নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগে স্মৃতি ভুলে বাঁকুড়ার কালিসেন মোড়ে এসে হাজির হয়েছিলেন তিনি। উসকোখুসকো চুল। গালে কাঁচা-পাকা খোঁচা দাড়ি। পরনে ছেঁড়া পোশাক। পথেঘাটে মুখ থুবড়ে পড়ে থেকে মৃত্যুর সঙ্গে যুঝতে দেখা যায় এমন অনেক চালচুলোহীন অসহায়কে। অহেতুক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় ভয়ে তাঁদের প্রতি সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দেওয়াটাই এখন দস্তুর। এই নিদারুণ অভ্যাসের মাঝেই দৃষ্টান্তমূলক ব্যতিক্রমী নজির গড়লেন ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে ওই ছোট্ট গঞ্জের বাসিন্দারা। এই অচেনা মানুষদের ভালবাসাতেই স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন পথ ভুলে চলে আসা রামু দত্ত।
বাড়ির কথা মনে পড়তেই রামুর বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে। বাবা, মা গত হয়েছেন। বাড়িতে রয়েছেন এক দাদা ও এক ভাই। বয়স প্রায় পঞ্চাশ ছুঁলেও বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। গড়িয়ার বড়াল লেকপল্লির বাসিন্দা রামু। পেশায় ভ্যান-রিকশার হেল্পার ছিলেন। কামারহাটির বাজারে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন তিনি। ওই জীবন ছেড়ে কেমন করে কালিসেন মোড়ে এসে পড়েছিলেন, তা অবশ্য মনে নেই তাঁর।
শুরুর দিকে স্থানীয়দের নজরে পড়েননি রামু। পথেঘাটে ঘুরে বেড়াতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টার বসে থাকতেন বাসস্টপে। কারও দোকানের চালার নীচে রাত কাটাতেন। তা দেখে এলাকাবাসীর আগ্রহ বাড়তে শুরু করে। এলাকার কয়েক জনের সঙ্গে টুকটাক কথাবার্তা থেকে কী ভাবে ওই গঞ্জের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে পড়েছিলেন, তা আজ বিস্ময়ের মতো ঠেকে তাঁর কাছে। ধীরে ধীরে তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখের গল্প করতে শুরু করেন মৃদুভাষী রামু। কালিসেন মোড়ের বাসিন্দা অসিত পাল বলেন, ‘‘আমাদের মাঝে থাকতে থাকতে রামু আমাদেরই এক জন হয়ে উঠেছে। ওঁর ব্যবহার, আচরণ দেখে ওঁকে ভাল না বেসে থাকা যায় না।’’ স্থানীয় শান্তনু রায়ের কথায়, ‘‘এক সময়ে ওঁর কিছুই মনে পড়ত না। আমাদের সঙ্গে কথাও বলতে চাইত না।’’
পূর্বস্মৃতি ফিরে পেয়েছেন। এ বার বাড়িও ফিরবেন, এই ভেবে গলা ভারী হয়ে এসেছে রামুর। তিনি বলেন, ‘‘কালিসেনের মানুষ আমাকে কাছে না টেনে নিলে হয়তো কোনও দিনই নিজের বাড়িতে ফিরতে পারতাম না। আজ বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠছে। আমি বাড়ি ফিরতে চাই।’’
স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে রামুকে তাঁর নিজের বাড়িতে ফিরিয়ে দিতে উদ্যোগী হয়েছে ওন্দা থানার পুলিশ। যোগাযোগ করা হয়েছে রামুর পরিবারের সঙ্গে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, পরিবারের লোকজন এলেই রামুকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।
অসিত, শান্তনুরা বলেন, রামু নিজের বাড়ি ফিরতে পারবে, এটা অবশ্যই সুসংবাদ। তবে যেহেতু ও আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে, স্বাভাবিক ভাবেই একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাই, ও আগের জীবন ফিরে পাক। নিজের পরিবারের সঙ্গেই বাকি জীবনটা কাটাক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy