স্বাধীনতার আগে ১৯২৫ সালে ১৮ টাকার সামান্য বেশিতে খুচরো বাজারে মিলত ১০ গ্রাম পাকা সোনা। গত ১০০ বছরে এর দাম ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৯০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
বিয়ের মরসুমে ঊর্ধ্বমুখী সোনার দাম। কলকাতার বাজারে ইতিমধ্যেই ৮০ হাজার টাকা ছাপিয়ে গিয়েছে হলুদ ধাতু। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে তাতে দর আরও চড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। মজার বিষয় হল, একটা সময়ে এ দেশে মাত্র ২০ টাকায় মিলত ১০ গ্রাম পাকা সোনা (২৪ ক্যারেট)। গত ১০০ বছরে আমূল বদলে গিয়েছে ধাতুটির দামের সূচক।
০২১৮
১৯২৫ সালে ঘরোয়া খুচরো বাজার থেকে ১০ গ্রাম সোনা কিনতে খরচ হত ১৮.৭৫ টাকা। পরবর্তী বছরগুলিতে আরও কমে এর দাম। কলকাতায় ১০ গ্রাম পাকা সোনা ১৮ টাকা ৫ পয়সাতেও বিক্রি হয়েছে। সালটা ছিল ১৯৩৫।
০৩১৮
এর পরের পাঁচ বছরে ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশ। ইতিহাসে এর পরিচিতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসাবে। ১৯৩৯ সালে ইউরোপে লড়াই শুরু হতেই বিশ্ব বাজারে হু হু করে বাড়তে থাকে হলুদ ধাতুর দাম। ১৯৪০ সালে ৩৬.০৫টাকা/১০ গ্রামে পৌঁছে যায় সোনার দর।
০৪১৮
১৯৪৫ সালে জাপানের হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে আমেরিকার পরমাণু হামলার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় বিশ্বযুদ্ধ। এই পাঁচ বছরে ভারতের বাজারে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল সোনার দাম। যুদ্ধ শেষের বছরে এ দেশের ১০ গ্রাম হলুদ ধাতু কিনতে লাগত ৬২ টাকা। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার বছরে এই দর আরও বেড়ে ৮৮.৬২ টাকায় পৌঁছেছিল।
০৫১৮
১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতে চালু হয় সংবিধান। সোনা তখন ১০০ টাকা ছুঁইছুঁই। ১০ গ্রাম হলুদ ধাতু কিনতে তখন খরচ হত ৯৯.১৮ টাকা। পাঁচ বছরের মাথায় অবশ্য কমেছিল দাম। ১৯৫৫ সালে প্রতি ১০ গ্রামে সোনার দর দাঁড়ায় ৭৯.১৮ টাকা।
০৬১৮
১৯৫৯ সালে প্রথম বার ১০০ টাকা ছাপিয়ে যায় হলুদ ধাতু। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে ফের অনেকটা চড়েছিল দাম। ওই সময়ে ১০ গ্রাম সোনার দর ১১৯.৭৫ টাকায় গিয়ে পৌঁছয়। যুদ্ধ থামলে ঠিক তার পরের পরের বছরই ৯৭ টাকায় নেমে যায় দাম।
০৭১৮
৬৩.২৫ টাকায় ১০ গ্রাম সোনা পাওয়া যেত ১৯৬৪ সালে। এর পরেই বছরই হঠাৎ ভারত আক্রমণ করে বসে পাকিস্তান। চিন যুদ্ধের ক্ষত তখনও সারিয়ে তুলতে পারেনি নয়াদিল্লি। ভারত-পাক যুদ্ধের বছরে ৭১.৭৫ টাকা/১০ গ্রাম দর ঘরোয়া বাজারে বিক্রি হয়েছিল হলুদ ধাতু।
০৮১৮
’৬৫-র যুদ্ধ থেমে গেলেও পরবর্তী বছরগুলিতে সোনার দাম একেবারেই কমেনি। উল্টে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছিল এর দর। ১৯৭০ সালে এটি ১৮৪.৫ টাকায় পৌঁছে যায়। ঠিক তার পরের বছর (১৯৭১ সাল) দাম ছিল ১৯৩ টাকা। ওই বছরই তৃতীয় বারের জন্য যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি ছিল ভারত ও পাকিস্তান। লড়াইয়ে ইসলামাবাদকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়। আর তা শেষ হলে পাকিস্তান ভেঙে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র, বাংলাদেশ।
০৯১৮
ভারতের বাজারে সোনার দাম ২০০ টাকা পেরিয়েছিল ১৯৭২ সালে। পাঁচ বছরের মাথায় দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ওই সময়ে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছিল হলুদ ধাতুর দর। ১৯৭৫ সালে খুচরো বাজারে ১০ গ্রাম সোনা কিনতে লাগত ৫৪০ টাকা।
১০১৮
জরুরি অবস্থা পরবর্তী ১৯৭৭ সালে প্রথম বার কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে অকংগ্রেসি সরকার। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মোরারজি দেশাই। ওই সময়ে কিছুটা কমে ৪৮৬ টাকা পৌঁছেছিল সোনা। ১৯৮০ সালে হাজারে টাকা পেরিয়ে যায় হলুদ ধাতু। ১৯৮৪ সালে শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে নিহত হন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। ওই বছর ঘরোয়া বাজারে ১০ গ্রাম সোনা কিনতে লাগত ১,৯৭০ টাকা। ঠিক তার পরের বছরই দাম ২,১৩০ টাকায় পৌঁছে যায়।
১১১৮
১৯৯১ সালে ভারতে উদার অর্থনীতির সূচনা করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ওই সময়ে অবশ্য অর্থ মন্ত্রকের দায়িত্বভার সামলাচ্ছিলেন তিনি। এর জেরে বিদেশি লগ্নিকারীদের কাছে খুলে যায় এ দেশের বাজার। সঙ্গে সঙ্গে ঘরোয়া বাজারে বেড়েছিল সোনার দামও। ওই বছরে খুচরো বাজারে ৩,৪৬৬ টাকা ছিল প্রতি ১০ গ্রাম হলুদ ধাতুর দর।
১২১৮
গত শতাব্দীর একেবারে শেষে ফের এক বার কাশ্মীর আক্রমণ করে পাক সেনা। সালটা ছিল ১৯৯৯। নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলওসি) পেরিয়ে কার্গিল, দ্রাস, বাটালিক-সহ একাধিক এলাকায় ঢুকে পড়ে ইসলামাবাদের ফৌজ। প্রায় এক মাস ধরে চলা সংঘর্ষে শেষে ফের ওই সমস্ত এলাকা পুনরুদ্ধার করে ভারতীয় সেনা। যুদ্ধের বছরে ৪,২৩৫ টাকা ছিল সোনার দাম। ২০০০ সালে এটি ৪,৪০০ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।
১৩১৮
২০০৪ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে খুচরো বাজারে প্রায় হাজার টাকা বেড়েছিল সোনার দাম। এই দুই বছরে গড়ে দর ছিল যথাক্রমে ৫,৮৫০ টাকা ও সাত হাজার টাকা। পাঁচ বছরের মাথায় (পড়ুন ২০১০ সাল) দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ১৮ হাজার ৫০০ টাকায় পৌঁছে যায় হলুদ ধাতু।
১৪১৮
২০১৪ সালে প্রথম বার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেন নরেন্দ্র মোদী। ২০১০ সালের নিরিখে ওই সময়ে প্রায় সাড়ে ন’হাজার টাকা বেড়েছিল সোনার দর। ২০১৪ সালে খুচরো বাজারে ১০ গ্রাম হলুদ ধাতু কিনতে লাগত ২৮,০০৬ টাকা।
১৫১৮
মোদী সরকারের প্রথম এক বছরেই ২৬ হাজার টাকা ছাপিয়ে যায় সোনা। ২০২০ সালে কোভিড অতিমারf শুরু হলে আরও চড়েছিল হলুদ ধাতুর দামের সূচক। ওই বছর এর দর ৪৮,৬৫১ টাকায় পৌঁছে যায়।
১৬১৮
২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ (স্পেশাল মিলিটারি অপারেশন) চালাচ্ছে রাশিয়া। অন্য দিকে ২০২৩ সাল থেকে গত দেড় বছর ধরে পশ্চিম এশিয়ায় ইজ়রায়েলের সঙ্গে একাধিক ফ্রন্টে যুদ্ধ লড়েছে হামাস, হিজ়বুল্লা, হুথি এবং ইরান।
১৭১৮
যুদ্ধের বছরগুলিতে বিশ্ব জুড়েই দামি হয়েছে সোনা। সেই প্রভাব দেখা গিয়েছে ভারতের খুচরো বাজারেও। ২০২৪ সালে কলকাতায় পাকা সোনার দর ৭৭,৯১৩ টাকায় পৌঁছেছিল।
১৮১৮
চলতি বছরের জানুয়ারিতে কলকাতার খুচরো বাজারে ১০ গ্রাম গয়না সোনার বিক্রি হচ্ছে ৭৭ হাজার টাকায়। অন্য দিকে পাকা সোনা বা ২৪ ক্যারেটের দাম উঠেছে ৮১ হাজার ৫০ টাকা। এ ছাড়া ৮০,৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ১০ গ্রাম পাকা সোনার বাট।