রাইপুরের পচামি গ্রামে খুনের তদন্তে খাতড়ার এসডিপিও। ছবি: উমাকান্ত ধর।
বাড়ির অদূরে গুলিবিদ্ধ হয়ে খুন হলেন এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। রবিবার সকালে বাঁকুড়ার রাইপুর থানার পচামি গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম রূপচাঁদ মান্ডি (৭০)। খবর পেয়ে রাইপুর ও বারিকুল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দেহ উদ্ধার করে।
এ দিন দুপুরে নিহতের স্ত্রী কল্যাণী মান্ডি তাঁর জা হীরামণি মান্ডি ও তাঁর তিন জামাই মনোহর মুর্মু, কালীপদ মুর্মু ও পূর্বনাথ সোরেনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। নিহতের মেয়ে সাগুনের অভিযোগ, তাঁর কাকা এবং খুড়তুতো ভাইয়ের মৃত্যুর পরে থেকে তাঁদের পরিবারের লোকজনেরা রূপচাঁদবাবুর পরিবারকে অপবাদ দিতে শুরু করে। তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে খুনের ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হননি। পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
২০০৭ সালে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকতা থেকে অবসর নিয়েছিলেন রূপচাঁদবাবু। তাঁর তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। দুই মেয়ে বিবাহিত। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, ছোট মেয়ে সাগুন এবং ছেলে সিধু। ২১ বছরের সাগুন সারেঙ্গার পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু স্মৃতি কলেজে সাঁওতালিতে স্নাতকোত্তর স্তরে পড়াশোনা করছেন। সিধুর বয়স ১৩ বছর।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রোজ ভোরে বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে বালিরবাঁধ লাগোয়া মাঠে শৌচকর্ম করতে যেতেন রূপচাঁদবাবু। এ দিন ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঘণ্টা দেড়েক পরেও বাড়ি না ফেরায় সাগুন ভাইকে বাবার খোঁজে পাঠান। বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে মাঠে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বাবার দেহ পড়ে থাকতে দেখে সিধু বাড়িতে খবর দেয়।
দুপুর ১২টা নাগাদ রাইপুর ও বারিকুল থানার পুলিশ গিয়ে দেহটি উদ্ধার করে বক্সি ফাঁড়িতে নিয়ে আসে। ঘটনাস্থলে যান এসডিপিও (খাতড়া) ঈশানী পাল। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, খুনের ঘটনার সঙ্গে মাওবাদী যোগ নেই। তবে আগে থেকে ছক কষে পেশাদার খুনিই কাছ থেকে গুলি করে রূপচাঁদবাবুকে খুন করেছে বলে তাঁদের অনুমান।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “ওই শিক্ষকের মাথায় ও পিঠে দু’টি গুলি লেগেছে। ঘটনাস্থল থেকে দু’টি খালি কার্তুজের খোল উদ্ধার হয়েছে। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরেই তাঁকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। নিহতের স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগ খতিয়ে দেখে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, রূপচাঁদবাবুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশের বড় বাহিনী। গ্রামের বাসিন্দারা পাশে ভিড় করেছেন। বাড়ির দাওয়ায় বসে কাঁদছিলেন কল্যাণীদেবী। সাগুন বলেন, “মাস আটেক আগে মেজ কাকা মোহন মান্ডি মারা যান। মাস চারেক আগে কাকার ছেলে বাবুলালও জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওদের মৃত্যুর পরেই কাকার তিন মেয়ে, জামাই আর কাকিমা আমাদের নামে নানা অপবাদ দিতে শুরু করেন। মাস কয়েক ধরেই দুই পরিবারের মধ্যে এ নিয়ে ঝগড়া চলছিল। আমাদের সন্দেহ, লালগড় থেকে ভাড়াটে খুনি নিয়ে এসে বাবাকে খুন করিয়েছেন মেজ কাকিমা এবং তাঁর তিন জামাই।’’
যাঁদের নামে অভিযোগ সেই মনোহর মুর্মু, কালীপদ মুর্মু এবং পূর্বনাথ সোরেনের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের লালগড় থানার গোহারডাঙা গ্রামে। এ দিন চেষ্টা করেও অভিযুক্ত বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy