শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়ের জন্মদিনে অকপট মহুয়া দত্ত। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আপনাদের শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, আমার অপু। সম্ভবত তখন ওর বিয়ের ইচ্ছে জেগেছে। আমার এক দিদির বাড়িতে চায়ের জন্য আমন্ত্রণ করা হয়েছিল আমাকে। ওকেও ডাকা হয়েছিল। প্রথম সাক্ষাতেই আমাকে রঙ্গ-ব্যঙ্গে নাস্তানাবুদ করে তুলেছিল। কারণ, আমি স্বাস্থ্যবতী। খুব বিরক্ত হয়েছিলাম। পরে নিজেই যেচে দিদির থেকে আমার ফোন নম্বর নেয়। সেই শুরু। সেই সময় মুঠোফোন আসেনি। ল্যান্ডফোন ভরসা। অপু বাইরে শুটিংয়ে ব্যস্ত। দেখা করা বা কিছু বলার থাকলে ‘বাপি’ মানে শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়কে বলতাম। তিনি ফোন করে অপুকে খবর পৌঁছে দিতেন। বরাবর শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে আমার খুব ভাব। দেখতেও তিনি তখন দুর্দান্ত।
এ দিকে, আমার বাড়িতে কেউ কিছুই জানে না। একটা সময়ের পর বাপি আমার বাবাকে ফোন করলেন। আমার বাবা ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। তিনি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়— কিছুই খোঁজ রাখেন না। মা জানতেন। ফোনের ও পারে বাপির ভরাট গলা, “নমস্কার। আমি ডা. শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় বলছি। এক দিন আমাদের বাড়িতে আসুন।” বাবা আকাশ থেকে পড়তে পড়তে সৌজন্যরক্ষা করেছিলেন। আমি বরাবর স্বাধীনচেতা। চাকরি করি, চাহিদাও কম। ফলে, আমার তত ভয়ডর নেই। কিন্তু পরিবারের বাকিরা যেমন, বাবা-কাকা, কাকিমারা একটু হলেও ভয় পেয়েছিলেন। অভিনেতা পরিবারে বিয়ে। কেমন হবে, কে জানে! পরে বাবা তো জামাইয়ের অন্ধ ভক্ত হয়ে গেল। অপুও বলে, “মেয়ে নয়, আগে শ্বশুরমশাই আমাকে পছন্দ করেছেন।”
আজ বলতে দ্বিধা নেই, বিয়ের পর প্রথম প্রথম আমারও ভয় করত। যতই চেনাজানা থাক, একসঙ্গে না থাকলে কি কাউকে বোঝা সম্ভব? তার উপরে চার পাশে সুন্দরীদের আনাগোনা। সেই সময় আমাকে বেগ দিতে অনেকে ইচ্ছে করে অপুর গা ঘেঁষত। দেখে অস্বস্তিতে যে হত না, তা নয়। শ্বশুরমশাই সেই সময় আমাকে সাহস দিয়ে বলতেন, “এগুলো সবই অভিনয়, কোনওটাই সত্য নয়।” ধীরে ধীরে ব্যাপারটা বুঝলাম। আমাকে দেখিয়ে সবটা করা হচ্ছে। সে দিন থেকে আমার জড়তা, অস্বস্তি, ভয় কেটে গেল।
আমারও বিনোদন দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় হল। বন্ধুত্ব হল কিছু মানুষের সঙ্গে। যেমন, রাইমা সেন কিংবা নীলাঞ্জনা সেনগুপ্ত। দেখা হলেই গল্পে মেতে যাই আমরা। পেশায় শিক্ষিকা আমি। নিজের জগৎ রয়েছে। সব মিলিয়ে ধীরে ধীরে সবটাই তখন স্বাভাবিক।
কিন্তু বদলে গেল আমার স্কুলের বন্ধুরা! যাদের সঙ্গে স্কুলে পড়েছি তারা কী রকম ব্যঙ্গের নজরে আমাকে দেখতে লাগল। আমি ‘সেলেব্রিটি’, এ রকম তকমা দিয়ে সারা ক্ষণ ঠাট্টা করত। ধীরে ধীরে ওদের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। আমার খারাপ লেগেছিল, ওরা তো আমাকে ছোট থেকে চেনে! তার পর থেকেই বাছাই করে বন্ধুত্ব করতে শুরু করলাম। কলেজের সহকর্মীরাও কেউ কেউ এই ধরনের আচরণ করেন। আমি এই ধরনের মানুষদের নিজের থেকে দূরেই রাখি। আমার বন্ধুও তাই হাতেগোনা।
বিয়ের একেবারে শুরুতে অপু পায়ের নীচের মাটি শক্ত করার জন্য লড়ছে। এমনও হয়েছে, কোনও ছবিতে অভিনয়ের ডাক পেয়েছে। পরে সেই ছবি থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে। কারও সামনে অপু কখনও ভেঙে পড়েনি। উল্টে সারা ক্ষণ হাসি-ঠাট্টায় মেতে থাকত। এটা ওর বাইরের রূপ। অন্তরে ভীষণ চাপা। নিজের অনুভূতি ঠিক মতো বোঝাতে পারে না। ওকে বুঝে নিতে হয়। আর চাঁছাছোলা রসিকতা, ধারালো কথা। কত বার যে ওকে সামলাতে হয়েছে। আবার অপুও আমাকে সামলায়। এ ভাবেই এতগুলো বছর কাটিয়ে ফেললাম আমরা।
অনেকেই জানতে চান, অভিনেতারা কি বাস্তব জীবনেও অভিনয় করেন? আমি বলব, একেবারেই না। আর অপু তো নয়ই। হালে ফোন নিয়েছে। সেটা যত্রতত্র ফেলে রাখে। কথায় আগল নেই। তথাকথিত ‘রোম্যান্টিসিজ়ম’ নেই। যখন-তখন চূড়ান্ত রসিকতায় মাতে। এই আপনাদের শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। যে আজ পর্যন্ত বাজার করতে শেখেনি। হাতের কাছে সব গুছিয়ে দিতে হয়। খেতে ভালবাসে। বেচারা শরীর ঠিক রাখতে মন ভরে খেতেও পারে না। কেবল কোথাও থেকে আমার ফিরতে রাত হলে, একটা ফোন করবে। অর্থাৎ, ভিতরে ভিতরে উদ্বিগ্ন। একই উদ্বেগ মেয়েকে নিয়েও। হিয়া বড় হয়েছে। গানের অনুষ্ঠান শুনে হয়তো রাত করল ফিরতে। যত ক্ষণ না ফেরে দুশ্চিন্তায় ছটফট করবে। আমার কাছে হয়তো অনুযোগ জানাতে থাকে। মেয়ে সামনে দাঁড়ালেই গলে জল! আর হ্যাঁ, রেগেও যায়। তখন মুখে কুলুপ।
আপনারাই বলুন, এমন মানুষের প্রেমে পড়বেন কোনও মহিলা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy