Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মিছিল ঘিরে গোলমাল 

 থমকে: বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কে ট্রাকের সারি। নিজস্ব চিত্র

থমকে: বিষ্ণুপুর-আরামবাগ রাজ্য সড়কে ট্রাকের সারি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জয়পুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৪
Share: Save:

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছিল তৃণমূল। তা থেকে রবিবার সকালে গোলমাল ছড়াল বাঁকুড়ার জয়পুরে। আগুনে আংশিক পুড়ে যায় কুম্ভস্থলের বিজেপি মণ্ডল কার্যালয়। পুলিশ গেলে তাদের উপরেও হামলার অভিযোগ ওঠে। হামলায় এক সিভিক কর্মীর মাথা ফাটে, হাত ভাঙে স্থানীয় কাঠ চেরাই কলের এক বয়স্ক কর্মীর। কয়েকটি বাড়িতেও ইট-পাটকেল ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে এ দিন ঘণ্টাখানেক বিষ্ণুপুর-আরামবাগ ২ নম্বর রাজ্য সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সীর দাবি, “উত্তেজিত জনতাকে সামাল দিতে গিয়ে এক সিভিক কর্মী মাথায় চোট পেয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।” তিনি জানান, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। গ্রেফতারির খবরও নেই।

পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল কর্মীরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির জয়পুর ১ মণ্ডলের সাধারণ সম্পাদক নবকুমার চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, ‘‘তৃণমূল কর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে যান চলাচল স্তব্ধ করে দিচ্ছে। অথচ পুলিশ চুপ করেছিল। তাতেই সাহস পেয়ে আমাদের পার্টি অফিসে ওরা আগুন দিয়েছে।’’ যদিও তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক সভাপতি শ্যামল সাঁতরা দাবি করেছেন, “জয়পুরে আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়েছে। তবে কুম্ভস্থলে এ দিন কী ঘটেছে আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, এ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকার মতোই জয়পুরে ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মিছিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কুম্ভস্থল থেকে মিছিল জয়পুরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মিছিল শুরুর পরেই কুম্ভস্থল এলাকায় কিছু লোকজন রাজ্য সড়কের উপরে কয়েকটি টায়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। অভিযোগ, সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের বিজেপি পার্টি অফিসে। টিনের ছাউনির অফিসের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সেই সময়ে কয়েক জন পুলিশ কর্মী পরিস্থিতি সামাল দিতে গেলে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। জয়পুর থানার এক সিভিক কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপরেই মুষ্টিমেয় পুলিশ কর্মীরা পিছু হটেন।

হামলা চলে আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও। তেমনই একটি কাঠচেরাই কলের কর্মী বৃদ্ধ বিদ্যুৎকুমার দে-র হাত হামলাকারীদের লাঠির ঘায়ে ভাঙে বলে অভিযোগ। তাঁকে জয়পুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। তাঁর অভিযোগ, ‘‘গোলমালের মধ্যে হঠাৎ দু’জন পুলিশ ছুটে এসে আমাদের কলের ভিতরে ঢুকে পড়েন। তাঁদের তাড়া করে কয়েকজন এসে লাঠি দিয়ে আমাকে মারতে শুরু করে। হাত জোড় করে অনুরোধ করি। কিন্তু লাঠি দিয়ে ওরা হাতটা ভেঙে দিল।’’

কুম্ভস্থলের বিজেপির অফিসের কাছে এক বাড়ির মালিক অভিযোগ করেন, ‘‘বিজেপির অফিস তখন জ্বলছে। হঠাৎ দরজা খুলে কিছু পুলিশ বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েন। তারপরেই কিছু লোকজন বাড়ির কাচের জানলা লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। তারপরে ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর চালায়।’’ এক সিভিক কর্মী একটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ায় সেখানেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে তার পরেই এলাকায় পৌঁছয় পুলিশ বাহিনী।

যদিও এসডিপিও দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশ পালায়নি। কোথাও লুকিয়ে থাকতেও হয়নি। উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে গিয়েই আক্রমণের মুখে পড়ে পুলিশ।’’ তিনি জানান, এই ঘটনার পরে জেলা প্রশাসনের অনুমতি না পাওয়া পর্যন্ত কোনও রাজনৈতিক দলকে পথসভা বা মিছিল করতে দেওয়া হবে না।

এ দিকে গোলমালের জেরে কুম্ভস্থলের দু’পাশে রাজ্য সড়কে ঘণ্টাখানেক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যার জেরে ভোগান্তির শিকার হন পথে বের হওয়া মানুষজন। কোতুলপুর থেকে মিঠু বাগদি তাঁর অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি বাড়ি ফিরে যান। আজ, সোমবার হাসপাতালে যাবেন বলে জানিয়েছেন। অন্য দিকে, কোতুলপুরের মির্জাপুর থেকে অমর দাস তাঁর আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। তিনিও ফিরে যান। ভোগান্তির শিকার হওয়া মানুষজন জানাচ্ছেন, তাঁরাও অনেকে নতুন নাগরিকত্ব আইন মানতে পারছেন না। কিন্তু তাঁদেরও তো এ দিন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হল। আন্দোলনের নামে এমন অশান্তি চলতে থাকলে, তা কি আন্দোলনেরই ক্ষতি করবে না— প্রশ্ন তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Citizenship Amendment Bill TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy