Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

চারের ফারাক কিছু নয়, কৃতী ওরা দু’জনই

তারা দু’জনেই চেন্নাই সুপার কিংগসের ফ্যান। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ফ্যান দু’জনেই। দু’জনেই ভালবাসে রবীন্দ্র সঙ্গীত। মিল যেমন তাদের অনেক। রয়েছে অমিলও। ঠিক যেমন, মাত্র চার নম্বরের ফারাক হয়ে গেল দু’জনের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলে। তারা পারমিতা ও পরিমিতা মণ্ডল।

গর্বের হাসি। পরিমিতা ও পারমিতা। —নিজস্ব চিত্র।

গর্বের হাসি। পরিমিতা ও পারমিতা। —নিজস্ব চিত্র।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৫ ০২:১২
Share: Save:

তারা দু’জনেই চেন্নাই সুপার কিংগসের ফ্যান। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ফ্যান দু’জনেই। দু’জনেই ভালবাসে রবীন্দ্র সঙ্গীত।

মিল যেমন তাদের অনেক। রয়েছে অমিলও। ঠিক যেমন, মাত্র চার নম্বরের ফারাক হয়ে গেল দু’জনের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলে।

তারা পারমিতা ও পরিমিতা মণ্ডল। রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়া এই দুই ছাত্রী আসলে যমজ বোন। পারমিতার প্রাপ্ত নম্বর ৬৭৩ আর পরিমিতার প্রাপ্ত নম্বর ৬৬৯। দু’জনেই জেলার কৃতী ছাত্রছাত্রীদের তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে। এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় থেকেই এই যমজ বোনের প্রতি তাদের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অন্য সহপাঠীদের তো বটেই, শহরবাসীরও একটা আলাদা নজর ছিল। বীরভূম জেলা পুলিশের উদ্যোগে মহকুমা স্তরের ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, স্কুলের যুব সংসদ প্রতিযোগিতায় যেমন দুই বোনকে সব সময় অংশ নিতে দেখা যেত, তেমনই যে কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও এই যমজের যোগদান ‘মাস্ট’। বহু প্রতিযোগিতাতেই তারা পেয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা।

তাই শুক্রবার মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল ঘোষণা হতেই পারমিতা ও পরিমিতার রেজাল্ট জানতে অনেকেই সকাল থেকে কৌতূহলী হয়েছিলেন। দুই বোনের ফল সবাইকেই খুশি করেছে। চার নম্বরের ফারাক কিছুই নয়— বলছেন সকলে। রামপুরহাট জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনের জীবন বিজ্ঞান শিক্ষক মাধব মণ্ডলের দুই মেয়ে পারমিতা ও পরিমিতা তাদের এই সাফল্যের ক্ষেত্রে বাবার অবদানই সবচেয়ে বেশি বলে জানাচ্ছে। মাধববাবু এ দিন বলছিলেন, ‘‘কী ভাবে ভালো রেজাল্ট করা যায়, তার জন্য নবম শ্রেণি থেকে পরিকল্পনা করে দিয়েছিলাম। অঙ্ক ও ইংরেজির জন্য আলাদা শিক্ষক দেওয়া হয়েছিল। বাংলা, ভূগোল, ইতিহাস এই তিনটি বিষয়ের ক্ষেত্রে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি রেফারেন্স হিসাবে ইন্টারনেট দেখে আরও গভীর ভাবে জানতে ওদের সাহায্য করেছি।’’

এই দুই বোন অবশ্য কখনওই নিজেদেরকে পাঠ্যবইয়ের গণ্ডীতে আটকে রাখেনি। প্রতিদিন ইংরেজি, বাংলা মিলিয়ে চারখানা সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস রয়েছে পারমিতার। এ ছাড়াও বিভিন্ন ম্যাগাজিন পড়তে অভ্যস্ত সে। পরিমিতা বারা ইংরেজি, বাংলা, তামিল, তেলেগু— বিভিন্ন ভাষার আর্ট থেকে কর্মাশিয়াল ফিল্মের পোকা। পারমিতা যেমন ব্যোমকেশ বক্সী সিরিজের ফ্যান, পরিমিতার প্রিয় গোয়েন্দা তেমনই ফেলুদা। দু’জনেই খেলা পাগল। বিশেষ করে ক্রিকেটের। আইপিএল গোগ্রাসে গিলেছে দু’জনেই। দুই বোনই রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে ভজন শেখে। আবার নিজেদের রেসিপি অনুযায়ী মা গৌরী মণ্ডলের সঙ্গে রান্নার কাজে হাত লাগাতেও ভালোবাসে দু’জনেই। তবে, পারমিতার পছন্দ মটন বিরিয়ানি, আর পরিমিতার চিকেন বিরিয়ানি। চিকিৎসক হতে চায় অবশ্য দু’জনই। তাই এ বার তারা জিতেন্দ্রলাল বিদ্যাভবনে পড়বে।

দুই বোনের ভাল রেজাল্ট নিয়ে রামপুরহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ছায়া চট্টোপাধ্যায় কিন্তু আরও বেশি আশাবাদী ছিলেন। বললেন, ‘‘এর আগে দু’বছর স্কুল থেকে রাজ্যে অষ্টম, নবম হয়েছিল আমার স্কুলের ছাত্রীরা। এ বারও মাত্র এক নম্বরের জন্য এক থেকে দশের মধ্যে থাকতে পারল না পারমিতা। তবে দুই বোনই বরাবর পড়াশোনায় ভালো। মাঝখানে অসুস্থ হয়ে পড়ায় অসুবিধার মধ্যে পড়েও দারুণ ফল করেছে। আগামী দিনে ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করি।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE