শনিবার রাতে। ছবি তুলেছেন বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
বেশ কয়েকদিন ধরে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বোলপুর শান্তিনিকেতনবাসীর রাতের ঘুম কেড়েছে। সপ্তাহের শেষে শনিবার রাতে সহকর্মী চিত্র সাংবাদিকের সঙ্গে বোলপুর ও শান্তিনিকেতনের যে এলাকাগুলিতে ইদানিং সবচেয়ে বেশি চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে সেগুলি নিজেরা দেখতে বেরোলাম।
শনিবার রাত ১১:৩০ মিনিট: ফাঁকা বোলপুর স্টেশন। একটিমাত্র চায়ের দোকান খোলা। স্ট্যান্ডে কয়েকটি বাইক ও সাইকেল। ট্রেনের যাত্রীদের জন্য অপেক্ষারত কয়েকজন টোটো চালক। একাকী মহিলা জানালেন, এত চুরি, ছিনতাইয়ে ভয় করলেও হোটেল অবধি পৌঁছতে হবে।
রাত ১১:৪৫ মিনিট: হাওড়া- জামালপুর এক্সপ্রেস ঢুকল স্টেশনে। যাত্রী, শিক্ষক সৌগত মুখোপাধ্যায় জানালেন, প্রায়ই এই সময়ে বা আরও পরে বোলপুরে ফেরেন। ফাঁকা রাস্তায় কখনও পুলিশ নজরে পড়েনি তাঁর। টোটো চালকদের অভিজ্ঞতাও এক।
রাত ১২:১৫ মিনিট: সুনসান বোলপুর বাসস্ট্যান্ড। দেখা মিলল এক নাইট গার্ডের। পাড়ায় রাত পাহারায় টর্চ হাতে বাঁশি বাজিয়ে ঘুরছিলেন তিনি। পুলিশকে টহল দিতে দেখেছেন কী না জানতে চাওয়ায় না বললেন।
রাত ১২:৩০ মিনিট: জামবুনি বাসস্ট্যান্ড থেকে শ্রীনিকেতনের পথে দেখা কয়েকজন কলেজ পড়ুয়ার সঙ্গে। বন্ধুর জন্মদিনের পার্টি সেরে ফিরছিল তারা। পথে পুলিশকে টহল দিতে দেখেছে বলে জানায় তারা।
রাত ১২:৪৫ মিনিট: শ্রীনিকেতনের চারমাথা মোড়ে দাঁড়ালাম। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও পুলিশের টহলদারি ভ্যান দেখতে পেলাম না। টাইগার বাহিনীর মোটরবাইকও নজরে এল না।
রাত ১:১০ মিনিট: পৌঁছলাম বোলপুর পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সুকান্তপল্লিতে। যেখানে মাত্র ছ’দিনের ব্যবধানে চারটি বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে পুলিশের টহল তো দূরের কথা আরজি পার্টি বা একজন নাইট গার্ডও নজরে এল না। কনকনে হাওয়া নিস্তব্ধতাকে আরও বেশি করে জানান দিচ্ছিল।
রাত ১:৩৫ মিনিট: শান্তিনিকেতনের পোস্টঅফিস মোড়। ফাঁকা রাস্তা। আলো-আঁধারিতে বেশিদূর ঠাহর হয় না। তার মধ্যেই একপাক ঘুরে এলাম। পুলিশের নজরদারির লেশমাত্র নেই। শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ির সামনের রাস্তায় যাওয়ার পথে দেখা মিলল বিশ্বভারতীর এক নিরাপত্তারক্ষীর। তিনি জানালেন, টাইগার বাহিনীর তিনটি বাইক একবার এই পথে টহল দিয়ে গিয়েছে।
অপরাধনামা
•৮ ই এপ্রিল: বোলপুরের কালীমোহন পল্লিতে অর্জুন নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে চুরি।
•২৪ এপ্রিল: কালীমোহন পল্লির ওই স্কুলে ফের চুরি।
•৯ জুলাই: বোলপুর স্কুলবাগানে ফাঁকা বাড়িতে সমস্ত জিনিস চুরি করে বাড়িতে আগুন।
•সেপ্টেম্বর: শান্তিনিকেতন অবনপল্লিতে একটি ফাঁকা বাড়িতে চুরি।
•৫ সেপ্টেম্বর: বোলপুরের কালিকাপুরে চুরি।
•অক্টোবর: শান্তিনিকেতনে রতনপল্লিতে ফাঁকা বাড়ি থেকে চুরি।
•৯ অক্টোবর: শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে বাড়ি থেকে চন্দন গাছ চুরির চেষ্টা।
•২২ অক্টোবর: শান্তিনিকেতন সীমান্তপল্লিতে অধ্যাপকের বাড়িতে চুরি।
•১৭ অক্টোবর: বোলপুরের সবুজপল্লিতে ফাঁকা বাড়িতে চুরি।
•৬ নভেম্বর: বোলপুরের কালীমোহন পল্লিতে অর্জুন নিম্ন বুনিয়াদি স্কুলে ফের চুরি। এ বার চুরি িমড-ডে মিল তৈরির সরঞ্জাম।
•২৩ নভেম্বর: বোলপুরের সুকান্তপল্লিতে চুরি।
•২৪ নভেম্বর: শান্তিনিকেতনের পারুলডাঙায় চুরি।
•২৫ নভেম্বর: বোলপুরের সুকান্তপল্লিতে ফাঁকা বাড়িতে চুরি।
•২৬ নভেম্বর: সুকান্তপল্লিতে আরেকটি ফাঁকা বাড়িতে চুরি।
•২৭ নভেম্বর: বোলপুরের সীমান্তপল্লিতে পুলিশকর্মীর বাড়িতে চুরি।
ছিনতাই
২১ জুলাই: পুলিশ সেজে এক বৃদ্ধার কাছ থেকে হার ছিনতাই বোলপুর দমকল অফিস সংলগ্ন জয়পুর যাওয়ার রাস্তায়।
২৭ নভেম্বর: বিশ্বভারতীর কেরলের ছাত্রীর ব্যাগ ছিনতাই শান্তিনিকেতনের রাস্তায়।
২৭ শে নভেম্বর: শান্তিনিকেতনের সুরুলের পশ্চিমপাড়ায় বৃদ্ধকে মারধর করে ছিনতাই।
রাত ১:৫০ মিনিট: শ্যামবাটি পেরিয়ে খোয়াইয়ের হাটে যাওয়ার মুখে দেখা মিলল পুলিশের নাইট সুপারভিশন গাড়ির। একজন এসআই ও তিনজন কনস্টেবলকে পথে নাকা চেকিং করতে দেখা গেল। তাঁরা জানালেন, পুলিশের টহলদারি জারি আছে। নিজেদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগও রাখছেন তাঁরা।
রাত ২:১৫: প্রান্তিকের পথে কয়েকজন পুলিশকে দেখা গেল। প্রান্তিক থেকে শ্যামবাটির রাস্তা ধরে শান্তিনিকেতন হয়ে বোলপুরের পথ সম্পূর্ণ ফাঁকা। পাড়ার রাস্তাগুলোতেও টহলদারির বালাই নেই।
রাত ২:৩০ মিনিট: বোলপুর চৌরাস্তার কাছে এসে দেখা মিলল টাইগার বাহিনীর। পিছু নিলাম। দ্রুত গতিতে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে তারস্বরে হুটার বাজিয়ে টহলদারি চলল। ভোর ৩টে নাগাদ বোলপুর থানার আইসি-সহ কয়েকজন পুলিশ কর্মীর সঙ্গে রাস্তায় দেখা। একের পর এক চুরির ঘটনায় টহল দিতে বেরিয়েছেন। জানালেন, শহর জুড়ে ঘুরছেন। অপরিচিত লোক দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
ভোরের আলো ফোটার তখনও দেরি। পাখি ডাকতে শুরু করেছে। স্টেশনের রাস্তায় শিলিগুড়ির এক যুবক পথ ভুল করেছিলেন। তাঁকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে ফিরলাম আমরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy