তিওয়ারি কালী। নিজস্ব চিত্র
কার্তিকের অমাবস্যার রাতে কালী পুজোর মন্ত্রে গমগম করে মিরপুর পাড়া। রাজনগরের ১৮ পাড়ার গ্রাম তাঁতিপাড়ার অন্যতম মিরপুর। কেউ কেউ বলেন কাঁকুড়ডাঙাল। সেই পাড়ায় শতাব্দীপ্রাচীন তিওয়ারি কালীর পুজোকে ঘিরে এমন ছবি দেখা যায় প্রতি বছরই।
শনিবার কালীপুজোর আগের দিন সকালে ওই গ্রামে তিওয়ারি কালীমন্দিরে প্রতিমা গড়ার কাজে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। আয়োজকেরা জানান, রবিবার কালীপুজোর দিন দুপুরে প্রতিমাকে বেদিতে তোলার আগে গয়না পরানো হবে। যে গয়না পরানো হয় তা সবই সোনা বা রূপোর। তার পরেই পুজোয় মেতে উঠবেন ওই পাড়া তথা গোটা গ্রামের আট থেকে আশি।
গ্রামবাসী ও পুজো কমিটির সদস্যরা জানান, আড়াইশো থেকে তিনশো বছর আগে গুজরাত থেকে ওই জঙ্গলাকীর্ণ জনপদে এসেছিলেন এক সাধু। তাঁকে সবাই তিওয়ারি সাধু বলেই চিনতেন। তিনি অধিকাংশ সময় সাধনা করার জন্য কাছেই বক্রেশ্বর মহাশ্মশানে থাকতেন। শ্মশান থেকে প্রতি অমাবস্যায় একটি করে মড়ার খুলি নিয়ে আসতেন মিরপুরে। ১০৮টি খুলি জোগাড় করার পরে তিনি গ্রামে কালীপুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। তিওয়ারি সাধুর প্রতিষ্ঠিত সেই কালীই এখন সর্বজনীন।
আরও পড়ুন:আধাআধি মুখ্যমন্ত্রিত্ব চেয়ে বিজেপিকে চাপে ফেলল শিবসেনা, চাইল লিখিত প্রতিশ্রুতিও
পুজো কমিটির সভাপতি বাসুদেব দাস, সম্পাদক প্রভাকর দাস, সদস্য পলাশ গুঁই বলছেন, ‘‘ঠিক কোন সময়ে কালীপুজোর শুরু সেটা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। বংশপরম্পরায় প্রবীণদের কাছ থেকে সাধু প্রতিষ্ঠিত কালীপুজো নিয়ে অনেক লোকগাঁথা শোনা যায়।’’
কমিটির সভাপতি বাসুদেব দাস বলছেন, ‘‘একসময় মূর্তি তৈরি এবং ব্রাহ্মণদের দক্ষিণা দেওয়ার পয়সা ছিল না। কিন্তু এক মৃৎশিল্পী মন্দিরে এসে জানিয়ে দেন, তিনি যত দিন বাঁচবেন বিনা পারিশ্রমিকে মূর্তি গড়বেন।’’ বাসুদেববাবু আরও জানান, বর্তমানে যে শিল্পী মূর্তি গড়েন তিনিও কোনও পারিশ্রমিক নেন না।
একই পরিস্থিতি পুরোহিত, ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেও। বহুকাল আগে দক্ষিণা না পেলে ওই পুজো করবেন না বলে স্থির করেছিলেন গ্রামেরই তিন ব্রাহ্মণ। কিন্তু গ্রামের অন্য পুজো সেরে বাড়ি ফেরার সময় কোনও কারণে ওই পুজোয় ফিরে যেতে বাধ্য হন তাঁরা। সেই থেকে পুজো করলেও কোনও পুরোহিত দক্ষিণা নিয়ে কোনও দাবি রাখেন না।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, পুজো ঘিরে আবেগ এতটাই যে গোটা পাড়ার শ’খানেক পরিবারের মিলিত দানে খড়ের ছাউনি, তাল গাছের খুঁটি দিয়ে তৈরি মন্দির বদলে টিনের ছাউনি, মাটির দেওয়াল ঘেরা মন্দির তৈরি হয়েছিল। এখন তা ঢাকা হয়েছে মার্বেল পাথরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে বেদী অক্ষুণ্ণ রেখে নতুন মন্দির গড়তে যাওয়ার সময় ভিত খুঁড়তে গিয়ে অনেক হাড়গোড় উদ্ধার হয়। গ্রামের যে কোনও শুভ কাজের আগেই দেবীর পুজো হয়। পাড়ার এক বাসিন্দা শুধু কার্তিকের অমাবস্যায় নয়, অগ্রহায়নেও তিওয়ারি কালীর মূর্তি গড়ে পুজো করেন। তবে এই সময় ধূম হয় বেশি।
‘‘মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে উপবাসে থাকেন। পুজোর টানে বাপের বাড়িতে ফেরেন বিবাহিত মেয়েরাও’’— বলছিলেন স্থানীয় গৃহবধূ চুমকি মণ্ডল, ঝুমা দাস, ইন্দ্রাণী দাস, কাকলি শীলেরা।
পুজো কমিটি জানিয়েছে, আগে পাড়ার যিনি মোড়ল থাকতেন, তাঁরই দায়িত্বে থাকত পুজো। এখন রীতিমতো কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তবে যে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হতো তা অক্ষুণ্ণ রয়েছে। কালীপুজোর আট দিন অর্থাৎ অষ্টমঙ্গলায় পংক্তিভোজ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy