সিউড়ি হাসপাতাল চত্বর থেকে দোকান সরিয়ে নিচ্ছেন দখলদারেরা। —তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
কয়েক যুগ ধরে যে কাজে হাত দেয়নি পুরসভা, সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এক রোগীর মৃত্যুর পরে এ বার সেই কাজেই হাত দিল তারা।
মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিসে সিউড়ি জেলা হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষে থাকা নিকাশি নালার পুনরুদ্ধারে নামল পুরসভা। শুক্রবার রাতেই মাইকে প্রচার চালিয়ে প্রায় একশোটিরও বেশি দখলদার দোকানকে উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারা। ওই দখলদারির জেরে হাসপাতালের ওই গুরুত্বপূর্ণ নালাটির অস্তিত্বই কার্যত মুছে গিয়েছিল। দখলমুক্ত হওয়ার পরেই শুরু হবে নালাটির সংস্কারের কাজ। সিউড়ির নতুন পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় শনিবারই পরিষ্কার করে দিয়েছেন, ‘‘নিজেরাই ওই সব দোকান সরিয়ে নিলে ভাল। তা না হলে প্রশাসনের উপস্থিতিতে আজ রবিবার সকাল ১০টা থেকেই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। অভিযানের সময় পুলিশ এবং মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) অরুন্ধতী ভৌমিক উপস্থিত থাকবেন।’’
ঘটনা হল, দখলদারির জেরে বহু দিন থেকেই জেলা সদরের হাসপাতালের নিকাশি ব্যবস্থার হাল ভীষণ খারাপ। যত রকম অস্থায়ী দোকান সবই ওই নিকাশি নালার উপর। কী নেই সেখানে? অস্থায়ী হোটেল, চা-তেলেভাজার দোকান তো রয়েইছে, সঙ্গে মনোহারি দ্রব্য, ফল, পান-সিগারেট, মোবাইল রিচার্জ কুপন থেকে মাছ-সব্জি— সবই মিলবে সেখানে। হাসপাতাল চত্বরের ওই ‘হাটবাজারে’র জেরে সীমানা প্রাচীর লাগোয়া হাসপাতালেরর নিকাশি নালাটাই মজে গিয়েছে বহু দিন আগেই।
অভিযোগ, পুরসভার ক্ষমতায় যখন যে দল থেকেছে, সেই দলের একাংশের মদতে একের পর এক দোকান গজিয়ে উঠেছে নিকাশি নালার ঠিক উপরেই। অনিবার্য ভাবে একটু বৃষ্টি হলেই মূল গেটের সামনে হাঁটুজল জমে। জমে থাকা নোংরা জল ভেঙেই যাতায়াত করতে হয় রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের। সঙ্গে মশাদের নিরাপদ আঁতুরঘর। বহু অভাব অভিযোগ করেও ফল পাননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমান পুরকর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি। তিনি বলছেন, ‘‘এটা একটা খুব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, নিকাশি নালা আটকে দখলদারি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ ছিল জেলা প্রশাসন। প্রশাসন বারবার চেয়েছে এই হাসপাতালের নিকাশি ব্যবস্থা যেন ঠিক থাকে। কিন্তু পুরসভা এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে একটু দ্বিধায় ছিল। যদিও শুক্রবার হাসপাতালে এক ডেঙ্গি রোগীর মৃত্যুর পরে কড়া পদক্ষেপ করতে দেরি করেনি পুরসভা। তবে, সমস্যা একটা থাকছেই। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ‘‘শুধুমাত্র হাসপাতালের ওই সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেই নয়, দখলদারি রয়েছে স্থানীয় তিলপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ঢুকে থাকা হাসপাতালের সীমানা প্রাচীর ঘেঁষেও। সেখানে কার্যত যে বস্তি এলাকা গড়ে উঠেছে, তাদের পরিবারগুলির অধিকাংশের অস্থায়ী শৌচাগার ওই নিকাশি নালাটিই।’’ একই বক্তব্য উচ্ছেদের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ীদেরও।
এ দিকে, এত দিন ধরে ওই এলাকায় যাঁরা অস্থায়ী ভাবে দোকান চালাচ্ছেন, তাঁরা শনিবার পুরপ্রধানের কাছে দরবার করে একটু সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু পুরসভা নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরবে না জানিয়ে দেন পুরপ্রধান। পুরসভার মনোভাব দেখে পিছিয়ে আসেন দখলদারেরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে তাঁরা নিজেরাই উঠে যাবেন বলে জানিয়েছেন শফিকুল ইসলাম, রবি পাল, বাবু বড়ুয়া, মকুল মণ্ডলেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রশাসনকে সহযোগিতা না করে উপায় নেই। তবে আমাদের এতগুলো পরিবারের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পুরসভার কাছে অনুরোধ করব, হাসপাতালের গা ঘেঁষে থাকা তিলপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার দখলদারিও যেন হটানো হয়। তা না হলে হাসপাতালের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি হবে না।’’
পুরসভার পদক্ষেপে খুশি সিউড়ি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও। তাঁরা এ দিন বলছেন, ‘‘হা,পাতালের নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজা হলে প্রত্যেকেরই ভাল হবে।’’ তবে, হাসপাতালের আবাসনে বসবাস করা চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, জেলা হাসপাতাল চত্বরে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়তে আসা ঠিকাদার সংস্থা আবাসনের কাছে বহু জায়গায় মাটিতে গর্ত খুঁড়ে রেখেছে। সেখানে জল জমে মশাদের বংশ বিস্তারে সুযোগ করে দিচ্ছে। সেই ছবিটা বদলাতেও প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy