দুখু মাঝি। — নিজস্ব চিত্র।
পরিবারের আর্থিক অনটনে প্রথাগত শিক্ষা এগোয়নি। নিজে মুখেই তা স্বীকার করেন। কিন্তু কম বয়সে এক পুলিশকর্তা তাঁর মনে পরিবেশ সচেতনতার যে বীজ পুঁতেছিলেন, তাকে অতি যত্নে লালনপালন করে আজ মহীরুহে পরিণত করে ফেলেছেন পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের সিঁদরি গ্রামের বাসিন্দা দুখু মাঝি। ৭৮ বছর বয়সেও তাঁর ধ্যানজ্ঞান গাছ। প্রকৃত অর্থেই ‘গাছদাদু’ হয়ে ওঠা রুখু মাটির দুখু মাঝি এ বার পাচ্ছেন পদ্মশ্রী সম্মান।
আরণ্যকের যুগল প্রসাদকে মনে আছে? দুর্গম জায়গা থেকে গাছ নিয়ে এসে নদীর ধারে এবং অন্যত্র লাগাতেন। যুগল প্রসাদেরা কিন্তু আজও বেঁচে আছেন। পুরুলিয়ার পিছিয়ে পড়া ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম বাঘমুন্ডি। এই ব্লকের রুক্ষ পাহাড়ি মাটিতে ভাল ফসল হয় না। মাইলের পর মাইল রুক্ষ জমি পড়ে থাকে বিলকুল অনাবাদি। এই ব্লকেরই সিঁদরি গ্রামের বাসিন্দা দুখু, তিনিই এ যুগের যুগল প্রসাদ। পেশায় সামান্য কৃষিজীবী। আর নেশা গাছ লাগানো। কিন্তু কোথা থেকে পেলেন এই নেশা? দুখুর কথায়, ‘‘তখন বয়স পঁচিশ-তিরিশ হবে। এক জন বড় অফিসারের মুখে শুনলাম গাছ নাকি অক্সিজেন না কী একটা দেয়! কিন্তু এই অক্সিজেন কী, কিছুই জানতাম না। কথার ফাঁকে অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম। উত্তরে বললেন, এর জন্যই তো আমরা শ্বাস নিতে পারি।’’ বড় অফিসারের সেই কথা যুবক দুখুর মনে ধরেছিল। সবটা না বুঝলেও সেই থেকেই গাছ লাগানোর নেশা চাপে তাঁর মাথায়। তা চলছে এখনও। তাঁর হাতে এলাকায় কমপক্ষে কয়েক হাজার গাছ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। দুখুর লাগানো গাছের মধ্যে বেশির ভাগই বট, আম আর জাম। ৭৮ বছর বয়সে এখনও সকাল হলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকে মাটি খোঁড়ার কোদাল, গাঁইতি। শুধু গাছের চারা পুঁতে দায় সারা নয়, সেই গাছকে বড় করে তোলা পর্যন্ত চলে দুখুর অদম্য লড়াই। আর সেই নেশাই তাঁকে পরিচিতি দিয়েছে ‘গাছদাদু’ নামে। বন দফতরও তাঁকে আগে সম্মানিত করেছে। এ বার পেলেন পদ্মসম্মান।
ভারত সরকার প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে পদ্মশ্রী সম্মানের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ‘গাছদাদু’র কাজকে। পদ্মশ্রী সম্মান পাওয়ার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে, ৭৮ বছরের গাছ দাদুর উত্তর, ‘‘ভালই লাগছে। এমনটা হতে পারে কখনও তো ভাবিনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমি যত দিন বেঁচে থাকব, তত দিন এ ভাবেই গাছ লাগিয়ে যাব।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর আক্ষেপ, ‘‘একটা গাছ কাটলে কমপক্ষে পাঁচটা গাছ লাগাতে হবে, কিন্তু সে কথা কেউ শোনে না। কেউ মানতেও চায় না। এমন চলতে থাকলে একদিন সকলকে অক্সিজেন কিনতে দোকানে যেতে হবে! সেটা কি ভাল হবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy