রাস্তার উপরেই নর্দমা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে।
পুরসভা কি কেবলমাত্র ব্যাঙ্ক রোড, দেশবন্ধু রোড, মহাজন পট্টি, কামারপট্টি আর ভাঁড়শালা রোড নিয়ে গঠিত? রামপুরহাট শহরে তো ঢের এলাকা আছে। অনেক ছোট-বড় রাস্তা রয়েছে। কিন্তু সেই সমস্ত এলাকার রাস্তার কাজ?
এ ক্ষোভ রামপুরহাট পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী নির্দল কাউন্সিলর সবিতা দাসের। শহরের বড় রাস্তার দিকে নজর থাকলেও বেহাল ছোট ও গলি রাস্তা। কোথাও রাস্তা শেষই হয়নি। কোথাও আবার খোলা নিকাশি নালা ছাপিয়ে স্বল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় জল হাঁটু সমান! সেই জলে গলির ধারে বাড়িতে জল ঢুকে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কারের অভাবে এমন দশায় দাঁড়িয়েছে।
রামপুরহাট পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপট্টি মোড় পেরিয়ে লোটাস প্রেস মোড় যাওয়ার রাস্তাটি যেমন। প্রতি বর্ষায় শুধু নয় সামান্য বৃষ্টিতেই এই রাস্তা ভেসে যায়। রামপুরহাট-সানঘাটাপাড়া কালিমন্দির থেকে ভাঁড়শালাপাড়া রাস্তা গত পাঁচ বছরে সংস্কার হয়েছে। বিধায়ক উদ্বোধন করেছেন। রামপুরহাট পাঁচ মাথা থেকে কামারপট্টি মোড়, দেশবন্ধু রোড, পাঁচ মাথা থেকে মহাজন পট্টি রোড, জাতীয় সড়কের মাড়গ্রাম মোড় থেকে বোলপুর-রাজগ্রাম রোড, জাতীয় সড়কের বগটুই মোড় থেকে বোলপুর রাজগ্রাম রোড প্রতি বছর সংস্কার হওয়ার পরও পুর নির্বাচনের আগে রবার পিচ দিয়ে সংস্কার হচ্ছে। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারির দাবি, “রবারের পিচ দিয়ে রাস্তা সংস্কার করতে রাজ্য সরকার পুর-উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকার কাজ চলছে। যে ভাবে রাস্তা সংস্কারের কাজ হয়েছে অন্তত দশ বছর রাস্থাগুলোর উপর তাকাতে হবে না।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভাল কাজ হলেও, অবস্থা ভাল থাকা সত্ত্বেও বার বার এই একই রাস্তায় নজর দিচ্ছে পুরসভা। তাঁরা বলেন, “পুরসভা কেবল মাত্র রাজপথ কখনও পিচ, কখনও পিচের উপর ঢালাই বা, ঢালাইয়ের উপর রাবার পিচ দিচ্ছে। কিন্তু যে গলির রাস্তা পেরিয়ে পুরবাসী রাজপথে যাবে সেই গলির রাস্তার সংস্কার কোথায়? নিকাশি সমস্যা, আলোর ব্যবস্থা, রাস্তার ধারে পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যার দিকে কেন নজর এড়িয়ে যাচ্ছে পুরসভা?” লোটাস মোড়ের গলির বাসিন্দা রণজয় বর্মণ, অরূপ চট্টোপাধ্যায়রা জানালেন, পুরসভা অনেক টাকা খরচ করলেও তাঁদের দুঃখ যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেল। বর্ষায় বাড়িতে জল ঢুকে যায়, জল সরে যাওয়ার পর বাড়ির সামনে জমে থাকা ড্রেনের কাদা জমে থাকে, বছরে একবার জমে থাকা জঞ্জাল পরিস্কার হয়।
৮ নম্বর ওয়ার্ডে রাস্তার ধারে এভাবেই জল নিতে হয় বাসিন্দাদের।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর পূর্ণিমা মণ্ডলের স্বামী সুব্রত মণ্ডল আগে ওয়ার্ডের কাজ দেখভাল করতেন। এবারে সুব্রত মণ্ডল নিজে নতুন ওয়ার্ড ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী। অল্প বৃষ্টিতে লোটাস প্রেসের গলির বাসিন্দাদের দুর্দশা নিয়ে কি ব্যবস্থা নিয়েছে পুরসভা? প্রশ্নের জবাবে সুব্রত মণ্ডল বলেন, “পুরসভার উন্নয়ন মূলক খাত ছাড় বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন খাতের টাকায় নতুন ভাবে নিকাশি নালা সংস্কার এবং রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু নিকাশি সমস্যা মেটানো মুশকিল। পুরপ্রধান অবশ্য বলছেন, “সমস্যা সমাধানের জন্য লোটাস প্রেসের গলিতে পাম্প বসানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
লোটাস প্রেস মোড় ছাড়িয়ে জাতীয় সড়কের ধারে পুরসভার আগে ৮ এবং ৯ দুটি ওয়ার্ড ছিল। এবছর ৮ এবং ৯ ভেঙে নতুন করে ১৮ নম্বর ওয়ার্ড তৈরি হয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালিশাড়া পাড়ার বাসিন্দা তাপস মণ্ডল, বাসন্তী দাসরা জানালেন, সামান্য বৃষ্টিতে জাতীয় সড়কের ধারে টাইগার মিলের গলি, মর্ডাণের গলি, কালিশাড়া পাড়া থেকে চামড়াগুদাম পাড়ার রাস্তা জলে ডুবে যায়। নিকাশি ব্যবস্থা নেই। ওই ওয়ার্ডের মাঠপাড়া এলাকার বাসিন্দা শঙ্কর বায়েন, সুমিত্রা প্রামাণিকরা বলেন, “গলির রাস্তায় আলো জ্বলে না, বর্ষার সময় হাঁটু সমান জল পেরিয়ে এলাকার মানুষ রাজপথে পোঁছায়। এ দুর্ভোগ আর কতদিন?
৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জাতীয় সড়কের ধারে মসজিদ মোড় থেকে দুনিগ্রাম রোড যাওয়ার রাস্তা এখনও সম্পূর্ণ হয়নি।” পুরসভার এ বছরের নতুন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মেঘনাথ দাস, চন্দন রায়রাও অভিযোগ জানালেন। বললেন, “খাঁড়পুকুর পাড় এলাকার বাসিন্দাদের এখনো মাটির রাস্তায় চলাফেরা করতে হয়। বর্ষায় জুতো হাতে নিয়ে শহরে কাজে আসতে হয়। অথচ গলির রাস্তা সংস্কার না করে দেখা যাচ্ছে শহরের প্রধান রাস্তায় সবার নজর!”
কার্যত গোটা রামপুরহাট পুরসভার সর্বত্রই ছোট রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ উঠে এল স্থানীয়দের কথায়। ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ডাক্তারপাড়া এলাকা বাসিন্দা হাসিনা বিবি, দুখু সেখ, রজেফা বিবিরা যেমন বললেন, “এতদিন ধরে পুরসভা এলাকায় বাস করছি, অথচ এবারকার মতো বর্ষায় বাড়িতে জল ঢোকেনি। এর জন্য তাঁরা পুরসভা ছাড়া আর কাকেই বা দুষব? কামারপট্টি থেকে পালিরামের মোড়ের রাস্তা সংস্কার করা হলেও, রাস্তার ধারে নিকাশি নালার কোনও সংস্কার করা হয়নি। এর ফলে নালা ছাপানো জল বাড়িতে এবার প্রথম ঢুকে গিয়েছিল।” অভিযোগ ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর সৈয়দ সিরাজ জিম্মির কথাতেও। “পুরপ্রধানকে জানিয়েও কাজ হয়নি।
জাতীয় সড়ক ছাড়িয়ে বাসস্ট্যান্ড এলাকা, খোদ পুরপ্রধান তথা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবারের নির্দল কাউন্সিলর অশ্বিনী তিওয়ারির এলাকা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, “পুরপ্রধানকে বলে বলে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার জন্য নিকাশি নালা করা হলেও, জঞ্জাল সাফাই এর জন্য এলাকায় ঝাড়ুদার আসে না। জঞ্জাল ফেলার জন্য এলাকায় কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। তাই পথই জঞ্জাল ফেলার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
শহরের গলিপথ নিয়ে কী ভাবছেন বিদায়ী পুরপ্রধান?
অশ্বিনীবাবু বলেন, “পুর এলাকায় ৮৭ কিমি রাস্তা আছে। তার মধ্যে ১০ কিমি রাস্তার মধ্যে পুরসভার উদ্যোগে আমার আ মলে ৩৩টি ঢালাই রাস্তা ৫ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কাউন্সিলরকে প্রতি বছর ১৫ লক্ষ টাকা কেবলমাত্র রাস্তা সংস্কারের জন্য দেওয়া হয়েছে। এখন যদি কোনও কাউন্সিলর না করেন, তাহলে তার দায় আমাকে নিতে হবে?”
ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy