জল সংরক্ষণে পাহাড়পুরে খোঁড়া হয়েছে বড় গর্ত, পুকুরও। নিজস্ব চিত্র।
করোনায় থমকে গিয়েছিল রোজগার। ফিরে এসেছিলেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। দিনমজুরেরাও কাজ হারিয়েছিলেন। তাঁদের রুজি বাড়াতেই শুরু হয়েছিল ‘মাটির সৃষ্টি’। বিভিন্ন দফতরকে সঙ্গে নিয়ে পুরুলিয়া জেলা জুড়ে চলছে এখন পুনর্গঠনের কাজ। মানুষ কি কাজ পাচ্ছেন? আদৌ কি বদলাচ্ছে রুক্ষ মাটি? খোঁজ নিল আনন্দবাজার
নেড়া টিলা। তলায় পাথর মেশানো শক্ত মাটির জমি। বছরের পরে বছর এমনই ছিল পুরুলিয়া জেলার কাশীপুর ব্লকের পাহাড়পুর। এক বছরেই সেই নেড়া টিলায় আস্তে আস্তে সবুজ রং ধরাচ্ছে গামার, নিম, শাল, মহুয়া, শিরিশ, অর্জুন, আমলকি, শিশু, বহড়ার কয়েক হাজার চারাগাছ। টিলার ঢাল বরাবর তৈরি করা হাজার হাজার বড় বড় গর্ত (স্ট্যাগার্ড কনটুর ট্রেঞ্চ)। সেখানে বৃষ্টির জল জমে ঢুকছে মাটির গভীরে। কিছু জল গড়িয়ে পড়ছে নতুন করে খোঁড়া সুবিশাল দিঘিতে। মাটি নরম হতেই গজিয়েছে ঘাস। শুরু হয়েছে চাষাবাদ। জল, মাটি আর মানুষকে ধরে রাখতে প্রশাসনের ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে এ ভাবেই ধীরে ধীরে বদলাতে শুরু করেছে ওই এলাকা। যা দেখে বিরোধীরাও দাবি করছেন, জেলা পুনর্গঠনের এই ধারা যেন থমকে না যায়।
প্রশাসনের দাবি, পাহাড়পুরের জমিতে চাষাবাদ, দিঘিতে মাছচাষ, নির্মীয়মাণ খামারে হাঁসপালন, আম্রপালি, মল্লিকা ও হিমসাগর প্রজাতির শত শত আমগাছ থেকে গ্রামের ১৭০টি পরিবারের ১৬টি স্বনির্ভর দলের আয়ের নতুন পথ খুলে যাবে। তবে এক বছরেই ‘মাটির সৃষ্টি’ প্রকল্পে পুঞ্চার লাখরা পঞ্চায়েত এলাকার স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি চাষাবাদ থেকে দিঘিতে বোট চালিয়ে বেশ কয়েকহাজার টাকা আয় করেছে।
৩৩ একর জায়গা জুড়ে শুধু কি স্থায়ী সম্পদ তৈরি হচ্ছে? এই প্রকল্পের নির্মাণে ১০০ দিনের কাজে করোনা কালে প্রচুর মানুষ কাজ পাচ্ছেন। মহারাষ্ট্রের পুণেতে হেলিকপ্টারের যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার শ্রমিক কাশীপুরের পাহাড়পুরের দেবচাঁদ মুর্মু, সাগেন হাঁসদা, প্রশান্ত হাঁসদার মতো অনেকে কাজ পেয়ে এখন আর বাইরে যেতে নারাজ। পরিযায়ী শ্রমিকদের জেলাতেই কাজের সুযোগ করে দেওয়াও ‘মাটির সৃষ্টির’ অন্যতম লক্ষ্য।
পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদারের কথায়, ‘‘মাটির সৃষ্টি প্রকল্পে একটি দফতরের কাজ যেখানে শেষ হচ্ছে, অন্য দফতর সেখান থেকে কাজ শুরু করছে। একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর কাটা হলেই মৎস্য দফতর মাছের চাষ করতে এগিয়ে আসছে। সেচের ব্যবস্থা হতেই কৃষি ও উদ্যানপালন দফতর বাসিন্দাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে নামাচ্ছে। এ ভাবে বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ে একই জায়গায় নানা রকম প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিপণনের দিকও দেখা হচ্ছে।’’
তিনি জানান, পুরো প্রকল্পকে আকর্ষণীয় করে সেখানে পর্যটকদের টেনে আনার ভাবনাও রয়েছে।
পাহাড়পুর এলাকার বড়রা পঞ্চায়েতের প্রধান সুমিতা মুর্মু বলছিলেন, ‘‘আগে টিলা বেয়ে বৃষ্টির জল পাশের দ্বারকেশ্বর নদে গিয়ে পড়ত। জল সংরক্ষণের উপায় ছিল না বলে এখানে চাষাবাদ হত না বললেই চলে। এখন পরিকল্পনা করে কাজ করায় টিলার জল দিঘিতে জমছে। সেচের দুঃখ ঘুচেছে।’’
আনাজ চাষের ফাঁকে পাহাড়পুরের বাসিন্দা ময়না হাঁসদা, রসমণি হাঁসদা, শকুন্তলা সরেন বলেন, ‘‘বৃষ্টির জলে যা চাষ হত, তাতে কয়েক মাস সংসার চলত। মূলত দিনমজুরিই ছিল ভরসা। একশো দিনের কাজে গত বছর থেকে যেমন রোজগার বেড়েছে, তেমনই নিজেদের জমিতে চাষের সুরাহাও হচ্ছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল রাউৎ বলেন, ‘‘সবাই মিলে আন্তরিক ভাবে কাজ করে এলাকায় পর্যচনের সম্ভাবনা গড়ে তুলছি।’’
পঞ্চায়েত প্রধান জানান, দিঘিকে ঘিরে তাঁরা পর্যটন কেন্দ্র করার কথা ভাবছেন। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুপ্রিয়া বেলথরিয়া বলেন, ‘‘জেলার লোক-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত আর্ট গ্যালারি করার প্রস্তাব জেলা প্রশাসনকে দেব।’’
জেলাশাসক রাহুলবাবু জানান, পাহাড়পুরকে ঘিরে তাঁদের নিকট ভবিষ্যতে ইকো-ট্যুরিজমের ভাবনা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy