Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Indian Railways

‘তুঘলকি’ চক্রধরপুর এক্সপ্রেস

হাওড়া থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া যাওয়ার ‘হাওড়া-চক্রধরপুর-বোকারো স্টিল সিটি এক্সপ্রেস’-এর যাত্রীদের সঙ্গে রেল এমনই তুঘলকি কাণ্ড করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৯:৫৭
Share: Save:

ঘটনা ১: রাত ১২-০৫ নাগাদ হাওড়া থেকে ট্রেনের যাত্রা শুরুর কথা। যাত্রীর হাতে রয়েছে সংরক্ষিত কামরার টিকিট। সন্ধ্যায় হঠাৎ যাত্রীর ফোনে রেলের বার্তা— ট্রেন হাওড়ার পরিবর্তে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে ছাড়বে।

ঘটনা ২: সংরক্ষিত কামরার টিকিট রয়েছে সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে। যাত্রীর ফোনে বার্তা এল— ট্রেন সাঁতরাগাছিতে থামবে না। ট্রেনটি ধরতে হবে বাউড়িয়া স্টেশন থেকে।

হাওড়া থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া যাওয়ার ‘হাওড়া-চক্রধরপুর-বোকারো স্টিল সিটি এক্সপ্রেস’-এর যাত্রীদের সঙ্গে রেল এমনই তুঘলকি কাণ্ড করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। একই ভাবে ভোরে হাওড়ার বদলে ফিরতি ট্রেনের যাত্রা সাঁতরাগাছিতেই শেষ করে দেওয়া হচ্ছে বলেও যাত্রীদের অভিযোগ। আদ্রা থেকে এই ট্রেনটির সামনের দিকের অংশ চক্রধরপুর ও পিছনের দিকের অংশ বোকারোয় যায়। তবে ট্রেনটিতে মূলত বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার বাসিন্দারাই বেশি যাতায়াত করেন। প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন এই ট্রেনের এমন খামখেয়ালিপনায় যাত্রীরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। এমনকি বিজেপি বিধায়কও প্রতিবাদে আন্দোলন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন।

এই ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী তথা পুরুলিয়ার বিজেপি বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি, রেল হঠাৎ সংরক্ষিত টিকিটের যাত্রীদের ফোনে বার্তা পাঠিয়ে কখনও বলছে ট্রেন হাওড়ার বদলে সাঁতরাগাছি থেকে ছাড়বে। কখনও আবার বলছে, সাঁতরাগাছির বদলে হাওড়া থেকে ছাড়বে। এতে যাত্রীরা বিভ্রান্তি ও দুর্ভোগ দুই-ই বাড়ছে। এ রকম হবে কেন? অন্য ট্রেনগুলি তো হাওড়া থেকেই ছাড়ছে।’’ পুরুলিয়ার জয়পুরের বিজেপি বিধায়ক নরহরি মাহাতোর কথায়, ‘‘আমি আদ্রার ডিআরএমকে এই সমস্যার কথা জানিয়েছি। শীঘ্রই দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেলারেল ম্যানেজারের সঙ্গে এই সমস্যা নিয়ে দেখা করব। যদি এমনটা চলে, তাহলে আন্দোলন হওয়া উচিত।’’

পুরুলিয়া মেডিক্যালের চিকিৎসক পবন মণ্ডলও ভোগান্তির শিকার। তিনি বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে সাঁতরাগাছি থেকে আমার সংরক্ষিত টিকিট ছিল। সন্ধ্যায় ফোনে বার্তা পেলাম, পুরুলিয়াগামী ট্রেন সাঁতরাগাছিতে থামবে না। আমাকে বাউড়িয়া স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠতে হবে! আমার প্রশ্ন, অত রাতে একজন যাত্রী বাউড়িয়া যাবেন কী ভাবে? রেলের খামখেয়ালিপনা দেখে এখন আমি আর ওই ট্রেনে উঠছি না।’’ প্রায় একই রকম ভোগান্তির কথা শুনিয়েছেন বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মুখোপাধ্যায়ও।

আদ্রা-মেদিনীপুর শাখার রেলওয়ে ইউজার্স অর্গানাইজেশনের যুগ্ম সম্পাদক দেবু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রায় একশো বছরের একটি ঐতিহ্যবাহী ট্রেনের যাত্রা নিয়ে খামখেয়ালিপনা মানা যায় না। এখন হাওড়া-খড়্গপুর চারটে লাইন, দু’টো লুপ, দু’টো মেন। তবুও কেনএমন হবে?’’

সরব বিরোধীরাও। সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘বাসুদেব আচারিয়া যখন সাংসদ ছিলেন না তখনও যাত্রীদের নানা সমস্যা তিনি রেল কর্তৃপক্ষের নজরে আনতেন। রেলের এই স্বেচ্ছাচারিতা কি বিজেপির বর্তমান সাংসদের নজরে পড়ে না?’’ বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘এই ট্রেনটি পুরুলিয়া ও বাঁকুড়াবাসীর কাছে ‘লাইফলাইন’। অথচ ট্রেনটির পরিষেবা নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ বাড়ছে। আমি রেলমন্ত্রীর কাছে এর জবাব চাইব।’’ বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো-ও।

তবে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ওমপ্রকাশ চরণ বলেন, ‘‘লাইনে কাজ চলার জন্য ওই ট্রেনের যাত্রা শুরুর স্টেশন বদলাতে হচ্ছিল। কিন্তু যাত্রীদের যাতে সমস্যায় না পড়তে হয়, তাই আগাম ফোনে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হচ্ছিল। সমস্যাটি যাতে দ্রুত মিটে যায়, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy