তরুণ ব্রিগেডের উপর ভরসা রাখছে শাসক-বিরোধী সব পক্ষই। সেই অনুযায়ী, সাজানো হচ্ছে ভোট-প্রচারের কৌশল। গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে সমাজ-মাধ্যমেও।
গত লোকসভা ভোটে জেলার দু’টি কেন্দ্রে ভোটদাতাদের বড় অংশই ছিলেন যুব। পুরনির্বাচনের মুখে সদ্য প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকাতেও দেখা যাচ্ছে, নতুন ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে জেলা জুড়ে। তাই নতুন ভোটারদের কাছে টানাই এখন সব দলের কাছে চ্যালেঞ্জ।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার সংখ্যা বেড়েছে ৬,৭৭২। বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী বিধানসভা এলাকায় ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ৫,২৯৫ ও ৪,৩৮৬। রাজনৈতিক দলগুলির মতে, এই তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রের নতুন ভোটারদের বড় অংশই শহরাঞ্চলের। পুরভোটে ওয়ার্ডগুলিতে জয় পরাজয়ের ব্যবধান হাতে গোনা কিছু ভোটেও হয়। তাই প্রতিটি ভোটকেই পাখির চোখ করছে রাজনৈতিক দলগুলি।
নতুন বা যুব প্রজন্মের ভোটারদের কাছে টানতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিজস্ব কৌশল নিয়েছে। তৃণমূল ও সিপিএম এ জন্য দলের তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্রদের হাতিয়ার করতে চলেছে। সে অনুযায়ী পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। জেলা তৃণমূলের সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল জানান, দলের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন থেকে বাছাই করা কর্মীদেরই যুব ভোটারদের কাছে প্রচারে পাঠানো হবে। শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডের ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠনের কর্মীদের নিয়ে আলাদা করে বৈঠক করা হচ্ছে। শুভাশিসবাবু বলেন, “সুবক্তা ও স্বচ্ছভাবমূর্তি সম্পন্ন তরুণ ছেলেমেয়েদের আমরা খুঁজে নিচ্ছি। তাঁদের দিয়েই তরুণ ভোটারদের কাছে পৌঁছব আমরা।”
তবে গত লোকসভা ভোটে জেলার তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই যে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল, তা মানছেন তৃণমূল নেতৃত্বের অনেকে। আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগে তরুণ বা যুব প্রজন্মের মন ঘুরছে কি না, পুরভোটে তার একটা আভাস মিলতে পারে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। এ নিয়ে শুভাশিসবাবুর দাবি, “লোকসভা ভোটে বিজেপিকে বিশ্বাস করেছিলেন জেলার নবীনেরা। কিন্তু তা যে ভাঁওতাবাজি, তা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।”
সিপিএমও তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছতে দলের ছাত্র-যুব সংগঠন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফকে সামনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অজিত পতি বলেন, “দলের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতৃত্বকে নির্দেশ দিয়েছি, এলাকার তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে ছোট-ছোট ‘গ্রুপ’ তৈরি করে এলাকায় প্রচারে নামতে বলা হয়েছে।” অজিতবাবু জানান, ছাত্র-যুবদের কাছে দেশের সমস্যার কথা যেমন তুলে ধরা হচ্ছে, তেমনই এই পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেদের শহরকে কেমন দেখতে চাইছেন, তা-ও শোনা হবে।
গত লোকসভা নির্বাচনে যুব ভোটারদের যে সমর্থন বিজেপির দিকে গিয়েছিল, পুরভোটেও তা বজায় থাকবে বলেই দাবি করছে গেরুয়া শিবিরে। জেলা বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, দলীয় যে কোনও কর্মসূচিতে অল্পবয়স্কেরাই বেশি ভিড় করছেন। দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র বলেন, “রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় রয়েছে, পুরসভাও ওদেরই দখলে। অথচ, নগরোন্নয়ন যতটা হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি। তাই যুব সম্প্রদায় পুরসভার ভোট থেকেই রাজ্যে বদল আনার দায়িত্ব নেবেন।’’
যুবদের কাছে পৌঁছতে সমাজ-মাধ্যমেও বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দলগুলি। তৃণমূল সূত্রে খবর, বিধানসভা-ভিত্তিক ‘হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ’ তৈরি হয়েছে। পুর-এলাকাগুলি যে বিধানসভা ‘গ্রুপে’ থাকছে, সেখানে গত পাঁচ বছরে পুরসভাগুলিতে কী-কী কাজ করা হয়েছে, আগামী দিনে কী-কী পরিকল্পনা রয়েছে, তা তুলে ধরা হবে। ‘ফেসবুক’-এও যথারীতি প্রচার চালানো হবে।
সিপিএম নেতৃত্বও সংগঠনের ছাত্র-যুবদের জানিয়ে দিয়েছেন, ফেসবুক-বন্ধুদের দলের ‘পোস্ট’ যত বেশি সম্ভব ‘শেয়ার’ করতে হবে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সমাজ-মাধ্যমে প্রচারে তারা বরাবরই বিশেষ দড়। এ ছাড়া, তরুণ, যুবকদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারে রয়েছে আরএসএস প্রভাবিত কিছু ‘হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ’ও।
তবে তিন দল সূত্রেরই দাবি, ভোটারদের বড় অংশ অল্পবয়স্ক বলে, প্রার্থী বাছাইয়ে কমবয়সিদের প্রাধান্য দেওয়া হবে, এমন ভাবনা তাদের নেই। কারণ, তাঁরা মনে করেন মানুষ বয়স দেখে নয়, প্রার্থী কাজের লোক কি না, সেটাই বিবেচনা করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy