Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

হাইড্রেনের জলে ডুবে যায় রাস্তা

অনেকেই ক্ষোভের সুরে বলেন, “হাইড্রেনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছোট ড্রেনগুলি বানানো হয়নি। তাই নিকাশি ব্যবস্থার এই হাল।’’

ভাঙাচোরা নিকাশি। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জিপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

ভাঙাচোরা নিকাশি। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জিপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ অধিকারী
সোনামুখী শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:২৯
Share: Save:

শহরে মোট নিকাশি নালার দৈর্ঘ্য ৩২ কিলোমিটার। তবু বৃষ্টি হলেই বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরের অনেক রাস্তায় জল জমে। রোদ না হলে শুকোয় না জল। গত কয়েক দশকে দামোদর দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা অধরাই থেকে গিয়েছে। তাই পুরসভার ভূমিকাকে কটাক্ষ করে অনেক শহরবাসী বলেন, ‘‘বর্ষায় রাস্তার জল হাইড্রেনে যায় না, উল্টে হাইড্রেনের জল রাস্তায় চলে আসে।’’

শহরবাসীর একাংশ জানান, এক সময় শহরের নিকাশি সমস্যা এত তীব্র ছিল না। শহরের বিভিন্ন নিচু এলাকায় জল জমা হত। কিন্তু এখন সে সব জায়গায় ইমারত উঠেছে। ফলে, নিকাশি সমস্যা বেড়েছে। নিকাশি প্রসঙ্গে অনেক শহরবাসীর ক্ষোভ, ‘‘ভোট এলে প্রতিশ্রুতির বন্যা বয়ে যায়। তার পরে কিছুই হয় না।’’ তাঁদের আরও অভিযোগ, ‘‘আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির নির্মাণ সামগ্রী অনেক জায়গায় রাস্তার পাশে রাখা হচ্ছে। ভাঙা বাড়ির ইট-কাঠ-চুন-সুরকি নিকাশি নালায় পড়ছে।’’

নিকাশি সমস্যা তীব্র পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বৈকুণ্ঠপুরে। এলাকাটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় জল প্রায়ই জমেই থাকে। এ ছাড়া, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামবাজার, রুদ্রগলি, পালপাড়া, গুঁইপাড়া, কৃষ্ণবাজার মোড় এলাকাতেও রয়েছে একই সমস্যা। অভিযোগ, নিকাশি নালা থাকলেও তা প্রতিদিন পরিষ্কার হয় না। অনেক জায়গায় নিকাশি নালা সংকীর্ণ। আবর্জনা পড়ে সেগুলি বুজে যায়। এমনটাই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের।

সুদিন দাস, সঞ্জীব চন্দ্র, নির্মল রুদ্র, টুম্পা দত্তের মতো স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই ক্ষোভের সুরে বলেন, “হাইড্রেনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছোট ড্রেনগুলি বানানো হয়নি। তাই নিকাশি ব্যবস্থার এই হাল। সাফাই কর্মীরা অনিয়মিত ভাবে আসেন।’’ ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা সোনামুখীর উপপুরপ্রধান অমরনাথ সু-র বক্তব্য, “রাস্তা সরু হওয়ায় অনেক জায়গায় নিকাশি নালা অপরিসর। আগে ওয়ার্ডের জল সরাসরি হাইড্রেনে পড়ত । এখন ১১ নম্বর ওয়ার্ডের জল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নালা দিয়ে বড় ড্রেনে মেশে। ফলে, জলের চাপ দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ, সেই চাপ নেওয়ার মতো করে নালাগুলি তৈরি হয়নি।’’ নিকাশি সমস্যার জন্য এলাকার বাসিন্দাদের একাংশকে দায়ী করেছেন কাউন্সিলর। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে নালাতেই আবর্জনা ফেলেন। ওয়ার্ডে সাফাইকর্মী মাত্র দু’জন। ঘণ্টা দুয়েক কাজ করে তাঁরা চলে যান। সুপারভাইজ়ার থাকলেও নজরদারির অভাব রয়েছে।’’

পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের গনগনিডাঙা, ডাঙাপাড়া, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যানার্জিপাড়া, লালবাজার, জয়দুর্গা মেলা, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ধীবরপাড়া, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মালিপুকুর, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রুদ্রগলি, পালপাড়া, গুঁইপাড়া, কৃষ্ণবাজার এবং আদববাজার, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণময়ীতলা, মহাদানিগলি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের রতনগঞ্জ, বাউরিপাড়া, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বৈকুণ্ঠপুর এবং বাউরিপাড়ার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের অভিযোগ। বৈকুণ্ঠপুর, বাউরিপাড়া এবং আদববাজারে এখনও তেমন কোনও নিকাশি নালা তৈরি হয়নি বলে এলাকাবাসীর দাবি।

কার্তিক ভট্টাচার্য এবং জলধর সরকারের মতো ৩ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দার অভিযোগ, ১৯৮১ সালে নিকাশি নালা তৈরি হয়েছিল। এখন তা ভেঙে গিয়েছে। বৃষ্টি হলে রাস্তা ও নালা মিশে যায়। দুর্গন্ধ ছড়ায়। মাসে মাত্র এক দিন সাফাই কর্মীরা আসেন। তদারকির অভাব রয়েছে।

পুরপ্রধান সুরজিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “শহরের জল নিষ্কাশনের জন্য একাধিক হাইড্রেন রয়েছে। ছোট নিকাশি নালাগুলি পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব এলাকাবাসীর। বাড়ির আবর্জনা নালায় ফেললে জল বেরবে কী ভাবে?’’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন, পর্যাপ্ত সাফাইকর্মী না থাকায় প্রতিদিন সব এলাকায় সাফাইয়ের কাজ করা যায় না। পুরপ্রধানের আশ্বাস, ‘‘যে সব এলাকায় নালা নেই, সেখানে তা তৈরি হবে। পাড়ার রাস্তাগুলি অপরিসর। তাই চওড়া নালা করা যায়নি।”

সিপিএম কাউন্সিলর তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা তপন দত্তের অভিযোগ, “নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার না হওয়ায় রাস্তার আবর্জনা নালায় পড়ে। হাইড্রেনগুলির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শহরের নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। তার মাসুল দিতে হচ্ছে।”

বিজেপির সোনামুখী নগর মণ্ডলের সভানেত্রী শম্পা গোস্বামীর অভিযোগ, “রথতলার নিকাশি নালার উপরেই চলছে নির্মাণ কাজ। কোথাও নালা নেই, কোথাও আবার নিয়ম মেনে নালা তৈরি হয়নি। আবার কোথাও, ভেঙে যাওয়া নালা মেরামত হয়নি বহু বছর। সোনামুখী শহর অনেক সময় নিকাশির জলে ভরে যাচ্ছে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy