চিন্তায় সিউড়ী পৌরসভা। — ফাইল চিত্র।
বকেয়া করের পরিমাণ ২ কোটি টাকারও বেশি। অথচ বারবার চাওয়া সত্ত্বেও মিলছে না করের টাকা। কর্মীদের মাইনে দিতে সমস্যায় পড়ছে সিউড়ি পুরসভা। কোনও ব্যক্তি মালিকের বিরুদ্ধে নয়, এই কর বাকি রাখার অভিযোগ উঠেছে সরকারি দফতরগুলির বিরুদ্ধে। পুরপ্রধান প্রণব কর জানাচ্ছেন, এর ফলে এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষেত্রেও অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, জেলাশাসকের দফতর, জেলা পুলিশ সুপারের দফতর, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর-সহ সিউড়ি পুর এলাকার অধীনে থাকা বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে সিউড়ি পুরসভার পাওনা করের বর্তমান পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ১৫ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা। পুরসভার অভিযোগ বারবার দফতরগুলিতে জানানো সত্ত্বেও মিলছে না প্রাপ্য টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী পুরসভা এলাকায় থাকা এই ভবনগুলিকে প্রতি তিন মাস অন্তর নির্দিষ্ট অর্থ দিতে হয় সিউড়ি পুরসভাকে। কিন্তু সিউড়ি পুরসভার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষের শেষ পর্যন্ত জেলা পুলিশ সুপারের দফতর থেকে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ৬৩ লক্ষ ৪৮ হাজার ৫১০ টাকা। জেলাশাসকের দফতর অর্থাৎ প্রশাসন ভবন থেকে পাওনা রয়েছে ২৬ লক্ষ ৮১ হাজার ১২৪ টাকা। সার্কিট হাউসের বকেয়া কর ১৬ লক্ষ ১২ হাজার ৮০ টাকা। বিদ্যুৎ দফতর থেকে প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ ১৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৬৩২ টাকা। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতরেরও ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৪০ টাকা কর বাকি রয়েছে। এ ছাড়াও তালিকায় রয়েছে আদালত, বীরভূম জেলা স্কুল, সংখ্যালঘু দফতর, প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, মাধ্যমিক স্কুল বোর্ড, সেচ দফতর, বন দফতর সহ একাধিক সরকারি দফতর।
বিপুল পরিমাণ কর বাকি থাকায় পুরসভার কর্মীদের মাইনে, গ্র্যাচুইটি ও পেনশন দিতে প্রবল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে দাবি করেন পুরপ্রধান প্রণব কর। তিনি বলেন, “পুরসভার স্থায়ী কর্মীদের বেতনের ১৫ শতাংশ, গ্র্যাচুইটির ১০০ শতাংশ ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশনের ৬০ শতাংশ টাকা পুরসভাকে কর বাবদ প্রাপ্ত টাকা থেকেই দিতে হয়। এ ছাড়াও নতুন করে সিউড়ি পুরসভা এলাকায় প্রায় ২৯ হাজার নাগরিক যোগ হয়েছেন। তাঁদের কাছে নাগরিক পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্যও এই বকেয়া অর্থ পাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।” রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকেও এই বিষয়ে জানান হয়েছে বলে জানান পুরপ্রধান।
কর বাকি থাকার কথা স্বীকার করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান প্রলয় নায়েক। তিনি বলেন, “পুরসভার কর তো বকেয়া আছেই। সেই সঙ্গে বিদ্যুৎ বিল, কিছু বিদ্যালয়ের বাড়ি ভাড়া-সহ নানা খাতেই বকেয়া আছে। যেমন যেমন দফতর টাকা পাঠাবে, সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে টাকা মেটানো হচ্ছে।” জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “করের টাকায় বেশ কিছু কাজ পুরসভাকে করতে হয়, এটা ঠিকই। কিন্তু নির্দিষ্ট খাতে টাকা না এলে পুরসভাকে সেটা দেওয়া সম্ভব নয়। বকেয়া কর মেটাতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টাকা এলেই কর মেটানো হবে।”অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল: কোনও বার আলুতে প্রচুর লাভ পান চাষিরা। কোনও বছর আবার চাষ করেও ঘর থেকে টাকা বেরিয়ে যায়। আলু চাষের সঙ্গে তাই জড়িয়ে থাকে ঝুঁকি। ক্ষতি সামলাতে আলুর দাম ন্যূনতম কুইন্টাল প্রতি হাজার টাকা করার দাবি উঠেছে।
গত বছর এমন সময় আলুর দাম ছিল ১৫০০ টাকা কুইন্টাল। আলু তোলার মরসুমে ওই দামে আলু বেচে ভালই আয় হয়েছিল চাষিদের। গত বছর প্রথম থেকেই বাজারে খুচরো আলুর দামও ছিল নাগালের বাইরে। ২৫-৩০ টাকা কিলো দরে আলু কিনে হয়য়রান হয়েছিলেন আমজনতা। তার আগের বছর করোনা আবহে মাঠ থেকে আলু বিক্রি হয়েছিল ৭০০-৮০০ টাকা কুইন্টাল। সে বারেও চাষিদের লাভ হয়েছিল। কিন্তু এ বার প্রথম থেকেই উল্টো চিত্র। নতুন আলুর দাম নিম্নমুখী। তাতেই মাথায় হাত চাষিদের।
আলু চাষে একেবারেই ফাটকা লাভ। কোনও বছর ক্ষতি তো পরের বছর পুষিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বছর বছর আলু চাষ করেই চাষিদের অভিজ্ঞতা এমনই। শত বাধা, ঝুঁকির পরেও তাই জেলার একটা বড় অংশের চাষি আলু চাষের সঙ্গে যুক্ত। চাষিরা জানালেন, গত বছর প্রথম দিকে আলুর দাম বেশি থাকলেও পুজোর পরে দাম কমতে শুরু করে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে পুরনো আলু ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মজুত ছিল। আরও বেশি লাভের জন্য অনেকেই আলু মজুত করে রেখেছিলেন। কিন্তু শেষে আর লাভ পাননি চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
সব পণ্যের মতোই আলুর দাম নির্ভর করছে মূলত চাহিদার উপর, উৎপদান কেমন হয়েছে তার উপর। এখানকার আলুর ভিন্ রাজ্যেও কদর আছে। প্রতি বছর বিহার, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডে আলু যায়। স্বভাবতই চাহিদা বেশি থাকলে আলুর দাম বেশি থাকে। কিন্তু এ বছর ভিন্ রাজ্যে আলুর চাহিদা তুলনায় কম। উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাবে ভাল পরিমাণ আলু চাষ হয়েছে। ফলনও ভাল। তাই এ রাজ্যের আলু ভিন্ রাজ্যে কম যাচ্ছে। এতদিন হিমঘরও বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে দাম ওঠা-নামা করছে।
হিমঘর খুলতেই অবশ্য দাম বাড়তে শুরু করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের তরফে বরুণ পণ্ডিত বলেন, “সবে হিমঘর খুলেছে। ভিন্ রাজ্যেও আলু যেতে শুরু করেছে। তবে আলুর ভবিষ্যৎ এ বার ঠিক কী হবে,তা এখনই বলা যাবে না।”
এই অনিশ্চয়তার জন্য আলুর বর্ধিত দামের দাবি তুলেছেন চাষিরা। ঘাটালের পাঁচঘোড়ার আলু চাষি নেপাল গুছাইত বলছিলেন, “আলু চাষে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে, সেখানে দাম প্রতি কুইন্টাল ন্যূনতম হাজার টাকা করতে হবে। তবেই দু’পয়সা পকেটে ঢুকবে।” পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, “রাজ্য সরকার সাড়ে ছ’শো টাকা দরে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেছে। সেই মতো জেলায় আলু কেনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রচার চলছে। বিডিও অফিসে নাম নথিভুক্ত করানোর কথা বলা হচ্ছে।” জেলাশাসক আরও জানাচ্ছেন, চাষিরা খোলা বাজারে আলু বিক্রি করতেই পারেন। কিন্তু কেউ চাইলে সরকারি মূল্যেও আলু বিক্রি করতে পারেন। হিমঘরগুলিতে সরকারি দরে আলু কেনা চলছে। (শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy