ব্রিজেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তুলছে গাড়ি। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
যানজটে দুর্ভোগের যেন শেষ নেই, তারাপীঠের পুজো দিতে আসা ভক্তদের।
দ্বারকা নদের উপরই তারাপীঠের সেতু। সেতুর এপারে কবিচন্দ্রপুর মোড় পেরিয়ে ওপারে একদিকে তারাপীঠ মন্দির যাওয়ার রাস্তা, অন্যদিকে মুণ্ডমালিনী তলা যাওয়ার পথ। এই দুই রাস্তা পৌঁছতে নিত্যদিনের যানজট। সেই জটে দিনের পর দিন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তারাপীঠের দর্শনার্থীদের।
এই নাকাল শুধু বাইরে আসা মানুষের নয়, যানজটে চূড়ান্ত দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছেন বুধিগ্রাম, সাঁইথিয়া, কোটাসুর, ময়ূরেশ্বর এবং লাগোয়া মুর্শিদাবাদের কান্দি মহকুমার যাত্রীদেরও। কী বলছে প্রশাসন?
প্রশাসনের মতে, রামপুরহাট থেকে তারাপীঠের মধ্যে চলাচলকারী অটো ও ট্রেকারগুলি যানজটের জন্য অনেকাংশ যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী তারাপীঠ দর্শনে বাইরে থেকে যাত্রীদের নিয়ে আসা বাস বা অন্য গাড়িগুলি। প্রশাসনেরই কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, তারাপীঠ সেতুর আগে এবং পরে রামপুরহাট–সাঁইথিয়া বাস রাস্তার উপর বেআইনী ভাবে গড়ে ওঠা খাবারের দোকান, রেষ্টুরেন্ট বা ছোটখাটো গুমটি অনেকাংশে যানজটের জন্য দায়ী। এর সঙ্গে, লজ বা বাড়ি নির্মাণের জন্য রাস্তার দু’ধারে ইঁট, বালি, পাথর পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রশাসনের মতে যানজট সমস্যার জন্য এটিও একটি কারণ।
তারাপীঠের যানজট সমস্যা দূর করার জন্য প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময়ে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু পদক্ষেপ গুলি বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি রামপুরহাট মহকুমাশাসকের পক্ষ থেকে তারাপীঠের সৌন্দর্য্যায়নের জন্য তারাপীঠের যানজট সমস্যা দূর করার কাজে রাজ্যের পরিবহন দফতরের কাছে একটি প্রস্তাব-পত্র পাঠানো হয়েছে। সেই চিঠিতে রয়েছে নানা প্রকল্প।
ঘটনা হল, সেই প্রকল্পটি অনুমোদনের আগে পরিবহন দফতরের মুখ্যসচিব থেকে অন্যান্য আধিকারিকরা তারাপীঠ সরেজমিনে পরিদর্শন করে গিয়েছেন। রামপুরহাট মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস বলেন, ‘‘প্রকল্পটির অনুমোদন মিলেছে। পরিবহন দফতর থেকে প্রকল্পের ডিপিআর (ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট ) তৈরি করে পাঠানোর নির্দেশ এসেছে। খুব দ্রুতই প্রকল্পটির রুপরেখা তৈরি করে প্রকল্প বাবদ আনুমানিক ব্যয় নির্ধারণ করে পরিবহন দফতরে পাঠানো হবে।’’
কিন্তু কী সেই প্রকল্প?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তারাপীঠের যানজট সমস্যা দূর করার জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটির রুপরেখায়, তারাপীঠের দ্বারকা সেতুর উপর অটো এবং ট্রেকারের যানজট দূর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে তারাপীঠ দ্বারকা সেতুর অন্য পারে অর্থাৎ তারাপীঠ মন্দির যাওয়ার রাস্তা এবং মুন্ডমালিনী তলা যাওয়ার রাস্তার মুখ থেকে রাস্তার দু’পাশ ৫০ মিটার অংশ লোহার রড দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এবং অটো বা ট্রেকার যাতায়াতের জন্য আলাদা রাস্তা করে দেওয়া হবে। ওই রাস্তায় রানিং অবস্থায় ৬ থেকে ৮টি গাড়ির প্যাসেঞ্জার ওঠানামা করতে পারে, সেই ব্যবস্থাই করা হবে।
তারাপীঠ বাসস্ট্যান্ডে অটো এবং ট্রেকারের স্ট্যান্ড করার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাইরে থেকে আসা ট্যুরিষ্ট বাস স্ট্যন্ডে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তারাপীঠ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে তৈরি হওয়া গ্রামীণ হাটের জায়গায় ছোট গাড়ি পার্কিং করার জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এবং পার্কিং প্লেসের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করার জন্য ইতিমধ্যে রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতিকে নির্দেশ দিয়েছে জেলাপরিষদ। তারাপীঠ ঢোকার আগে আটলা মোড়ে দুটি যাত্রী শেড তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।
এসডিও (রামপুরহাট) উমাশঙ্কর এস-এর দাবি, ‘‘আশা করা যায় নতুন পরিকল্পনায় তারাপীঠে যানজট সমস্যা অনেকটাই মিটবে।’’ পরিবহন দফতরের জেলা আধিকারিক রাজীব মণ্ডল বলেন, ‘‘তারাপীঠকে ঘিরে পরিবহন দফতর বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। সেগুলির কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে।’’
তারাপীঠের যানজট সমস্যা দূর করার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়েছে তারাপীঠ তারামাতা সেবাইত সমিতি। সেবাইত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তারাপীঠকে ঘিরে এর আগে যে সমস্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল সাত আট বছর আগে, সেগুলির বাস্তবায়িত হয়নি। রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ গঠিত হয়েছে। আশা করা যায়, আগামীদিনে তারাপীঠের সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে।’’
(শেষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy