দ্বারকা নদে দূষিত জল যাতে না পড়ে সে জন্য তারাপীঠ শ্মশানে জলাধার তৈরির জন্য গর্ত করেছিল জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। বৃহস্পতিবার ‘ভাবাবেগে আঘাত’ লাগার অভিযোগ তুলে সেই গর্তে মাটি ভরাট করল বিজেপি। এ দিন ওই ঘটনার জেরে কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়। তবে ফের তা কবে চালু হবে তা স্পষ্ট নয়। রামপুরহাটের মহকুমাশাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, ‘‘গর্ত বন্ধ করে দেওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিল বলে শুনেছি। এখন পুলিশ বিষয়টি দেখছে।’’
এ দিন দলীয় কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তারাপীঠ শ্মশানে যান বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা। তিনি নিজেও কোদাল দিয়ে ওই গর্তে মাটি ভরাট করেন। ধ্রুব ও বিজেপির জেলা সহ সভাপতি নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘যেখানে কাজ করা হচ্ছে সেখানে বৈষ্ণবদের সমাধিস্থল রয়েছে।’’ তা খুঁড়ে ভাবাবেগে আঘাতের অভিযোগ তোলেন তাঁরা।
বিজেপির দাবি, এর আগে শ্মশানের বড় বড় গাছ কেটে বা অতিথি নিবাস করে ঐতিহ্য নষ্ট করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, উন্নয়নমূলক কাজে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু যে জায়গায় তা করা হচ্ছে সেই জায়গায় তাঁরা ওই কাজ করতে দেবেন না বলে এ দিন দাবি করেন বিজেপি নেতৃত্ব। ধ্রব বলেন, ‘‘প্রয়োজনে আমরা কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হব।’’
রামপুরহাটের মহকুমাশাসক জানান, দ্বারকা নদের জল যাতে দূষিত না হয় সে জন্য জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশেই ওই কাজ হচ্ছিল। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর তারাপীঠে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পের কাজ করছিল। তিনি জানান, সেই কাজের মধ্যেই তারাপীঠ শ্মশানে জল ধরে রেখে পরিস্রুত করার জন্য জলাধার নির্মাণে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর গর্ত করেছিল।
এ দিন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা শ্মশানে হাজির হয়ে ওই গর্তে মাটি ফেলা শুরু করেন। পুলিশ যায়। সূত্রের দাবি, পুলিশ বিজেপি নেতাদের বিষয়টি নিয়ে বিডিওর (রামপুরহাট ২) সঙ্গে আলোচনা করার কথা জানিয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, তাঁরা বিডিওর সঙ্গে দেখা করে একই দাবি জানাবেন।
এই ঘটনায় বিজেপির সমালোচনা করেছে শাসক দল তৃণমূল। দলের জেলা চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যতটুকু জানি বৈষ্ণব সমাধিস্থল এতটুকুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এখানে তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ কাজ করছে না। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কাজ করছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি ভাবাবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ভাবে অন্য বার্তা দিতে চাইছে। বিজেপি যে মানুষের স্বার্থে কাজ করে না সেটা বোঝা যাচ্ছে।’’
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জেলা নির্বাহী বাস্তুকার দেশবন্ধু হাজরা জানান, তারাপীঠ রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের নির্দেশেই তাঁরা কাজ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘কাজ বন্ধ বা স্থগিতের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না। সমস্যা কী হচ্ছে আমরা এজেন্সির কাছে জানতে চাইব।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)