সোনামণি পাহাড়। — নিজস্ব চিত্র।
ভূগোলের ভাষায় তাই তাকে পাহাড় না বলে টিলা বলা যায়। কিন্তু স্থানীয়রা তাকে পাহাড়ই বলেন। ডাকেন ‘সোনামণি পাহাড়’ বলে। শীত জুড়ে এই পাহাড়ের আশপাশে স্থানীয়রা ভিড় জমান বনভোজনের উদ্দেশ্যে। কিন্তু বছরভর সোনামণি একাই থাকে। স্থানীয়রা চাইছেন, ওই এলাকাকে পর্যটন ক্ষেত্র করার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
বাঁকুড়ার শুশুনিয়া বা বিহারীনাথ পাহাড় যে গোত্রে পড়ে, সেই তালিকায় নাম ওঠেনি সোনামণির। তাই পর্যটকরা তো দূরের কথা, আশপাশের ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ বাদ দিলে বাঁকুড়া জেলার অন্যান্য অংশের মানুষের কাছেই অজানা সোনামণির নাম। অথচ চেহারার দিক থেকে একটি বিশেষ চরিত্র রয়েছে এই টিলার। প্রায় ৪০০-৫০০ ফুট লম্বা এই পাহাড়ে মাটির কোনও অস্তিত্ব নেই। আসলে এটা তিমির পিঠের আকারের বিশাল একটি পাথর। মাটি নেই, তাই পাহাড়ের উপরে বা গায়ে কোথাও গাছপালার কোনও অস্তিত্ব নেই। স্থানীয়রা বলেন, বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা এই বিশাল শিলাখণ্ডের কোনও কোনও অংশ ফাঁপা। পাথরের টুকরো দিয়ে সেই অংশে আঘাত করলে সেখান থেকে ফাঁপা শব্দ বার হয়। বাকি অংশ নিরেট পাথরে তৈরি। টিলার তিন দিক ঘেরা শালের জঙ্গল দিয়ে।
সোনামণিকে ঘিরে বহু জনশ্রুতি চালু রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। স্থানীয় সিঁদুরপেটি গ্রামের বাসিন্দা নীহার পাত্র বলেন, ‘‘পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, এই পাহাড়ের একটি গুহার মধ্যে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ ছিল। এক পুরোহিত প্রতি দিন সেই গুহার ভিতরে গিয়ে পুজো দিয়ে আসতেন। কোনও একদিন পুজো দিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে আসার পর পুরোহিত দেখতে পান তাঁর গামছা গুহার মধ্যে রয়ে গিয়েছে। সেই গামছা আনতে পুরোহিত আবার গুহার ভিতরে গেলে সেখানকার দরজা ধসে বন্ধ হয়ে যায়। পুরোহিত আর বেরোতে পারেননি। তাই এখনও পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ফাঁপাা।’’ স্থানীয়দের দাবি, এক সময় এই পাথরের উত্তর প্রান্তে জলস্রোতও ছিল। বর্তমানে সেই জলস্রোত অবশ্য অমিল। তবে সেখানে এখনও সারা বছর জল জমে থাকে।
মুকুটমণিপুর থেকে বড় জোর ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সোনামণি। খাতড়া থেকে শিমলাপাল যাওয়ার রাস্তায় দহলা মোড় থেকে এই টিলার দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। কিন্তু প্রচারের ও প্রসারের অভাবে সেভাবে পর্যটকরা জানেনই না এই টিলার নাম। রয়েছে পরিকাঠামোর অভাবও। স্থানীয় কুড়ুলপাহাড়ি গ্রাম পর্যন্ত পাকা রাস্তা থাকলেও, তার পর অনেকটাই কাঁচা রাস্তা। টিলাকে কেন্দ্র করে নেই রাত্রিবাস, পানীয় জল এবং শৌচালয়ের কোনও ব্যবস্থাও নেই। স্থানীয় চাকা গ্রামের বাসিন্দা শরদিন্দু পণ্ডা বলেন, ‘‘রাস্তা-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো গড়ে উঠলে এই টিলাও বাঁকুড়ার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠবে। সে ক্ষেত্রে এলাকার আর্থ সামাজিক চেহারাটাই বদলে যাবে।’’
এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য সরবরাহ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যোৎস্না মাণ্ডি বর্তমানে মুকুটমণিপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সোনামণির পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি আমাদের নজরে রয়েছে। কিন্তু সেখানে রাস্তাঘাট নির্মাণ-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরির মতো যথেষ্ট তহবিল স্থানীয় পঞ্চায়েতের হাতে নেই। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের মাধ্যমে সেখানে পরিকাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy