Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
নতুন জীবন রাজু-পুলিনের

হোম থেকেই পুলিশে চাকরি

আশ্রয়, পরিচয় এবং চাকরি—সৌজন্যে পুলিশ-প্রশাসন। পুলিন গিরি এবং রাজু রেড্ডি এখন পুলিশেরই ‘কর্মবন্ধু’।

পুলিন গিরি এবং রাজু রেড্ডি। নিজস্ব চিত্র

পুলিন গিরি এবং রাজু রেড্ডি। নিজস্ব চিত্র

রাজীব চট্টোপাধ্যায় 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩০
Share: Save:

আশ্রয়, পরিচয় এবং চাকরি—সৌজন্যে পুলিশ-প্রশাসন। পুলিন গিরি এবং রাজু রেড্ডি এখন পুলিশেরই ‘কর্মবন্ধু’।

বয়স যখন পাঁচ তখন ওঁদের মুর্শিদাবাদের বহরমপুরের রাস্তায় ঘোরাঘুরি করতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সেটা ১৯৮৪ সাল। পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে ঠাঁই হয় বহরমপুরের একটি হোমে। হোম কর্তৃপক্ষ নাম রাখেন দু’জনের। তার পর থেকে হোমেই কেটেছে ২৯ বছর। মাঝে ২০০৫ সালের মে মাসে রাজু এবং পুলিনকে বহরমপুরের হোম থেকে বাঁকুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে পাঠানো হয়েছিল। সেখানেই বড় হয়ে ওঠেন ওঁরা।

সরকারি বিধি অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়স হয়ে গেলে কোনও আবাসিককে শিশুদের হোমে রাখা যায় না। রাজু এবং পুলিনকে অবশ্য সে মেয়াদ ফুরনোর পরেও, বাঁকুড়ার হোমেই রাখা হয়। কারণ, তাঁদের কোনও গন্তব্য ছিল না। গত এপ্রিলে পুলিন এবং রাজুকে কাজ দেওয়ার জন্য হোম এবং জেলা শিশুকল্যাণ দফতরের তরফে অনুরোধ করা হয় বাঁকুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুখেন্দু হিরাকে। জেলার বেলিয়াতোড় এবং সোনামুখী থানার ‘কর্মবন্ধু’র পদ দু’টি তখন ফাঁকা ছিল। সেখানেই তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করে দেন সুখেন্দুবাবু। পুলিন সোনামুখীতে, রাজু বেলিয়াতোড়ে চাকরি পান। ফাইল এবং জল আনা থেকে শুরু করে রান্নায় সাহায্য— অনেক কাজের জন্যই এখন পুলিন এবং রাজুর উপর নির্ভর করেন দুই থানার পুলিশকর্মীরা। মাসিক বেতন তিন হাজার টাকা।

রাজু বলছেন, ‘‘এ জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন কোনও দিন দেখিনি। বাবা-মা কে, কোথায় বাড়ি তা জানি না। প্রশাসন আর পুলিশের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাঁরা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন।’’ পুলিনের কথায়, ‘‘পুলিশ আর হোমের দৌলতে নতুন জীবন পেয়েছি। এখন মনের সুখে কাজ করছি। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’’

দুই যুবকের কাজে খুশি দুই থানার অফিসারেরাও। সোনামুখী থানার এক অফিসারের কথায়, ‘‘অনেক কাজে পুলিনকে প্রয়োজন পড়ে। মাত্র কয়েকমাস কাজ করেই পুলিন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। ওর কাজে আমরা খুবই খুশি।’’ রাজু সম্পর্কে একই ধরনের প্রশংসা মিলেছে বেলিয়াতোড় থানার তরফে। সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘আমিও শুনেছি, ওঁরা খুব ভাল কাজ করছেন।’’ শিশুদের হোমের কোনও আবাসিকের থানায় কাজ পাওয়ার ঘটনা ‘বিরল’ বলে দাবি বাঁকুড়ার ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড প্রোটেকশন অফিসার পার্থ মণ্ডলের। তিনি বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য করেছিলাম, কাজের প্রতি ভীষণ উৎসাহ ছিল ওঁদের। নতুন কর্মস্থলে ওঁরা ভাল কাজ করছেন শুনে, আমাদেরও ভাল লাগছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Job Police Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE