ধৃতকে তোলা হচ্ছে আদালতে। —নিজস্ব চিত্র
মদ খেয়ে বাড়িতে ঢুকে অশান্তি, বাবা মাকে মারধর করা তো ছিলই। তার সঙ্গে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছিল বাড়ির সম্পত্তি লিখিয়ে দেওয়ার আবদার। বাঁকুড়ার ইঁদপুর থানার ছাতাপুর গ্রামের যুবক রাজেশ পাত্র খুনের ঘটনার পিছনে এই দু’টি কারণই রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে দাবি করছে পুলিশ।
শনিবার সকালে নিজের বাড়ির ছাদে ওই যুবকের রক্তাক্ত মৃতদেহ মেলে। তাঁকে খুনের অভিযোগে বাবা বিশ্বজিৎ পাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় তাদের কাছে খুনের কথা কবুল করেছেন নিহতের বাবা। কারণ হিসেবে ছেলের মদ্যপ আচরণ এবং তাঁকে জমি-বাড়ি লিখিয়ে দেওয়ার জন্য ক্রমাগত চাপ দেওয়ার কথা পুলিশের কাছে দাবি করেছেন তিনি। নিতান্ত বাধ্য হয়ে ছেলেকে পৃথিবী থেকে একেবারে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন বলে বিশ্বজিৎবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ঘুমন্ত অবস্থায় রাজেশকে যে তাঁর বাবা ইঁট দিয়ে মাথা থেঁতলে, কুড়ল দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছেন তা প্রাথমিক জেরায় স্বীকার করেছেন। খুনের পিছনে মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ঢুকে প্রিয়জনদের উপরে অত্যাচার ও সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আরও জেরার জন্য ধৃত বিশ্বজিৎবাবুকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।”
পড়শিরা জানাচ্ছেন, বিশ্বজিৎবাবুই তাঁদের ছেলের মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন। কিন্তু রাজেশের এই রহস্যজনক মৃত্যুর পরেও তাঁর বাবা-মায়ের আচরণ নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয় পড়শিদের মধ্যে। পুলিশ এলে তাঁরা দেহ তুলতে বাধা দেন। এলাকার বাসিন্দারা পুলিশ কুকুর নিয়ে এসে তদন্তের দাবিতে পুলিশকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান। পরে বাসিন্দাদের দাবি মেনে দুর্গাপুর থেকে পুলিশ কুকুর আনা হয়। পুলিশ কুকুর এসে মৃতদেহ শুঁকে বাড়ির মধ্যে ঢুকে যায়। তারপর বাড়ির পাশে পুকুরে নেমে যায়। তবে তার আগেই পুলিশের জেরায় ছেলেকে খুনের কথা স্বীকার করে নেন নিহতের বাবা।
রাজেশকে যে তাঁর স্বামী খুন করেছেন তা রবিবারও মেনে নিতে পারছেন না নিহতের সৎমা কবিতা পাত্র। রবিবার তিনি দাবি করেন, রাজেশ মাঝে-মধ্যেই অন্য জায়গায় কাজে চলে যেতেন। ৩-৪ মাস পরে গ্রামে ফিরে এসে টুকিটাকি ব্যবসা করতেন। আর প্রচুর পরিমাণে মদ খেয়ে বাড়িতে অশান্তি করতেন। এমনকী বাবা ও মাকে মারধর পর্যন্তও করেছেন। তবে কয়েকদিন ধরে রাজেশ বাবাকে বিঘে দুয়েক জমি ও বাড়িটুকু তার নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এটা নিয়েও বাড়িতে অশান্তি হচ্ছিল। শুক্রবার রাতে মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক অশান্তি করেন রাজেশ। এরপর রাতে বাড়ির চিলেকোঠার ছাদে শুতে চলে যান। কবিতাদেবীর দাবি, “রাতে আমি নীচের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। এতবড় ঘটনার বিন্দুবিসর্গ আমি জানতে পারিনি। জানলে অবশ্যই আমি বাধা দিতাম। শনিবার সকালে ঘটনাটি জানতে পারি।”
শনিবার রাতেই রাজেশের এক মামিমা অঞ্জনা লায়েক পুলিশের কাছে বিশ্বজিৎবাবুর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। রবিবার ধৃতকে খাতড়া মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক চারদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, খুনের কারণ মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার গভীর রাতে ছাদে উঠে ঘুমন্ত রাজেশের মাথা প্রথমে ইঁট দিয়ে থেঁতলানোর পর কুড়ুল দিয়ে কোপানো হয়েছে। খুনে ব্যবহৃত কুড়ুলটি অবশ্য এখনও উদ্ধার করা যায়নি। সেটি উদ্ধারের জন্য বাড়ির পাশে পুকুরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy