প্রতি বছর কলকাতার বইমেলায় দু’টি মুক্তমঞ্চ থাকে। —প্রতীকী চিত্র।
এক দিকে আর জি কর-কাণ্ড, অন্য দিকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি— এই দুই ঘটনার ছায়া এড়াতেই কি কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় রাখা হল না মুক্তমঞ্চ?
প্রতি বছর কলকাতার বইমেলায় দু’টি মুক্তমঞ্চ থাকে। কিন্তু এ বার ৪৮তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় তা রাখাই হচ্ছে না। উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের দাবি, বইমেলা প্রাঙ্গণে যে কোনও ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতেই এ বার তৈরি করতে দেওয়া হয়নি মুক্তমঞ্চ। ভবিষ্যতেও এই সিদ্ধান্তের বদল হবে না, কারণ বইমেলা বিক্ষোভ-বিপ্লবের জায়গা নয়। তবে অনুষ্ঠানের জন্য বিকল্প একটি ঘেরা মঞ্চের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ ও হতাশ বইপ্রেমীদের একাংশ। বিশেষত, লিটল ম্যাগাজিন বা ছোট প্রকাশনা সংস্থার কর্মীরা।
গিল্ডের এমন পদক্ষেপ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে সমালোচনা। অনেকেই মনে করছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির চেয়েও আর জি কর-কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়ার বিষয়টি বেশি স্পর্শকাতর। এখনও সেই ঘটনার রেশ কাটেনি। তা ছাড়া, আর জি কর-কাণ্ডে বিচার চেয়ে গত বছর সাধারণ মানুষ যেমন পথে নেমেছিলেন, তেমনই বহু সৃষ্টিশীল মানুষ নিজেদের লেখনীতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। সমাজমাধ্যমে সে সব রচনা প্রকাশ পেয়েছে। তাই প্রশাসনের সমালোচনা করে বইমেলার মুক্তমঞ্চে তেমন রচনা পাঠ বা গান গাওয়া হলে সমস্যায় পড়তে পারেন মেলার উদ্যোক্তারা— এমনই ধারণা অনেকের।
গিল্ডের সঙ্গে জড়িত প্রকাশকদেরই একাংশ জানাচ্ছেন, মুক্তমঞ্চে সব সময়েই মুক্ত চিন্তা এবং মুক্ত মতামত ব্যক্ত করা হয়। তা ছাড়া, ওই দু’টি মুক্তমঞ্চের ভাড়া কম হওয়ায় (৭০০ টাকা) ছোট ছোট দল বা লিটল ম্যাগাজিনের লোকেরা বিভিন্ন সময়ে সেই মঞ্চ ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। কিন্তু নতুন যে ঘেরা মঞ্চ তৈরি হয়েছে, তার ভাড়া তিন হাজার! ফলে অনেকেই বইমেলায় অনুষ্ঠান করতে সমস্যায় পড়বেন। এমনও খবর, লিটল ম্যাগাজিনের রচনার উপরেও চলবে নজরদারি।
যদিও গিল্ড মনে করছে, মুক্ত চিন্তা প্রকাশের নামে অনেকেই বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টা করেন। যার জেরে মুক্তমঞ্চ চত্বরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। তাতে আতঙ্ক ছড়ায় সাধারণ বইপ্রেমীদের মধ্যে।
গিল্ডের সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে অবশ্য আর জি কর বা বাংলাদেশের প্রসঙ্গ সরাসরি বলছেন না। তাঁর দাবি, অতীত অভিজ্ঞতায়, এমনকি গত বছরেও তাঁরা দেখেছেন, বইমেলায় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে বই লিখুন, বিক্রি করুন, সমস্যা নেই। কিন্তু বইমেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। বইমেলা বই কেনা, বই পড়ার জায়গা। তাই মুক্তমঞ্চের বদলে নতুন স্টল দেওয়া হয়েছে। কেউ অনুষ্ঠান করতে চাইলে তার জন্য মঞ্চ রয়েছে।’’ আগামী বছর থেকে এই সিদ্ধান্তের কথা ছেপেই বইমেলার বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে জানান সুধাংশু। যদিও তিনি জানান, লিটল ম্যাগাজিনের রচনার উপরে নজরদারির বিষয়টি তাঁর জানা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy