Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

রাতে বারান্দা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আদিবাসী কিশোরীকে খুন লোকপুরে

বছর সতেরোর ওই কিশোরী আত্মীয়-পরিজন এবং গ্রামবাসীদের একাংশ মনে করছেন, খুনের আগে মেয়েটির উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে।

গ্রামে তদন্তে পুলিশ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে তদন্তে পুলিশ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লোকপুর শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০২
Share: Save:

বাড়ি থেকে কিছু দূরে ঝোপের ভিতরে এক আদিবাসী কিশোরীর দেহ মিলল। মা-বাবার সঙ্গে বাড়ির বারান্দায় ঘুমিয়েছিল ওই কিশোরী। দরজাহীন বারান্দা থেকেই রাতের অন্ধকারে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে খুন করেছে বলে পরিবারের অভিযোগ।

লোকপুর থানা এলাকার একটি গ্রামে ওই ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে পরিবারের তরফে শুধু খুনের উল্লেখ থাকলেও বছর সতেরোর ওই কিশোরী আত্মীয়-পরিজন এবং গ্রামবাসীদের একাংশ মনে করছেন, খুনের আগে মেয়েটির উপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। তাঁদের দাবি, দেহ উদ্ধারের সময় নাবালিকার শরীরের নিম্নাংশ অনাবৃত ছিল। দেহের কাছে মাটিতে ধস্তাধস্তির চিহ্নও ছিল। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঠিক কী ঘটেছে, তা ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার আগে বলা সম্ভব নয়। তবে সব সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, যে গ্রামে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটির অবস্থান খয়রাশোলের লোকপুর থানা এলাকার নাকড়াকোন্দা পঞ্চায়েতের পুরানো বক্রেশ্বরের কাছে। জঙ্গল লাগোয়া প্রান্তিক আদিবাসী গ্রামটিতে বসবাস করে মাত্র ৩৬টি পরিবার। গ্রাম ঢুকে কয়েকটি বাড়ি পরেই রাস্তার ডান দিকে নিহত কিশোরীর পরিবারের বাস। দুই মেয়েকেই হারিয়ে বুধবার সকাল থেকে ওই পরিবারে শোকের ছায়া। সকাল ৯টা নাগাদ গ্রামে পৌঁছে দেখা গেল দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। ঘটনার তদন্তে এসেছেন জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর) কাশীনাথ মিস্ত্রি, লোকপুর থানার ওসি নীলোৎপল মিশ্র।

নিহত কিশোরীর মা-বাবা জানিয়েছেন, তাঁদের বাড়ির ঠিক পাশেই রয়েছে পুরনো বক্রেশ্বর। সেখানে প্রতি বছর কালী পুজোর দিন খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। মঙ্গলবার রাতে গ্রামের সকলের সঙ্গে সেখানেই গিয়েছিল তাঁদের নাবালিকা মেয়ে। আসতে আসতে রাত সাড়ে দশটা বেজেছিল। তার পর পুকুর থেকে হাত মুখ ধুয়ে যখন বাবা-মায়ের পাশে শোয়, তখন রাত ১১টা। কিশোরীর মা বলেন, ‘‘তার পরে সকলেই ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে উঠে দেখি মেয়ে পাশে নেই। ভেবেছিলাম ফের পুকুরে গিয়েছে। তখনও জানি না, আমাদের বাড়ির উল্টো দিকে ঘরের ফাঁকা উঠোনের পেরিয়ে ঝোপের মধ্যে মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে।’’ প্রতিবেশীরাই প্রথম দেহ দেখতে পেয়ে ওই পরিবারে খবর দেন। মেয়েটির মায়ের আক্ষেপ, ‘‘গত বছর অসুস্থ হয়ে আমার বড় মেয়ে মারা গিয়েছে। এ বার ছোটটাও গেল। কী করে যে আমাদের পাশ থেকে ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলল, টেরই পেলাম না!’’

যৌন নির্যাতন করে খুন করা হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারে কিশোরীর বাবা-মা মুখ খুলতে চাননি। ওই মেয়ের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না বলে দাবি তাঁদের। তবে পাড়ার লোকজন ও পরিজনদের একাংশ মনে করছেন, মঙ্গলবার রাতে কালীপুজোর খিচুড়ি খেতে যাওয়া থেকেই কেউ নিশ্চয় মেয়েটির পিছু নিয়েছিল। পরিচিত কেউও হতে পারে। এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের পাশের রাস্তা কয়লা পাচারের
করিডর। সেই সূত্র ধরে দিন ও রাতে প্রচুর সংখ্যায় বহিরাগতদের যাতায়াত রয়েছে গ্রামে। গ্রামবাসীদের কেউ কেউ দাবি করছেন, তেমন কোনও বহিরাগত দুষ্কৃতীর হাতও থাকতে পারে ঘটনার পিছনে। খুনের পিছনে প্রকৃত কারণ ঠিক কী, সেটাই তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Abduction Tribal Community
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE