জলাতঙ্কে শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এক ওঝাকে গ্রেফতার করল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার পুলিশ। সম্প্রতি বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় জয়পুর থানার ডাঙরপাড়া গ্রামের ঋজু লোহারের। ১২ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর পরেই তদন্ত শুরু করে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার বিশেষ তদন্তকারী দল। তদন্তে প্রাথমিক ভাবে বেলিয়াড়া গ্রামের ওঝা বলরাম কুন্ডুর নাম উঠে আসে। তাঁর কথাতেই শিশুকে প্রথমে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি, এ কথা জানতে পারার পরেই জেলা স্বাস্থ্য দফতর পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানায়। এর পর জয়পুর থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার বলরামকে গ্রেফতার করে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি করানো হয়েছিল ১২ বছর বয়সি ঋজুকে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি জলাতঙ্কে তার মৃত্যুর পরেই পরেই নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর । কারণ খুঁজতে বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার ডেপুটি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২)-এর নেতৃত্বে একটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। তদন্তে উঠে আসে, মাস তিনেক আগে ঋজু স্কুলে যাওয়ার পথে একটি পাগল কুকুরের সামনে পড়ে যায়। কুকুরটি তাড়া করে ঋজুর পায়ে কামড়ে দেয়। ঋজু বিষয়টি বাড়িতে ফিরে জানালে তড়িঘড়ি পরিবারের লোকজন তাকে ওঝা বলরামের কাছে নিয়ে যান। আক্রান্ত শিশুকে ঝাড়ফুঁক ও মন্ত্রতন্ত্র দেওয়া জলপোড়া খাইয়ে বলরাম শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। অভিযোগ, পরিবারের লোকজন এর পর শিশুটিকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইলে বলরাম পরিবারকে ভুল বোঝাতে থাকেন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে, এমন কথাও বলেছিলেন বলে অভিযোগ। ওঝার কথা শুনে শিশুটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যান পরিবারের লোকজন। মাস তিনেক যেতে না যেতেই ঋজু জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়। তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ তদন্তকারী দলের রিপোর্ট হাতে পেতেই তড়িঘড়ি অভিযুক্ত ওঝা বলরামের বিরুদ্ধে পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে স্বাস্থ্য দফতর । অভিযোগ পেতেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে অভিযুক্ত ওঝাকে গ্রেফতার করে জয়পুর থানার পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয় । বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গোপাল দাস বলেন, “কুকুরের কামড়ের প্রতিষেধক প্রতিটি ছোটখাটো হাসপাতালেও এখন মজুত রাখা হয় । তা সত্ত্বেও একটি স্কুল পড়ুয়া এ ভাবে জলাতঙ্কে মারা যাবে, তা অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। তদন্তকারী দলের রিপোর্ট অনুযায়ী ওই ওঝা বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিরোধিতা করে একটি শিশুকে কার্যত খুন করেছেন। আমরা তাঁর বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে জানিয়েছিলাম। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।”
বিষ্ণুপুরের এসডিপিও সুপ্রকাশ দাস বলেন, ‘‘বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরেই আমরা ওই ওঝাকে গ্রেফতার করেছি। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার নির্দিষ্ট ধারা ছাড়াও ড্রাগস অ্যান্ড মেডিক্যাল রেমিডিজ় আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে।’’