শোনা কথায়: গুজব রটতেই তা হাজির হাসপাতালে। বুধবার বিষ্ণুপুরে। ছবি: শুভ্র মিত্র
সকাল থেকে লম্বা লাইন বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দরজার সামনে। সাপের মতো এঁকে বেঁকে লম্বা লাইন চলে গিয়েছে হাসপাতাল সুপারের ঘরের দরজা পর্যন্ত। বুধবার সকালে এই দৃশ্য দেখে অনেকেই তাজ্জব হয়ে যান। হলটা কী? কাছে গেলেই ভ্রম ভাঙল। তাঁরা সিভিক ভলান্টিয়ারের কর্মপ্রার্থী। প্রত্যেকের হাতে একটা করে মেডিকেল রিপোর্টের ফর্ম। হাসপাতাল থেকে তাঁরা মেডিক্যাল অফিসারের সই করাতে এসেছেন। যদিও দিনের শেষে জানা যায়, সবটাই গুজব। আর সেই গুজবে তাঁরা যেমন ভুগলেন, তেমনই তাঁদের ভিড়ে হাসপাতালের পরিষেবাও ব্যাহত হল।
তাঁদের দাবি, অন্য কর্মপ্রার্থীদের কাছে তাঁরা শুনেছেন, হাসপাতাল থেকে ডাক্তারের সই লাগবে। সেই ফর্ম বিক্রি হচ্ছে আশপাশের ফটোকপির দোকানে। দু’টাকা দিয়ে সেই ফর্ম কিনে তাঁরা দৌড়োচ্ছেন হাসপাতালে। এ দিকে, কর্মপ্রার্থীদের সই করানোর ঠেলায় রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অবস্থা কাহিল। ডাক্তাররা এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন। গুরুত্বপূর্ণ জরুরি বিভাগের দরজায় থিক থিকে ভিড়। পা ফেলার জায়গা নেই। হাসপাতালের দৈন্যন্দিন কাজ লাটে ওঠার জোগাড় হয়।
কিন্তু দিন ভোর এ সব চলল স্রেফ গুজবে, আর কিছু ফটোকপির দোকানদার নেপোর মতো দই খেয়ে গেল? প্রশ্ন ভুক্তভোগীদের? বিষ্ণুপুর থানার আইসি আস্তিক মুখোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘কে বলেছে মেডিকেল রিপোর্ট দরকার? কোথাও তো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি? সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের জন্য যা যা দরকার থানার দেওয়ালে সাঁটানো রয়েছে।’’ শেষে থানায় মাইকে ঘোষণা করা হয়, কেউ হাসপাতালে মেডিকেল রিপোর্ট সই করাতে ভিড় করবেন না। মেডিকেল রিপোর্ট এখন লাগবে না। এখন শুধু ফর্ম পূরণ করে জমা দিলেই হবে। হাসপাতালের স্বাভাবিক চিত্র ফিরতে দুপুর হয়ে যায়।
হাসপাতালের সুপার পৃথ্বীশ আকুলির গলদঘর্ম অবস্থা। তিনি হাঁফ ছেড়ে বলেন, ‘‘যাক বাঁচলাম। সই করতে করতে হাত ব্যথা হয়ে গেল। অনেকেই চাকরির জন্য মেডিকেল ফিট ফর্ম সই করাতে আসেন। তাই সই করে যাচ্ছিলাম। এখন থানা থেকে বারণ করে গেল, আর সই করব না।’’
কিন্তু মেডিকেল রিপোট ফর্ম, জেলা হাসপাতালের লেটার হেডে ছাপা নথি— এ সব বিষ্ণুপুর শহরের বিভিন্ন পাড়ার পান গুমটি থেকে ফটোকপির দোকানে অবাধে বিক্রি হল কী করে? উত্তরে সুপার বলেন, ‘‘তাই না কি! জানি না তো। এটা তো উচিত নয়।’’
ততক্ষণে থানা চত্বর ও আশপাশে যুবক-যুবতীদের ভিড় উপচে পড়া অবস্থা। সংখ্যাটা বেশ কয়েক হাজার। থানার দেওয়ালে লেখা— ‘বিষ্ণুপুর থানায় নিয়োগের শূন্য পদ চার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy