কয়েক মাস ধরে পাচ্ছেন না বার্ধক্য ভাতা। আতান্তরে বয়স্করা। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রায় চার মাস বন্ধ বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতা। তার জেরেই ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়েছেন প্রাপকদের একটা বড় অংশ। সংশ্লিষ্ট ব্লক বা পুরসভায় গিয়েও কোনও সদুত্তর মিলছে না বলে অভিযোগ। যদিও প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, কোনও একটি ব্লক বা পুরসভায় নয়, গোটা রাজ্যেই এই সমস্যা রয়েছে। তাঁদের আশ্বাস, যাঁরা ইতিমধ্যেই নথিভুক্ত আছেন তাঁদের টাকা কিছুদিনের মধ্যেই ঢুকে যাবে। কিন্তু নতুন করা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া এখন বন্ধ রয়েছে বলেও জানালেন প্রশাসনের এক আধিকারিক।
এত দিন বার্ধক্য ভাতা বা বিধবা ভাতা বাবদ প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে পেতেন নথিভুক্ত হওয়া সকলেই। মাঝে কয়েকবার টাকা ঢুকতে দু-এক মাস দেরি হলেও তা ঢুকে গিয়েছে৷ কিন্তু এ বার পরিস্থিতি অন্য রকম৷ প্রবীণেরা জানাচ্ছেন, অগস্ট মাসের পর আর প্রাপ্য টাকা পাননি কেউই। অগস্টের টাকা ঢুকেছিল অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে। তারপর থেকে বন্ধ টাকা ঢোকা। বয়স্ক নাগরিকেরা বলছেন, এই টাকার উপরে অনেকেরই মাসের ওষুধ বা মাসকাবারি জিনিসের খরচ নির্ভর করে৷ ফলে টাকা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুবই সমস্যার মুখে পড়েছেন তাঁরা৷
সিউড়ি পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দাশিরা বিবি বললেন, “আট বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। তার পর থেকেই এই টাকা পেতাম৷ আমার ছেলের আলাদা সংসার আছে। আমার সব খরচ দেওয়া তার পক্ষে সম্ভবও না।’’ দাশিরার কথায়, ‘‘ওই টাকায় আমার ওষুধ আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতাম৷ এখন কী ভাবে টাকা পাব বুঝতে পারছি না।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘ব্যাঙ্কে গিয়ে বা পুর প্রতিনিধির কাছে গিয়েও কোনও লাভ হয় না, ওরা কিছুই ঠিক করে উত্তর দেয় না।’’
একই সমস্যা ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার শেফালি বাগদি, ডাঙাপাড়ার মহামায়া ধীবরদের পরিবারে। তাঁরা জানালেন, তাঁদের পরিবারে কেউই উপার্জনক্ষম নেই। গৃহপরিচারিকার কাজ আর বার্ধক্য ভাতার টাকাটুকুর উপরে নির্ভর করেই তাঁদের সংসার চলে, ওষুধ কেনা হয়। তাঁদের ক্ষোভ, ‘‘গত চার মাস ধরে ব্যাঙ্কে যাই আর ঘুরে আসি। ধারদেনা করে, চরম কষ্টে দিন চলছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে জেলায় নথিভুক্ত হওয়া বার্ধক্য ভাতা প্রাপকের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬ হাজার ৫০৭ জন। জেলায় বিধবা ভাতা পান ৮৭ হাজার ৪০৯ জন। এ ছাড়াও প্রতিবন্ধীদের জন্য যে মানবিক ভাতা রয়েছে, তা পান ৪০ হাজার ৬৩ জন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের নথিভুক্ত প্রাপকের সংখ্যা ৮ লক্ষ ৮৭ হাজার ২৯৭ জন। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানালেন, ‘‘এগুলির মধ্যে শুধুমাত্র লক্ষ্মীর ভান্ডার ও মানবিক পোর্টালে নতুন করে নথিভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। বার্ধক্য ভাতা ও বিধবা ভাতার ক্ষেত্রে নতুন নাম নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া এখন বন্ধ।’’
কিন্তু যাঁরা নথিভুক্ত আছেন, তাঁরা টাকা পাচ্ছেন না কেন, সেই উত্তর রাজ্য সরকার দিতে পারবে বলে দাবি করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘জেলা প্রশাসন শুধুমাত্র প্রাপকদের তালিকা পরীক্ষা করে। টাকা দেওয়ার এক্তিয়ার তাদের নেই।’’ অন্য এক আধিকারিক জানালেন, ‘‘যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই অনুযায়ী যাঁরা নথিভুক্ত আছেন, তাঁদের টাকা ঢুকে যাবে। হয়তো আরও দু-এক মাস সময় লাগবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy