আজ, ২১ ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিনটি শ্রদ্ধা সঙ্গে স্মরণ করার জন্য অপেক্ষায় থাকেন রাজ্যের মানুষ। অনেকেরই আবার ছেলেবেলা কেটেছে বাংলাদেশে। পরবর্তীতে অনেকেই ছিন্নমূল হয় এ দেশে এসেছেন। অনেকেরই এখন স্থায়ী ঠিকানা নদিয়া। কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি আজও তাঁদের কাছে অমলিন। অনেকে আবার ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আজকের দিনে ঢাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মিলিত হওয়ার পরিকল্পনা করেন আগে থেকেই।
কিন্তু পরিস্থিতি এখন বদল হয়েছে। বাংলাদেশ অশান্ত। বন্ধ ভারত-বাংলাদেশ রেল যোগাযোগ। আদৌ সে দেশে এবার ভাষা দিবস পালন হবে কিনা, তা জানতে চেয়ে সমাজ মাধ্যমে ওপার বাংলায় থাকা আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এপার বাংলার মানুষজন। বাংলাদেশ পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, কবে দুই বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ এক হতে পারবেন, তা নিয়েও অনেকেই প্রহর গুনছেন।
হাসিনা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন থেকে মাথাচাড়া দিচ্ছে এবং অশান্ত হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে ছিন্ন হয় ‘মৈত্রী’র যোগাযোগ। রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ চালু হয়। করোনার সময় প্রায় দু’বছর ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। আবার মাস কয়েক আগে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের সময় থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় রেল যোগাযোগ। পূর্ব রেলের তরফে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ওই দেশ থেকে সবুজ সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকে মৈত্রীর চলাচল।
আড়ংঘাটার বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া বিধান সিংহ চেয়েছিলেন এ বছর ভাষা দিবসে ঢাকা যেতে। তিনি বলেন, ‘‘দু’বছর আগে ঢাকায় ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন সে দেশে যা পরিস্থিতি, ভাবলেই ভয় হয়।’’ কুপার্স নোটিফায়েড পুরসভার বাসিন্দা দুলাল মণ্ডল। বয়স আশি পার হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ভাষা শহিদদের স্মরণে আজ দিনটি অনাড়ম্বর ভাবেই উদযাপন করি। তবে এখন যে বাংলাদেশ দেখছি, তা কখনই চাইনি।’’ বছর কয়েক আগেও বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ অবদানের বিষয়টিও শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থাপন করার কর্মসূচি নিয়েছিল। কিন্তু সে দেশের হিংসা-আন্দোলনে সেই বঙ্গবন্ধুর মূর্তিও ভাঙা গিয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)