বিশ্বভারতীর প্রেস বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পর এ বার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিশানায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে আসা বিশ্বভারতীর একটি বিবৃতিতে বেনজির ভাবে লেখা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী কান দিয়ে দেখেন।’’ শুধু তাই নয়, ‘স্তাবকেরা’ যা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী তাই বিশ্বাস করেন এবং টিপ্পনিও করেন— এমন কথাও লেখা হয়েছে বিবৃতিতে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, বিশ্বভারতীর উপর মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদ না থাকলেও অসুবিধা নেই। কারণ, কর্তৃপক্ষ প্রধানমন্ত্রীর দেখানো পথে চলবেন। ওই বিবৃতির নীচে স্বাক্ষর রয়েছে মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক। তৃণমূল এই বিবৃতির তীব্র নিন্দা করেছে। দলের মুখপাত্র তাপস রায়ের মতে, এটা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিবৃতি নয়, মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলের বিবৃতি।
বীরভূম সফরে এসে মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার বার্তা দেন মমতা। সেখানকার সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়া, কয়েক জন অধ্যাপক ও আশ্রমিক দেখাও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অভাব-অভিযোগের কথা তাঁকে জানান। তার পরে মমতা বলেছিলেন, ‘‘যদি কেউ মনে করেন, পড়ুয়া-অধ্যাপক ও কর্মচারিবৃন্দকে ক্ষমতার জোরে মেরুকরণ, গৈরিকীকরণ করবার জন্য তাঁদের বুলডোজ় করবেন, তা হলে একটা লোকও যদি ওঁদের সঙ্গে না-থাকে আমি আছি।’’ কর্তৃপক্ষের ‘হৃদয়’ থাকলে ছাত্রছাত্রীদের এমন ‘হেনস্থা’র মুখে পড়তে হত না বলেও জানান মমতা।
মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পরেই বুধবার বিবৃতি প্রকাশ করল বিশ্বভারতী। মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বভারতী সম্পর্কে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ মন্তব্য করেছেন লেখার পাশাপাশি সেখানে এ-ও বলা হয়েছে, ‘‘বিশ্বভারতীতে এখন ৪৭৩ জন শিক্ষক, প্রায় ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রী এবং ৭৫০ জন কর্মচারী বন্ধু আছে। তার মধ্যে এক জন শিক্ষক এবং ছয় জন ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য শুনে তিনি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা) বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রমণ করলেন। এটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ তিনি কান দিয়ে দেখেন। যে অধ্যাপক সম্পর্কে বললেন যে তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে, এটা সর্বৈব ভুল। তাঁকে শাস্তির প্রস্তাব এবং এই প্রস্তাবটা নিয়ে ওই অধ্যাপক মামলা করেছেন। অতএব ব্যাপারটা বিচারাধীন। মাননীয় কোর্ট কোনও সিদ্ধান্ত দেয়নি। অতএব মুখ্যমন্ত্রী একটু বাড়াবাড়ি করলেন না কি?’’
পাঁচিল তোলা নিয়েও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে নিশানা করেছিলেন মমতা। তার পাল্টা বিশ্বভারতী লিখেছে, ‘‘ওঁর (মুখ্যমন্ত্রী) নিরাপত্তার জন্য বোলপুর শহরকে ঘিরে ফেলা হল। ওঁর বাসস্থান, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে কি দেওয়াল নেই?’’ ‘নিয়োগ-দুর্নীতি’ মামলায় শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীদের গ্রেফতারি নিয়েও কটাক্ষ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘‘আজ আপনার মনোনীত মন্ত্রী ও উপাচার্য গারদের ভিতরে। কী করে হল? কারণ আপনি স্তাবকদের কথা শুনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেই বিধ্বস্ত।’’ নাম না করে গরুপাচার মামলায় জেলবন্দি তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রসঙ্গ টেনে লেখা হয়েছে, ‘‘আপনার প্রিয় শিষ্য, যাঁকে না হলে আপনি বীরভূম ভাবতে পারতেন না। তিনিও জেলে। কবে বেরোবেন কেউ জানে না। আগে সাবধান করলে আপনি দুর্নাম থেকে বাঁচতে পারতেন।’’ শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গে টেনে ওই বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, ‘‘বিশ্বভারতী একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আপনার আশীর্বাদ না থাকলে আমাদের সুবিধা কারণ আমরা প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে চলতে অভ্যস্ত।’’
এই বিবৃতি প্রকাশ্যে আসতেই তার তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল। তাপসের কথায়, ‘‘বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠানের গরিমা ক্ষুণ্ণ করছেন শুধু নয়, কলঙ্কিত করছেন। যে ভাষায় ওই বিবৃতি লেখা হয়েছে, তা সীমা লঙ্ঘন করেছে। ওটা কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লেখা হতে পারে না। পড়ে মনে হচ্ছে কোনও রাজনৈতিক দল বিবৃতি প্রকাশ করে বিরোধীদের আক্রমণ করছে। এর তীব্র নিন্দা করছি।’’
বিষয়টির সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের অধ্যাপক-সাংসদ সৌগত রায়ও। তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় নিয়মেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম চলবে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের নিয়োগ নিয়ে এই ধরনের কথা কখনওই বলা যায় না। মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এই ধরনের মন্তব্য করার কোনও এক্তিয়ারও নেই তাঁদের।’’ সৌগতের মতে, বিশ্বভারতীর পড়ুয়ারা রাজ্যেরই নাগরিক। তাঁদের কথা শুনে ‘বেশ’ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনাচক্রে, বিশ্বভারতীর জমি বিতর্কের মধ্যে দিন কয়েক আগে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্যকে নিশানা করেছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। অধ্যাপক সেনকে বার তিনেক চিঠিও পাঠিয়েছে বিশ্বভারতী। চিঠি দিয়ে ১৩ ডেসিমেল জমি ফেরত চাওয়া হয়েছে। তা নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে সোমবার অমর্ত্যের বাড়ি যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। অধ্যাপকের পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছেন তিনি। এ বার বিশ্বভারতীর আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy