নিহত সুচিত্রা। —নিজস্ব চিত্র।
মহম্মদবাজারের তরুণী সুচিত্রা বাগদি দাসের ‘রহস্যজনক’ খুনের ঘটনায় তাঁরই স্বামীর বিরুদ্ধে ‘পরিকল্পনা’ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করলেন নিহতের বাবা নিত্য বাগদি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দাম্পত্য অশান্তি খুনের নেপথ্যে থাকতে পারে। অভিযুক্ত সন্দীপ দাস এখনও সিউড়ি জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বীরভূমের পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় ফোন ধরেননি। ফোনে পাঠানো বার্তারও উত্তর দেননি। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকা সন্দীপের বক্তব্যে বিস্তর অসঙ্গতি রয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সেখান থেকেই সূত্র মিলবে আশা করা যায়।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘটনার পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে প্রথমে নিজের শ্বশুরবাড়িতে খবর দেন সন্দীপ। তার পরেই স্থানীয়রা ও পুলিশ বিষয়টি জানাতে পারে। কী ভাবে খুন হয়েছেন সুচিত্রা, তা স্পষ্ট করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের আধিকারিকেরা। তবে, শ্বাসরোধ করে মারার সম্ভাবনা জোরাল হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। ময়নাতদন্তের পরে বুধবার সুচিত্রার পরিবারের হাতে তাঁর দেহ তুলে দেওয়া হয়। স্থানীয় দ্বারকা নদের শ্মশানঘাটে শেষকাজ সম্পন্ন হয় রাতে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহম্মদবাজার থানার হিংলো গ্রামের বাসিন্দা সন্দীপের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বছর কুড়ির সুচিত্রার। কাঠের কাজ শিখছিলেন সন্দীপ। সুচিত্রার বাপের বাড়ি মহম্মদবাজারেরই সেকেড্ডা পঞ্চায়েতের দ্বারকোটা গোলারপাড়ায়। পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাপের বাড়ি থেকে সন্দীপের সঙ্গে মোটরবাইকে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন সুচিত্রা। মহম্মদবাজারের সালুকা থেকে ডেউচা যাওয়ার সেচখালের বাঁ দিকে একটি সর্ষে খেতের মধ্যে থেকে সুচিত্রার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেখানেই ‘জখম’ ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায় সন্দীপকে। সুচিত্রার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় সিউড়ি হাসপাতালে। সন্দীপকেও সেখানেই ভর্তি করানো হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, সন্দীপ বারবার দাবি করেছেন, বাড়ি ফেরার পথে কয়েক জন দুষ্কৃতী তাঁদের পথ আটকে বাইক থেকে নামিয়ে মারধর করে। সন্দীপের হাত-মুখ বেঁধে দেয় এবং সুচিত্রাকে খুন করে। পরে তাঁর বাইক নিয়ে আততায়ীরা চলে যায় বলেও সন্দীপের দাবি। সেই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত নন সুচিত্রার বাপের বাড়ির সদস্যেরা। পুলিশের দাবি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বক্তব্য বদল করেছেন ওই যুবক। অসঙ্গতিও বেড়েছে।
বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, সেচখালের ধারের রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি ঘেঁষে পড়ে রয়েছে নিহত সুচিত্রার চটি জোড়া এবং সন্দীপের হেলমেট। বাঁ দিকে প্রথমে পেঁয়াজের খেতের মধ্যে উভয়ের জুতোর দাগ। একটু দূরের সর্ষে খেতের মধ্যে সুচিত্রার দেহ পড়েছিল। সেখান থেকে কিছুটা দূরে পাওয়া যায় সন্দীপের মোটরবাইক। তদন্তের স্বার্থে ফরেন্সিক দলের আসার অপেক্ষায় সব ক’টি জায়গা ঘিরে রেখেছে পুলিশ।
কয়েকটি বিষয় তদন্তকারীদের ভাবাচ্ছে। প্রথমত, সেকেড্ডা থেকে হিংলো পর্যন্ত বিকল্প ভাল রাস্তা থাকা সত্ত্বেও কেন তরুণী স্ত্রীকে নিয়ে সেচখালের পাড় বরাবর নির্জন রাস্তা ‘বেছে’ নিয়েছিলেন ওই যুবক। দ্বিতীয়ত, তদন্তকারীরা জেনেছেন, ওই পথ দিয়ে না যাওয়ার জন্য বারবার সন্দীপকে বারণ করা হয়েছিল। তৃতীয়ত, যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, সেখানেও গরমিল রয়েছে। চতুর্থত, ছিনতাইকারীদের আক্রমণের যে বর্ণনা সন্দীপ দিচ্ছেন, সেটারও কোনও প্রমাণ মেলেনি বলে পুলিশের দাবি। কারণ, বাইক আদৌ ছিনতাই হয়নি। কাছেই পড়েছিল। তা ছাড়া, সন্দীপের তেমন চোটআঘাত নেই বলেই হাসপাতাল থেকে জেনেছে পুলিশ। যদিও সন্দীপ চোট আঘাতের দাবি করায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো হয়েছে হাসপাতালে। শুধু কেন সুচিত্রাকেই খুন করা হল, সে প্রশ্নও বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘটনার তদন্তে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy