Advertisement
৩০ জানুয়ারি ২০২৫
Bunkers Found in Nadia

সিরাপ-পাচারে লাল একা নয়, থাকতে পারে আরও বাঙ্কার?

কৃষ্ণগঞ্জে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সে সব এলাকা পাচারের ‘মুক্তাঞ্চল’। তবে কাঁটাতারের উপর দিয়ে সিরাপের বোতল ছুড়েও পাচার চলে।

মাটির নীচে মাদকভর্তি বাঙ্কারে তল্লাশি অভিযানে বিএসএফ।

মাটির নীচে মাদকভর্তি বাঙ্কারে তল্লাশি অভিযানে বিএসএফ। —ফাইল চিত্র।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:৩৬
Share: Save:

কৃষ্ণগঞ্জ: বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে কাশির নিষিদ্ধ সিরাপ মজুতের চারটি ‘বাঙ্কার’-এর খোঁজ মেলার পরেই উঠে এসেছে অন্যতম সন্দেহভাজন, সাধু-সাজা পাচারকারী সুশান্ত ঘোষ বা ‘লাল’-এর নাম। কিন্তু সেই সঙ্গে ঘোরাফেরা করছে প্রশ্ন: ‘বাঙ্কার’ কি আরও আছে! কারণ, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে সিরাপ পাচারের পান্ডা হিসেবে লাল একা নয়, আরও কিছু নাম অনেক দিন ধরেই রয়েছে পুলিশের নজরে।

কৃষ্ণগঞ্জে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সে সব এলাকা পাচারের ‘মুক্তাঞ্চল’। তবে কাঁটাতারের উপর দিয়ে সিরাপের বোতল ছুড়েও পাচার চলে। পুলি‌শ সূত্রের খবর, ২০১৫-১৬ সাল থেকে কৃষ্ণগঞ্জে সিরাপ পাচারের রমরমা শুরু। প্রথম দিকে পাপ্পু-ধীরেনরা কারবার নিয়ন্ত্রণ করলেও পরে নতুন প্রজন্মের রকি, লাল, রাজু উঠে আসতে থাকে।

এদের মধ্যে লালই সবচেয়ে দ্রুত ‘সাম্রাজ্য’ বিস্তার করে। কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের একটা অংশের দাবি, কৃষ্ণগঞ্জ সীমান্তের প্রতিটা পঞ্চায়েত এলাকায় লালের ১০-১২ জন করে ‘কেরিয়ার’ আছে, যারা সিরাপের বোতল কাঁটাতার পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। আগে যেখানে মূলত কলকাতা থেকে ট্রেনে-বাসে বা গাড়িতে নানা জিনিসের ভিতরে লুকিয়ে হাজার-দু’হাজার সিরাপের বোতল আনা হত, সে জায়গায় লালই প্রথম উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে সরাসরি হাজার-হাজার বোতল আমদানি শুরু করে। রাজু গোড়ায় তার সঙ্গেই কাজ করত। পরে নিজে কারবার শুরু করেছে।

তবে পাপ্পুর ভাইপো রকিও কম যায় না। গত বছরেই ১০ হাজার বোতল সিরাপ পাচারের সময়ে ধরা পড়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সেই সঙ্গে উঠে আসছে এক সময়ে লালের সঙ্গে কাজ করা বকুল আর গৌতমের নামও। এরা সকলেই মূলত মাজদিয়ার মারোয়াড়িপট্টি, স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা। আবার লক্ষ্মীডাঙার ধীরেন চক্রবর্তীর পথ ধরে উঠে এসেছে তার গ্রামেরই ফেকো আর গিরি। মাজদিয়া-লক্ষ্মীডাঙা ছাড়িয়ে, সিরাপ পাচারের কারবার ছড়িয়ে পড়েছে বানপুর-গেদে সীমান্তেও। এক সময়ে লাল বা বকুলের ‘কেরিয়ার’ হিসাবে কাজ শুরু করা শোনঘাটার তোতা আর আলিরা আলাদা কারবার শুরু করেছে। উঠে এসেছে বানপুরের দেবুও। তবে তাদের ব্যবসা লাল-রকিদের মতো বড় নয়।

পুলিশের কাছে খবর, ইতিমধ্যে লালের বিশ্বস্ত অনুচর হয়ে উঠেছে ধরমপুরের রাজীব মণ্ডল। গত জুলাইয়ে লালের যে ২০ হাজার বোতল সিরাপ ধরা পড়েছিল, তা পাচারের দায়িত্বে ছিল রাজীব। পুলিশ তাকে ধরেছিল। হালফিল শোনা যাচ্ছে পূর্ণখালির তেঁতুলের নামও, বর্তমানে যে মাজদিয়ায় থেকেই পাচার-চক্র চালাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন দলের মধ্যে সমন্বয়ের কাজও এখন সে-ই করে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

এমন ‘গো‌ছানো’ সাম্রাজ্যের ভিতর থেকে মাজদিয়া কলেজপাড়ার চারটি ‘বাঙ্কার’-এর খবর ফাঁস হল কী করে? মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, পাচারকারীদের ভিতর থেকেই কেউ খবরটা দিয়ে থাকতে পারে।” কেন? পুলিশের দাবি, গত জুলাই থেকে এলাকাছাড়া লাল। সে সুযোগ হয়তো নিতে চাইছে তারই ঘনিষ্ঠ কেউ।

এই পরিস্থিতিতে কলেজপাড়ার চারটি বাদেও যে ওই সীমান্ত এলাকায় আরও সিরাপ-বোঝাই ভূগর্ভস্থ কুঠুরি থাকতে পারে, জেলা পুলিশ তা অস্বীকার করতে পারছে না। পুলিশ সুপার বলেন, “আর কোথাও বাঙ্কার আছে কি না, জানতে অত্যন্ত সক্রিয়তার সঙ্গে খোঁজখবর চলছে।” এই এলাকা অবশ্য শুধু পুলিশের নয়, বরং, বিএসএফের নজরদারির এক্তিয়ারেও পড়ে। বিএসএফের ডিআইজি তথা দক্ষিণ সীমান্ত মুখপাত্র নীলোৎপলকুমার পাণ্ডে বলেন, “আমাদের কী দায়িত্ব তা জানি এবং তা এড়িয়ে যাচ্ছি না।”

অন্য বিষয়গুলি:

India-Bangladesh Border India-Bangladesh Bunkers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy