Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

ভিড়ে ঠাসা মাঠ দাপাল কাশীপুরের কন্যাশ্রীরা

শুক্রবার কাশীপুর পঞ্চকোটরাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তখন উপস্থিত রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস, রঘুনাথপরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়, কাশীপুরের বিডিও মানসী ভদ্র চক্রবর্তী-সহ অন্য অতিথিরা।

তাক্: কাশীপুর পঞ্চকোটরাজ হাইস্কুল মাঠে। নিজস্ব চিত্র

তাক্: কাশীপুর পঞ্চকোটরাজ হাইস্কুল মাঠে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাশীপুর শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২৬
Share: Save:

দুপুরের আগে থেকেই দু’দলের সমর্থকেরা মাঠে হাজির। হাজার হোক গাঁয়ের মেয়েরা মাঠে নামছে। তাই গলা ফাটাতে সবাই তৈরি হয়েই এসেছিলেন। দর্শকাসনের সেই টান টান উত্তেজনার মধ্যে মাঠে নামল ঘাটরাঙামাটি উচ্চ বিদ্যালয় ও সোনাইজুড়ি আঞ্চলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েরা।

শুক্রবার কাশীপুর পঞ্চকোটরাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে তখন উপস্থিত রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো, জেলা পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস, রঘুনাথপরের মহকুমাশাসক দেবময় চট্টোপাধ্যায়, কাশীপুরের বিডিও মানসী ভদ্র চক্রবর্তী-সহ অন্য অতিথিরা। ঘাটরাঙামাটির মেয়েদের পরনে গাঢ় নীল জার্সি ও প্যান্ট, হালকা নীল জার্সি ও আকাশি প্যান্টে সোনাইজুড়ির মেয়েরা। গোড়া থেকেই দু’দল মাঠ দাপাতে শুরু করেছিলেন। ১১ মিনিটে সরলা হাঁসদা সতীর্থের কর্নার থেকে হেডে ঘাটরাঙামাটিকে এক গোলে এগিয়ে দিলেন। ঠিক তার আগেই দর্শকাসনে বসা বিধায়ক স্বপনকুমার বেলথরিয়া বলছিলেন, ‘‘এই কর্নার থেকে ঘাটরাঙামাটি লিড নিতে পারে।’’ বলতে বলতেই বল জালে। ঘোষক তখন চিতকার করছেন— ‘‘গো-ও-ল’’।

দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই দু’দলই একাধিক সুযোগ পেলেও কেউই গোল দিতে পারছিল না। সবাই যখন হতাশ হতে শুরু করেছেন, ঠিক সেই সময়েই সোনাইজুড়ির শর্মিলা মুর্মু ঘাটরাঙামাটির জালে বল জড়িয়ে দেয়। বিপক্ষের গোলের মুখে জটলা থেকে বল পেয়ে নিয়ন্ত্রণে রেখে ঠান্ডা মাথায় ১-১ করে ম্যাচের সমতা ফেরায় শর্মিলা। নির্ধারিত সময়ে আর কোনও গোল হয়নি।

ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে অবশ্য ৩-০ গোলে ম্যাচ জিতে নেয় ঘাটরাঙামাটি। ‘‘শুরু থেকে প্রত্যাশা জাগিয়ে শেষ করল একেবারে নিজেদের মতো করেই’’— বলছিলেন সমর্থকেরা।

আগামী বছরের কন্যাশ্রী কাপের প্রস্তুতি হিসেবে কাশীপুর ব্লকের এ দিন ফাইনাল খেলা ছিল। এই কন্যাশ্রী কাপের উদ্যোক্তা কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতি। সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘ঘাটরাঙামাটি এবং আরও বেশ কয়েকটি স্কুলের মেয়েরা প্রতিযোগিতায় যথেষ্ঠ ভাল খেলেছে।’’ বিকাশ মাহাতো নামে এক শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া, ‘‘স্কুলের পাঠ চুকিয়ে, ঘরের কাজ সামলে এত মেয়ে মাঠমুখী হয়েছে, সেটাই তো এই কাপের সাফল্য। কে চ্যাম্পিয়ন হল, সেটা বড় কথা নয়।’’

সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘এবার জেলাস্তরের কন্যাশ্রী ফুটবল শেষ হয়ে গিয়েছে. আগামীবারের প্রস্তুতির লক্ষ্যে এই প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা থেকে পঞ্চাশ জন মেয়েকে বেছে নিয়ে আগামী তিন মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই বাছাই করতেই এই প্রতিযোগিতা।’’

এ দিন ফাইনালের আগে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, জনপ্রতিনিধি, ক্রীড়াপ্রেমী-সহ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন কাশীপুরে একটি পদযাত্রায় যোগ দেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কন্যাশ্রীর থিম সং গাইতে গাইতে পদযাত্রা পরিক্রমা করে। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘এই যে এত মেয়ে মাঠে নেমে ফুটবল খেলছে, এটাই কন্যাশ্রীর সাফল্য।’’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ফুটবলের উন্মাদনা সত্যিই আলাদা। মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্প গ্রামের মেয়েদের মধ্যে কতটা আত্মবিশ্বাস তৈরি করেছে, তা মেয়েদের হাঁটাচলাতেই
সেটা পরিষ্কার।’’

রঘুনাথপরের মহকুমাশাসক জানান, এই প্রতিযোগিতা থেকে বাছাই করা মেয়েদের নিয়ে কন্যাশ্রী-স্বাবলম্বী নামে যে পাইলট প্রকল্প পুরুলিয়াতে শুরু হয়েছে, সেই প্রকল্পের অধীনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Football match School girls kanyashree
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE