শান্তিনিকেতনের অবনপল্লিতে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত 'আবাস ' বাড়ি ভাঙার কাজ বন্ধ করাল বোলপুর পুরসভা। বাড়ির ঐতিহ্য যাতে বজায় থাকে, সেই বিষয়টি দেখার আশ্বাসও দিয়েছে পুরসভা। যদিও সেই পদক্ষেপ করতে বেশ কিছুটা ‘দেরি’ হয়েছে বলেই মনে করছেন শান্তিনিকেতনের অনেকে। বাড়ি ভাঙার এই বিতর্কের আবহেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অবনীন্দ্রনাথের নাতনি ধীরা ঠাকুর মজুমদার।
বুধবার ওই বাড়ি পরিদর্শন করে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের প্রতিনিধিদল। জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট দেওয়ার কথা তাদের। এর পরেই এ দিন বাড়ি ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় পুরসভা। বাড়ির প্রধান ফটকে তালাও ঝুলিয়ে দেওয়া হয় পুরসভার তরফে। পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ বলেন, “এই বাড়ির সঙ্গে বহু স্মৃতি ও ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ঠাকুর পরিবারের ঐতিহ্যকে বজায় রাখতে পুরসভা বাড়ি ভাঙার কাজ আপাতত বন্ধ করেছে। সেখানে কোন কিছু তৈরির জন্য পুরসভা অনুমতি দেবে কি না, তা পরে বিবেচনা করা হবে।’’
তবে, অনুমতি একান্তই দিতে হলে আইনগত দিক খতিয়ে দেখা হবে বলেও পুরপ্রধান এ দিন জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তাঁর বংশের ঐতিহ্য যাতেই কোনও ভাবেই লুপ্ত না হয়ে যায়, তা দেখতে হবে। কারা এই বাড়ি কিনেছে, তা আমরা এখনও জানতে পারিনি। এমনকি বাড়ি ভাঙার ক্ষেত্রেও পুরসভাকে পুরসভাকে কিছু জানানো হয়নি।”
পুরসভার পদক্ষেপে খুশি ঠাকুর পরিবারের সদস্য তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এখানকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা যে এখনও রয়েছে, তা দেখে ভাল লাগছে। দেরিতে হলেও পুরসভা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করায় আমরা খুশি।’’ আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “এই কাজের জন্য আমরা পুরসভার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে, এই পদক্ষেপ আগে হলে বাড়ি এ ভাবে ভাঙা পড়ত না।”
বহুবার অবনীন্দ্রনাথের সান্নিধ্যে এসেছেন তাঁর নাতনি ধীরা ঠাকুর মজুমদার। শান্তিনিকেতনে এক সময় নিয়মিত আসাযাওয়া ছিল তাঁর। তবে তাঁর দাদামশাই অবনীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য বাড়ি যে এ ভাবে ভেঙে ফেলায় তিনি মর্মাহত। উত্তর কলকাতার সিঁথি এলাকার বাসিন্দা ধীরা এ দিন বলেন, “দাদামশাইয়ের স্মৃতিগুলি এ ভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি। যেখানে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি সংরক্ষণ করে রাখা দরকার, সেখানে কেন এ ভাবে ভাঙা হল, জানি না। এ ভাবে যদি একের পর এক গুণী ব্যক্তির ঐতিহ্যমণ্ডিত বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়, তা হলে আগামিদিনে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।”
একই কথা শোনা গিয়েছে ধীরার মেয়ে ঊর্মি গোস্বামীর মুখে। তাঁর কথায়, “আমিও বেশ কয়েকবার ওই বাড়িতে গিয়েছি। ওঁর বহু স্মৃতির সাক্ষী ওই বাড়ি। ওই বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে, আমরা কোনও দিন ভাবতে পারিনি। আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনার।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)