Advertisement
E-Paper

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় সিন্ধু সভ্যতার নির্দশন

পুরুলিয়া ও সংলগ্ন জেলার প্রত্নবস্তু, হস্তশিল্পের সামগ্রী, প্রত্নস্থলের বিভিন্ন নিদর্শনের ছবি-সহ লোক-সাংস্কৃতিক উপাদান রয়েছে সংগ্রহশালায়।

এসেছে এই সব নিদর্শন।

এসেছে এই সব নিদর্শন। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২২ ০৮:৩১
Share
Save

পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব, শিল্পকলা ও লোক-সংস্কৃতি বিষয়ক সংগ্রহশালায় যুক্ত হল সিন্ধু সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন। দিল্লি নিবাসী অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী সান্দীপনি ভট্টাচার্য তাঁর নিজস্ব সংগ্রহ থেকে নির্দশনগুলি সংগ্রহশালার জন্য দিয়েছেন, জানাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মহেঞ্জোদড়োর সভ্যতা আবিষ্কারের শতবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় নিদর্শনগুলির অন্তর্ভুক্তিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

পুরুলিয়া ও সংলগ্ন জেলার নানা প্রত্নবস্তু, হস্তশিল্পের সামগ্রী, প্রত্নস্থলের বিভিন্ন নিদর্শনের প্রাচীন ছবি-সহ জেলার লোক-সাংস্কৃতিক নানা উপাদান রয়েছে ওই সংগ্রহশালায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপককুমার কর ও রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এ বারে সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শনগুলিও সেখানে যুক্ত হচ্ছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়। উপাচার্য বলেন, “সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় যুক্ত হচ্ছে। এটা আমাদের কাছে শুধু আনন্দের নয়, গর্বেরও বিষয়। নিদর্শনগুলি সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করবে।”

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ‘ডিন’ সোনালি মুখোপাধ্যায় সান্দীপনিবাবুর কাছ থেকে নিদর্শনগুলি নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, “দশটি নিদর্শন তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি। সেগুলির মধ্যে প্রস্তর নির্মিত ঘনকাকৃতি বাটখারা, মাটির ছাঁকনির মতো জিনিস, পোড়ামাটির বালা, মাটির ‘কেক’, যা আগুনের তাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হত; ‘ডিশ অন স্ট্যান্ড’, যা হরপ্পা সভ্যতার নিজস্ব তৈজস; কুমোরের চাকায় নির্মিত মাটির পাত্র, ‘হাকরা ওয়ার’, যা সূক্ষ্ম কোনও জিনিস দিয়ে ঢেউ খেলানো পদ্ধতিতে কারুকাজ করা মাটির পাত্র রয়েছে।”

তিনি আরও জানান, এর সঙ্গে দারুণ কারুকাজ করা একটি মাটির পাতলা পাত্রও আছে, যেটির কানায় গাঢ় বাদামি রঙের প্রলেপ রয়েছে। ঘর্ঘরা নদীর ধারে ধ্বংসাবশেষ এলাকায় এমন নিদর্শন মেলে। সে সময়ে অভিজাত লোকেরাই এমন সামগ্রী ব্যবহার করতেন। পাঁচ হাজার বছরেও কারুকাজ এতটুকু মলিন বা বিবর্ণ হয়নি, যা দেখে অবাক হতে হয়। এ সব তথ্য সান্দীপনিবাবুর কাছেই মিলেছে বলে জানিয়েছেন সোনালিদেবী।

সংগ্রহশালার দায়িত্বে থাকা শর্মিলা গুপ্ত বলেন, “সান্দীপনিবাবুর সংগ্রহে সিন্ধু সভ্যতার একাধিক নিদর্শন রয়েছে জানার পরে, উপাচার্য নিজে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। উনি নিদর্শনগুলি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ।” বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন আধিকারিক গুরুদাস মণ্ডলও নির্দশনগুলির অন্তর্ভুক্তিতে সংগ্রহশালা সমৃদ্ধ হল বলে জানিয়েছেন।

আদতে নৈহাটির কাঁঠালপাড়ার বাসিন্দা সান্দীপনিবাবুর নেশা সিন্ধু সভ্যতা অঞ্চল ঘুরে ক্ষেত্রসমীক্ষা করে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান সংগ্রহ করা। তাঁর কথায়, “সিন্ধু সভ্যতার অঞ্চল অর্থাৎ, রাজস্থান, গুজরাত ও হরিয়ানার নানা প্রান্তে ঘুরে ওই সভ্যতার বেশ কিছু নিদর্শন সংগ্রহ করেছি। নিদর্শনগুলি পরে, বিশেষজ্ঞদের দেখিয়ে নিশ্চিত হয়েছি যে, সেগুলি সে সময়েরই। তা ছাড়া, সিন্ধু সভ্যতায় যে ধরনের নিদর্শন মিলেছিল, ওই এলাকা থেকে পাওয়া নিদর্শনগুলির সঙ্গে সেগুলির হুবহু মিল রয়েছে।” তিনি আরও জানান, চলতি বছরে মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতা আবিষ্কারের শতবর্ষ চলছে। সংগ্রহে থাকা কিছু নির্দশন পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার জন্য তুলে দিয়েছেন। নিদর্শনগুলি রাজস্থান, গুজরাত ও হরিয়ানা থেকে সংগ্রহ করা। “নিদর্শনের জন্য সিন্ধু সভ্যতা অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানো আমার নেশা। তবে আক্ষেপ, নিদর্শনগুলির সে ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না। পুরুলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় আগ্রহ দেখানোয় খুশি”, সংযোজন তাঁর।

জেলার ইতিহাস গবেষক তথা পুরুলিয়া হরিপদ সাহিত্য মন্দিরের সংগ্রহশালার দায়িত্বে থাকা দিলীপ গোস্বামী বলেন, “সান্দীপনিবাবুকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এ বার পুরুলিয়াতেই নিদর্শনগুলি চাক্ষুষ করতে পারবে। গবেষকেরাও উপকৃত হবেন।”

Indus Valley Civilization heritage

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}